কলকাতা, 28 মার্চ : সংগঠিতভাবে অর্থ সংগ্রহ করে, মুখ্যমন্ত্রীর কোরোনা মোকাবিলা আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলে দিতে চলেছে রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় । গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে একথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আধিকারিক, কর্মচারীদের কাছে আবেদন করেছেন । নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থ বা একদিনের বেতন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের দানের জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি । অন্যদিকে , রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের তরফ থেকেও সব শিক্ষকদের একইভাবে একদিনের বেতন বা তাঁদের ইচ্ছেমতো অর্থ, ত্রাণ তহবিলের জন্য দিতে বলা হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকেও অর্থ সংগ্রহের একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিকদের কাছ থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে তা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা করা হবে বলে জানানো হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকরাও এগিয়ে এসেছেন এই কাজে । সংগঠনগতভাবে হোক বা নিজের মতো, সব স্তরের শিক্ষকরাই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করার উদ্যোগ নিয়েছেন ।
রাজ্যে ক্রমশ বাড়ছে কোরোনার সংক্রমণ । ইতিমধ্যেই রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা 15 হয়ে গেছে । কোরোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 200 কোটি টাকা দিয়ে আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলের সূচনা করেছেন । সেই ত্রাণ তহবিলে সাধারণ মানুষদেরও অর্থ সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি । এর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও মুখ্যমন্ত্রীর আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে মুক্তহস্তে দান করার আবেদন জানিয়েছেন । তাই শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনই হোক বা দায়িত্ববোধ থেকেই হোক, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষকরা সবাই এগিয়ে এসেছেন নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার জন্য ।
গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ও আধিকারিকদের আবেদন জানানো হয় যে কোরোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করার আবেদনে সাড়া দিতে । 14 এপ্রিলের মধ্যে সবাইকে একদিনের বেতন বা তাঁদের ইচ্ছেমতো অর্থ দান করতে বলা হয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তিতে । সংঘবদ্ধভাবে এই অর্থ সংগ্রহের পর তা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা করা হবে বলে জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ।
এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল বলেন, " আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় 600 শিক্ষক রয়েছেন । হাজার দু'য়েক কর্মচারী আছেন । সবাই যদি ন্যূনতম একদিনেরও বেতন দেন তাহলে প্রায় 30-40 লাখ টাকা উঠে যাবে ।" অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করার বিষয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের (RBUTA)এর সদস্য আশিস কুমার দাস বলেন, "এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ । আমরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সব শিক্ষকদের বলেছি ডোনেট করতে । যার যেমন ইচ্ছে হবে দেবেন । আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন এমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে এরকম উদ্যোগ নিয়েছি । তা সে অন্য রাজ্যের বন্যা হোক বা অন্য কিছু ।" পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (WBSU) উপাচার্য বাসব চৌধুরী বলেন, " আমাদের সবাই বেতন থেকেই অর্থ দান করছেন এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা দিচ্ছেন । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেটা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা করে দেওয়া হবে । আমাদের শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাবন্ধুরা সবাই এগিয়ে এসেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে । যে যেমন পারবেন সেই রকম দেবেন।"
শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনের পরেই এগিয়ে এসেছিলেন বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকরা । এমনকি চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষকরাও নিজেদের সাধ্যমতো মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করছেন । সংগঠিতভাবে একাধিক শিক্ষক সংগঠন অর্থ সংগ্রহ করে ত্রাণ তহবিলে দান করার উদ্যোগ নিয়েছেন । পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন, " কোরোনা মোকাবিলায় পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে 50 হাজার টাকা মুখ্যমন্ত্রীর রিলিফ ফান্ডে দেওয়া হবে ।" স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি বলেন, " আমরা সংঘবদ্ধভাবে জমা করছি । 23টা জেলার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবাই টাকা দেবেন । সেটা আমরা একসঙ্গে করে যত দ্রুত সম্ভব রিলিফ ফান্ডে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি । ন্যূনতম একদিনের বেতন দিতে বলেছি । তার উপর যে যা চাইবেন দেবেন । আমরা সবাইকে সংগঠনের তরফ থেকে আবেদন জানিয়েছি ।" মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, " গোটা রাজ্য জুড়েই সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকারা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন । আমরাও সংগঠনগত দিক থেকে শিক্ষকদের কাছে ন্যূনতম এক হাজার বা পারলে আরও বেশি অর্থ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি । অনেক শিক্ষক আগেই রিলিফ ফান্ডে নিজেদের মতো অর্থ জমা দিয়েছেন । বাকি শিক্ষকদের আমরা সমিতিগত দিক থেকে আবেদন জানিয়েছি । সংগঠিতভাবে সেই টাকা সংগ্রহ করে আমরা 6 এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তা জমা করব ।"