কলকাতা, 16 নভেম্বর : কিয়দংশে প্রাণঘাতী এই রোগের নাম স্ক্রাব টাইফাস । ছোটো একটি পোকার কামড়ের জেরে এই রোগ হতে পারে । গত একবছর ধরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে । শহরাঞ্চলের মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে । কেন হতে পারে এই রোগ, কী ভাবে বুঝবেন, চিকিৎসা-ই-বা কী রয়েছে? এ সব নিয়ে ETV ভারত-কে বললেন আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ রায় ।
ETV ভারত : স্ক্রাব টাইফাস আসলে কী?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : স্ক্রাব টাইফাস হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি রোগ । মাইট অর্থাৎ, ছোটো একটি পোকার মাধ্যমে এই রোগটি মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয় । এটা রিকেটসিয়া গ্রুপের একটি ব্যাকটেরিয়া ।
ETV ভারত : এই রোগে আক্রান্তরা কোন ধরনের সমস্যায় পড়েন?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : ওই পোকাটি যখন কামড়ায়, সাধারণত তার ছয় থেকে ২০ দিনের মধ্যে ছোটো একটি ফুসকুড়ির মতো হয় । তারপর সেটা ফেটে যায় । ফেটে যাওয়ার পরে কালো রঙের একটি এসচার তৈরি হয় । এরপর জ্বর আসে । গা-হাত-পা ব্যথা করবে ৷ শরীরের কিছু কিছু গ্ল্যান্ড ফুলতে থাকবে । প্রথম দিকে এসব দেখা দেবে । পরবর্তী সময়ে, যদি চিকিৎসা শুরু না হয়, তাহলে রোগীর লিভার, হার্ট, ব্রেন অ্যাফেক্ট করে । জন্ডিস হয় এবং লিভার বড় হয়ে যায় । হার্ট ফেলিওর হতে পারে । ব্রেনকেও বিভিন্নভাবে ক্ষতি করতে পারে ।
ETV ভারত : কী ভাবে রোগ নির্ণয় হয়?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : উপসর্গগুলি দেখে আমরা ধারণা করতে পারি । তবে রোগ নির্ণয় করতে হলে, অন্ততপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়দিন পরে IgM অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়, সেটা যদি পজ়িটিভ হয়, তখন বলতে পারি স্ক্রাব টাইফাস হয়েছে ।
ETV ভারত : স্ক্রাব টাইফাসের চিকিৎসা কী রয়েছে?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : এর চিকিৎসা খুবই সহজ । অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে । এই অ্যান্টিবায়োটিকেই ঠিক হয়ে যায়, যদি প্রথমদিকে ধরা পড়ে । কিন্তু, যদি লিভার, কিডনি, হার্ট এবং ব্রেন ধরে ফেলে তখন অসুবিধা হয় । তখন মৃত্যুর হার খুব বেড়ে যায় ।
ETV ভারত: স্ক্রাব টাইফাস তাহলে প্রাণঘাতী?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : নিঃসন্দেহে । কিয়দংশে আমরা বলতে পারি স্ক্রাব টাইফাসে প্রাণ সংশয়ের যথেষ্ট কারণ রয়েছে ।
ETV ভারত : সাধারণ মানুষ কী ভাবে বুঝবেন?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : সাধারণ মানুষ যদি জঙ্গলে যান অথবা, জঙ্গলের কাছাকাছি থাকেন ৷ যদি কোনও পোকা কামড়ায় এবং ফোস্কার মতো হয়, তাহলে তখনই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে । সাধারণ জ্বর, তার সঙ্গে যদি গ্ল্যান্ড ফোলা থাকে, এমন উপসর্গ নিয়ে কোনও রোগী যদি আমাদের কাছে আসেন, তাহলে আমরা স্ক্রাব টাইফাস আছে কি না, তা জানার জন্য পরীক্ষার কথা বলি ।
ETV ভারত : প্রতিরোধের কোনও উপায় রয়েছে?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : প্রতিরোধ বলতে, যদি কেউ জঙ্গলে যান, তা হলে ফুল হাতা জামা পরতে হবে, গ্লাভস পরতে হবে । যেখানে এই রোগ দেখা যাচ্ছে, সেই স্থানে DDT বা স্প্রে করলে যে মাইটগুলির মাধ্যমে এই রোগ সংক্রামিত হয়, সেগুলি মরে যায় । পোকামাকড় কামড়ালেই সতর্ক থাকতে হবে ।
ETV ভারত : শুধুই জঙ্গলে, না কি বাড়ি এবং বাড়ির আশপাশেও স্ক্রাব টাইফাসের আশঙ্কা রয়েছে?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : সাধারণত, যেখানে শুধুমাত্র পাকাবাড়ি, সেখানে সম্ভাবনা কম । যেখানে পাকাবাড়ি, কাঁচাবাড়ি অল্প কিছু জঙ্গল, আগাছা রয়েছে, সেখানে সাধারণত স্ক্রাব টাইফাস হয় ।
ETV ভারত : স্ক্রাব টাইফাসের পরিস্থিতি এখন কী রকম?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : অন্তত চার-পাঁচ বছর আগে অতটা স্ক্রাব টাইফাস দেখা যেত না । ইদানিংকালে, গত এক বছরে আমরা এই রোগে অনেক আক্রান্তের খোঁজ পাচ্ছি । এই জন্য আমরা সতর্ক । এই ধরনের কোনও সন্দেহ দেখা দিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই রোগ নির্ণয়ের জন্য যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলি গ্রহণ করছি । রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরু হচ্ছে । রোগী সুস্থও হচ্ছেন ।
ETV ভারত : কেন বেশি দেখা যাচ্ছে?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : স্ক্রাব টাইফাস হয়ত বহুদিন ধরেই ছিল । হতে পারে, সচেতনতা বেড়েছে বলে বেশি দেখা যাচ্ছে । অন্য একটি কারণেও হতে পারে । এটা হল, জঙ্গল এখন সাফ হয়ে যাচ্ছে । সেখান থেকে পোকামাকড়ের উৎপাত বাড়তে পারে । এই পোকাগুলি হয়ত ইনসেক্টিসাইডে রেজিস্টেন্ট হয়ে গেছে, এমন কারণেও স্ক্রাব টাইফাস বেশি দেখা দিতে পারে ।
ETV ভারত : শুধুই গ্রামাঞ্চল, না কি শহরাঞ্চলের মানুষও স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হতে পারেন?
চিকিৎসক অনিরুদ্ধ রায় : শহরাঞ্চলে স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম, গ্রামাঞ্চলে একটু বেশি । তবে শহরাঞ্চলেও এখন স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে । গ্রাম ঘেঁষা শহরাঞ্চলগুলিতে, যেখানে বেশি জঙ্গল, আগাছা রয়েছে, সেখানে স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ হতেই পারে ।
১৯৩০-এ জাপানে প্রথম স্ক্রাব টাইফাস চিহ্নিত হয়েছিল বলে জানা যায় । ফলে বহুদিন ধরেই স্ক্রাব টাইফাস রয়েছে । ভারত, চিন, জাপান, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, এই দেশগুলোর মধ্যে আগে সীমাবদ্ধ ছিল । এখন অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ছে ।