কলকাতা, 8 সেপ্টেম্বর: "তাহলে সেটাই থাকবে, হৃদয়ে নাম লেখা রয়ে যাবে ।" নাকতলার পুজো অরূপ বিশ্বাসের হাতে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে অভিমানের সুর শোনা গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গলায় ৷ অনেকেই বলছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলা উদয়ন সংঘ এ বার অরূপ বিশ্বাসের হাতে চলে যাওয়া ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেননি এক সময়ে এই পুজোর হর্তা-কর্তা-বিধাতা হিসেবে পরিচিত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় । এ দিন আদালতে তা স্পষ্ট হল পার্থর কথায় ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সময়ের বহু শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করছেন, উদয়ন সংঘের পুজোর দায়িত্ব যতই অরূপ বিশ্বাসের হাতে চলে যাক, এককালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওই পুজোতে যে জৌলুস বা দাপট ছিল তা অটুট থাকবে ৷
এ দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আলিপুর আদালতে তোলা হলে দীর্ঘ বাদানুবাদের পরেও তিনি জামিন পাননি । এ দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরফ থেকে বলা হয়, বাগ কমিটির রিপোর্টে দুজনকে অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছিল । আর বলা হয়েছিল, এই দুজন ও অন্যান্যর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে । বাগ কমিটির রিপোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা নেই । একটা কমিটি যদি তদন্ত নিয়ে কোনও গাইডলাইন দেয়, এবং তা যদি হাইকোর্ট শিলমোহর দেয়, তাহলে তো কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে ওই গাইডলাইন মানতেই হবে । আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম কমিটির রিপোর্টে ছিল না । রিট পিটিশনেও ছিল না ।
এই কথা বলে পার্থর আইনজীবী বলেন, "আমরা আবেদনে বলেছি, সুদূর ভবিষ্যতে বিচার প্রক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই । 15/16 জন এমন রয়েছেন তাঁদের নাম চার্জশিটে আছে, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি । দীর্ঘ সময় প্রায় একবছর কাস্টডিতে আছেন তিনি । শোন অ্যারেস্টের সময় চার দিন বাদেও তাঁকে জেরা করা হয়নি ।"
আরও পড়ুন: জামিনের আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে পার্থ, ‘দুর্নীতির মূলমাথা’র বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশে সময় চাইল ইডি
এ দিন জামিনের আবেদন করার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমি বয়স্ক, অসুস্থ । বলা হয়েছে আদালতে । আমি জামিন পেলে তদন্ত থমকে যাবে এমন কোনও ব্যাপার নেই । অন্যান্যদের সঙ্গে আমার পার্থক্য কোথায় ? আমার পূর্বপুরুষ থেকে এখানে থাকে, আমার চলে যাওয়ার কিছু নেই । কল্যাণময় গাঙ্গুলির এক্সটেনশনের অভিযোগ আনা হয়েছিল । সেই সময় তো শুধু ওনার হয়নি আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে । একটা নাম নিয়ে ম্যালাইন করা যায় । জামিনের বিরোধিতা করা যায় না ।"
শুক্রবার আলিপুর আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় একপ্রকার সরকারের দিকেই বল ঠেলে দিয়ে এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারককে বললেন, "এখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কল্যাণময় বলে নয়, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । শিক্ষকদের অবসরের বয়স 60 থেকে 62 ও পরে 65 করা হয় । অধ্যাপকদের করা হয় 60 থেকে 62 ও পরে 65 । উপাচার্যদের অবসরের বয়স 65 থেকে 70 করা হয়েছে । এটা তো বয়স এক্সটেনশন হওয়ার কারণে হয়েছে ।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই কথা শুনে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, শিক্ষা দফতরের সমস্ত বিষয় ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নখদর্পণে । তাহলে কীভাবে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি ? এরপরেই বিচারক সিবিআইকে বলেন, "চার্জশিটে তো একাধিক নাম আছে । তার মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন । কয়েকজনকে ধরেছেন । বাকিরা তো আকাশে উড়ছে । একজনের নাম, তাঁর নাম তো এফআইআরে আছে । ফেরার নন । কিন্তু উনি তো বাইরে আছেন ।"