ETV Bharat / state

নাইসার প্রাক্তন কর্মীর হার্ডডিস্কের তথ্যে কি কারও চাকরি কাড়া যায়, হাইকোর্টের সওয়ালে উঠল প্রশ্ন - নিয়োগ দুর্নীতি মামলা

Recruitment Scam: নাইসার প্রাক্তন কর্মীর কাছ থেকে পাওয়া হার্ডডিস্কের তথ্যের ভিত্তিতে কি কারও চাকরি কাড়া যায় ? বুধবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন এই প্রশ্ন উঠল ৷ এই প্রশ্ন তুলেছেন চাকরি হারানোদের আইনজাীবীরা ৷

Calcutta High Court
Calcutta High Court
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 18, 2024, 7:25 AM IST

কলকাতা, 17 জানুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ । কিন্তু সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে একটা হার্ডডিস্ক । সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি কয়েক হাজার প্রার্থীর চাকরি কেড়ে নিয়েছে । কিন্তু সিবিআইয়ের দেওয়া এই তথ্যের সত্যতা কী ? এই তথ্য তো ভুয়ো হতে পারে ! বুধবার নিয়োগ দুর্নীতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে নতুন বেঞ্চ গঠিত হয়েছে, বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রাশিদীকে নিয়ে গঠিত সেই বেঞ্চে এই সমস্ত প্রশ্ন বারবার উঠে এল ৷ এই প্রশ্ন তুললেন চাকরি হারানোদের তরফে আদালতে সওয়ালকারী একাধিক আইনজীবী ।

এই মামলার শুনানিতে প্রবীণ আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র মঙ্গলবার তাঁর বক্তব্য শেষ করতে পারেননি । এ দিন তিনি ফের বলেন, ‘‘পঙ্কজ বনসাল নামে যে ব্যক্তির থেকে হার্ডডিস্ক উদ্ধার হয়েছে, তিনি ইনফোসিসের কর্মচারী । কোন কম্পিউটার থেকে এই হার্ডডিস্ক বের করেছিলেন সেটা তিনি জানাননি । ফলে এগুলো আসল কি না, তা কিভাবে বিচার হবে ? সর্বোপরী এই রেকর্ড তাঁর বাড়িতে গেল কী করে ? তিনি একজন প্রাক্তন কর্মী ।’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এটা নাইসা বা ইনফোসিসের সম্পত্তি হতে পারে৷ কিন্তু একজন প্রাক্তন কর্মীর থেকে কিভাবে পাওয়া যাবে ? এটা তো বানানো হতে পারে ! সিবিআইয়ের এই বিষয়ে পুঙখানুপুঙ্খ তদন্ত করা প্রয়োজন । কিভাবে, কোথা থেকে সিবিআই তথ্য পেল, তার ব্যাখ্যা নেই । তার সত্যতা কে খতিয়ে দেখবে? সিবিআই নিরপেক্ষ সংস্থা নয় মোটেই, এটা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।’’

বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানতে চান, "যদি কমিশন সুপারিশ করার পরে মনে করে ভুল করে হয়েছে তাহলে কী হবে ?" অনিন্দ্য মিত্র উত্তর দেন, "সাংবিধানিক নিয়ম মেনে যা করার করতে পারে । কিন্তু প্যানেল যতদিন বৈধ, ততদিন তা আবার ডাকতে করতে পারে না কমিশন ।"

গ্রুপ-ডি তে চাকরি হারানোদের তরফে এক আইনজীবী বলেন, "গ্রুপ-ডি দের বেছে নিয়ে টার্গেট করা সহজ । তাঁদের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করা হয়েছে । অনেকেই সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নিতে পারেন । এরা কম বেতন পান । একটা সিস্টেমের স্বীকার হতে হয়েছে এঁদের । কিছু ডিজিটাল ইমেজ নিয়ে তাঁদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে । এগুলো আসল না নকল, কী করে বোঝা যাবে ?"

