কলকাতা, 20 মে: ছয়দিনে আরও সাত COVID-19 আক্রান্তের খোঁজ মিলল চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতালে । প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপসর্গহীন । যার জেরে, আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কর্তৃপক্ষ । সাময়িক সময়ের জন্য হলেও গতকাল থেকে হাসপাতালের আউটডোর, কোল্ড অপারেশন বন্ধ করে দিতে হয়েছে । রোগী ভরতির ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে বিধি-নিষেধ ।
যে সব রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন অথচ তা কোল্ড কেস, অর্থাৎ, কিছুটা হলেও সময় নিয়ে অপারেশন করা যাবে, সেইসব রোগীর অপারেশনের পরিষেবাও গতকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে । যদিও, হাসপাতালের ইমার্জেন্সি পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে । তবে, রোগীদের ভরতি নেওয়ার ক্ষেত্রে জারি হয়েছে বিধি-নিষেধ । এই বিধি-নিষেধ অনুযায়ী, যে সব রোগীর ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি বেসিসে ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন, সেইসব রোগীকে ভরতি নেওয়া হচ্ছে । এর বাইরে অন্য রোগীদের রেফার করা হচ্ছে SSKM হাসপাতাল, NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । কিছু পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া এবং রোগীদের ভরতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ ব্যবস্থা সাময়িক সময় অর্থাৎ, চার-পাঁচ দিনের জন্য নেওয়া হয়েছে বলে চিত্তরঞ্জন সেবা সদন সূত্রে খবর ।
কেন এই ধরনের ব্যবস্থা নিতে হল? 9 মে এই হাসপাতালে দুই প্রসূতির শরীরে COVID-19 সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া গেছিল । তাঁদের ক্ষেত্রে COVID-19 সংক্রমণের কোনও উপসর্গ ছিল না । ওই দুইজন তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভরতি ছিলেন । যখন জানা যায় তাঁরা কনটেনমেন্ট জ়োন থেকে এসেছেন, তখন তাঁদের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার করা হয় । নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট কোরোনা পজ়িটিভ আসে । উপসর্গহীন অবস্থায় যেহেতু ওই দুই প্রসূতি তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভরতি ছিলেন, সেই কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ অন্য রোগীরাও তাঁদের সংস্পর্শে আসেন । এই পরিস্থিতিতে COVID-19-এর সংক্রমণ যাতে আরও ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য 9 মে থেকে হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় । পাশাপাশি, রোগীদের ভরতি নেওয়ার ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছিল । হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছুটি দেওয়া হচ্ছিল । তবে, মা ও শিশু মিলিয়ে এই হাসপাতালে ভরতি থাকা 22জনকে ওইদিন ছুটি দেওয়া হয়নি । কারণ, তাঁদের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখার পরে তাঁদেরকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ ।
এদিকে, শুধুমাত্র ওই দুই প্রসূতি নন । 9 মে পর্যন্ত তাঁরাসহ হাসপাতালের মোট পাঁচ প্রসূতির শরীরে COVID-19 সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া গেছিল । এপ্রিল মাসের শেষের দিকে প্রথম এই হাসপাতালে এক প্রসূতির শরীরে COVID-19 সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া যায় । এর পরে গত 9মে-এর আগে আরও দুই প্রসূতির শরীরে COVID-19 সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া যায় । এই পাঁচজন প্রসূতির মধ্যে দুইজনের ক্ষেত্রে COVID-19 সংক্রমণের সামান্য উপসর্গ ছিল । তবে, বাকি তিনজনের ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ ছিল না । সেই কারণেই হাসপাতালের অনেকেই তাঁদের সংস্পর্শে চলে এসেছিলেন । এরপর গত 11 মে হাসপাতালের আরও এক প্রসূতির শরীরে COVID-19 সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া যায় । কলকাতার বাসিন্দা এই প্রসূতির ক্ষেত্রেও COVID-19 সংক্রমণের কোনও উপসর্গ ছিল না । COVID-19-এ আক্রান্ত এইসব প্রসূতিদের সংস্পর্শে আসার জেরে চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে 30জনকে কোয়ারানটিনে রাখতে হয়েছিল । তাঁদের মধ্যে 15জন চিকিৎসক ছিলেন। সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে এই 30জনের মধ্যে কারও COVID-19 পজ়িটিভ ধরা পড়েনি ।
এরপরে হাসপাতালকে জীবাণুমুক্ত করে এখানকার সব পরিষেবা চালু করা হয়েছিল । তবে, এরপরে আবারও এই হাসপাতালে COVID-19-এ আক্রান্ত প্রসূতিদের খোঁজ পাওয়া গেছে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত 12 মে থেকে 17মে, এই ছয় দিনে হাসপাতালে আরও ছয়জন প্রসূতি এবং একজন নার্সের শরীরে COVID-19 সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া গেছে । সাতজনের ক্ষেত্রেই COVID-19 সংক্রমণের কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি । হাসপাতাল সূত্রে খবর, ছুটিতে ছিলেন আক্রান্ত নার্স । ডিউটিতে জয়েন করার পর তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে COVID-19-এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে ।
হাসপাতালের পরিষেবা চালু করার পর আবার এই সাত COVID-19 আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ার কারণে চিন্তায় পড়ে যান কর্তৃপক্ষ । উপসর্গহীন COVID-19 সংক্রমণের খোঁজ পাওয়ার জেরে চিন্তা আরও বাড়ে । সংক্রমণ আরও যাতে না ছড়িয়ে পড়ে, তার জন্য হাসপাতালের আউটডোর গতকাল থেকে ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । হাসপাতালে কোল্ড অপারেশন বন্ধ রাখা হয়েছে । রোগী ভরতির ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে বিধি-নিষেধ । তবে, ইমার্জেন্সি পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, গোটা হাসপাতালকে জীবাণুমুক্ত করার পর ফের এই হাসপাতালের সব পরিষেবা চালু করা হবে বলে । কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, চার-পাঁচ দিন পরে আবার হাসপাতালের সব পরিষেবা চালু করে দেওয়া সম্ভব হবে ।