গ্রুপ-সি তে চাকরি হারানোদের পক্ষে আইনজীবী মুকুল লাহিড়ী বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই । দ্রুত যাতে বিচার পাওয়া যায়, আদালত সেদিকে গুরুত্ব দিক ।’’ বিচারপতি বসাক অবশ্য বলেন, "প্রচুর বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন ৷ তাঁদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, সেই দিকটা আপনি ভাবুন । আপনার মক্কেলরা তো চাকরি করতেন।এঁরা চাকরি না পেয়ে লড়াই করছেন ।"

মুকুল লাহিড়ী বিচারপতি দেবাংশু বসাকের উদ্দেশ্যে আবেদন জানান, "ডিভিশন বেঞ্চ যদি সিবিআইয়ের এই নথিকে প্রামাণ্য ধরে সমর্থনযোগ্য কোনও পর্যবেক্ষণ দেয়, সেই ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে তার বিচার হবে ।" বিচারপতি বসাক একটু কঠিন মনোভাব নিয়ে বলেন, "তাহলে আপনি এর বিরোধিতা করে যুক্তি দিন ।"

তাতে ওই আইনজীবী বলেন, "আমাদের জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে । আমাদের বক্তব্য শোনার প্রয়োজন মনে করেনি সিঙ্গল বেঞ্চ । শুধুমাত্র কিছু ডিজিটাল নথির ভিত্তিতে যা পাওয়া গিয়েছে, নাইসা - যারা ওএমআর শিট বানাতো, তাদের একজন প্রাক্তন কর্মীর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্ততে চাকরি বাতিল করা হয়েছে ।"

নবম দশমের 32 জন শিক্ষক, যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাদের আইনজীবী জয়দীপ কর প্রায় একই কথা বলেন, "ওএমআর শিট (মিরর ইমেজ) না আসা পর্যন্ত কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়েনি । আসার পরেই চাকরি কাড়া হয়েছে । কিন্তু এগুলোকে প্রামাণ্য নথি হিসাবে কি ধরা যাবে ? সিবিআই যে নথি দিয়েছে, তা সেকেণ্ডারি এডিডেন্স৷ যার উপর ভরসা করে কি কারও চাকরি কেড়ে নেওয়া যায় ?"

আগামিকাল বৃহস্পতিবার ফের শুনানি হবে এই মামলার ।

আরও পড়ুন:

  1. নিয়োগের 5-6 বছর পর সেই প্যানেল কীভাবে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বাতিল করে ? উঠল প্রশ্ন
  2. নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিলের বিষয়ে এসএসসি-র আচরণে বিরক্ত হাইকোর্ট
  3. প্রাথমিকের টেট মামলায় ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তাকে গ্রেফতার করল সিবিআই

কলকাতা, 17 জানুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ । কিন্তু সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে একটা হার্ডডিস্ক । সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি কয়েক হাজার প্রার্থীর চাকরি কেড়ে নিয়েছে । কিন্তু সিবিআইয়ের দেওয়া এই তথ্যের সত্যতা কী ? এই তথ্য তো ভুয়ো হতে পারে ! বুধবার নিয়োগ দুর্নীতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে নতুন বেঞ্চ গঠিত হয়েছে, বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রাশিদীকে নিয়ে গঠিত সেই বেঞ্চে এই সমস্ত প্রশ্ন বারবার উঠে এল ৷ এই প্রশ্ন তুললেন চাকরি হারানোদের তরফে আদালতে সওয়ালকারী একাধিক আইনজীবী ।

এই মামলার শুনানিতে প্রবীণ আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র মঙ্গলবার তাঁর বক্তব্য শেষ করতে পারেননি । এ দিন তিনি ফের বলেন, ‘‘পঙ্কজ বনসাল নামে যে ব্যক্তির থেকে হার্ডডিস্ক উদ্ধার হয়েছে, তিনি ইনফোসিসের কর্মচারী । কোন কম্পিউটার থেকে এই হার্ডডিস্ক বের করেছিলেন সেটা তিনি জানাননি । ফলে এগুলো আসল কি না, তা কিভাবে বিচার হবে ? সর্বোপরী এই রেকর্ড তাঁর বাড়িতে গেল কী করে ? তিনি একজন প্রাক্তন কর্মী ।’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এটা নাইসা বা ইনফোসিসের সম্পত্তি হতে পারে৷ কিন্তু একজন প্রাক্তন কর্মীর থেকে কিভাবে পাওয়া যাবে ? এটা তো বানানো হতে পারে ! সিবিআইয়ের এই বিষয়ে পুঙখানুপুঙ্খ তদন্ত করা প্রয়োজন । কিভাবে, কোথা থেকে সিবিআই তথ্য পেল, তার ব্যাখ্যা নেই । তার সত্যতা কে খতিয়ে দেখবে? সিবিআই নিরপেক্ষ সংস্থা নয় মোটেই, এটা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।’’

বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানতে চান, "যদি কমিশন সুপারিশ করার পরে মনে করে ভুল করে হয়েছে তাহলে কী হবে ?" অনিন্দ্য মিত্র উত্তর দেন, "সাংবিধানিক নিয়ম মেনে যা করার করতে পারে । কিন্তু প্যানেল যতদিন বৈধ, ততদিন তা আবার ডাকতে করতে পারে না কমিশন ।"

গ্রুপ-ডি তে চাকরি হারানোদের তরফে এক আইনজীবী বলেন, "গ্রুপ-ডি দের বেছে নিয়ে টার্গেট করা সহজ । তাঁদের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করা হয়েছে । অনেকেই সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নিতে পারেন । এরা কম বেতন পান । একটা সিস্টেমের স্বীকার হতে হয়েছে এঁদের । কিছু ডিজিটাল ইমেজ নিয়ে তাঁদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে । এগুলো আসল না নকল, কী করে বোঝা যাবে ?"

গ্রুপ-সি তে চাকরি হারানোদের পক্ষে আইনজীবী মুকুল লাহিড়ী বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই । দ্রুত যাতে বিচার পাওয়া যায়, আদালত সেদিকে গুরুত্ব দিক ।’’ বিচারপতি বসাক অবশ্য বলেন, "প্রচুর বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন ৷ তাঁদের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, সেই দিকটা আপনি ভাবুন । আপনার মক্কেলরা তো চাকরি করতেন।এঁরা চাকরি না পেয়ে লড়াই করছেন ।"

মুকুল লাহিড়ী বিচারপতি দেবাংশু বসাকের উদ্দেশ্যে আবেদন জানান, "ডিভিশন বেঞ্চ যদি সিবিআইয়ের এই নথিকে প্রামাণ্য ধরে সমর্থনযোগ্য কোনও পর্যবেক্ষণ দেয়, সেই ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে তার বিচার হবে ।" বিচারপতি বসাক একটু কঠিন মনোভাব নিয়ে বলেন, "তাহলে আপনি এর বিরোধিতা করে যুক্তি দিন ।"

তাতে ওই আইনজীবী বলেন, "আমাদের জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে । আমাদের বক্তব্য শোনার প্রয়োজন মনে করেনি সিঙ্গল বেঞ্চ । শুধুমাত্র কিছু ডিজিটাল নথির ভিত্তিতে যা পাওয়া গিয়েছে, নাইসা - যারা ওএমআর শিট বানাতো, তাদের একজন প্রাক্তন কর্মীর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্ততে চাকরি বাতিল করা হয়েছে ।"

নবম দশমের 32 জন শিক্ষক, যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাদের আইনজীবী জয়দীপ কর প্রায় একই কথা বলেন, "ওএমআর শিট (মিরর ইমেজ) না আসা পর্যন্ত কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়েনি । আসার পরেই চাকরি কাড়া হয়েছে । কিন্তু এগুলোকে প্রামাণ্য নথি হিসাবে কি ধরা যাবে ? সিবিআই যে নথি দিয়েছে, তা সেকেণ্ডারি এডিডেন্স৷ যার উপর ভরসা করে কি কারও চাকরি কেড়ে নেওয়া যায় ?"

আগামিকাল বৃহস্পতিবার ফের শুনানি হবে এই মামলার ।

আরও পড়ুন:

  1. নিয়োগের 5-6 বছর পর সেই প্যানেল কীভাবে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বাতিল করে ? উঠল প্রশ্ন
  2. নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিলের বিষয়ে এসএসসি-র আচরণে বিরক্ত হাইকোর্ট
  3. প্রাথমিকের টেট মামলায় ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তাকে গ্রেফতার করল সিবিআই
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.