কলকাতা, 26 অক্টোবর: এই মুহূর্তে হাজতে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের তিন হেভিওয়েট ৷ এঁরা হলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee), শাসকদলের বিধায়ক তথা রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya) এবং তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ৷ এঁদের মধ্যে প্রথম দু'জনের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে (Teacher Recruitment Scam) সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ৷ আর তৃতীয় জনের নাম জড়িয়েছে গরুপাচার কাণ্ডে (Cattle Smuggling Scam) ৷ তবে, এই তিনজনের মধ্যে পার্থর গ্রেফতার হওয়াটাই তৃণমূলের কাছে সবথেকে বড় বিড়ম্বনার ৷ এমনটাই মনে করছেন দলের প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy) ৷
সৌগত মনে করেন, যেভাবে পার্থর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) ফ্ল্য়াট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ ও সোনার গয়না উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে জনমানসে তৃণমূল কংগ্রেসের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে ৷ এই প্রসঙ্গে সৌগত বলেন, "যেভাবে পার্থ ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে টাকা আর সোনা মিলল, তা দলের কাছে বিরাট বিড়াম্বনার বিষয় ৷ কিন্তু, মানিক ভট্টাচার্য কিংবা অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে বিষয়টা সেরকম নয় ৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে, তারা ওঁদের বাড়ি থেকে নথি উদ্ধার করেছে ৷ কিন্তু, কোনও জায়গা থেকেই নগদ টাকা পাওয়া যায়নি ৷"
আরও পড়ুন: গ্রেফতারি থেকে বাঁচতে প্রভাব খাটাতেন পার্থ, আদালতে বলল সিবিআই
রাজ্য মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানিয়েছেন, গত জুলাই মাসে ইডি-এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় যেভাবে তাঁর অ্য়ারেস্ট মেমোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় নাম ও তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়েছেন, তাও ভালোভাবে নেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ সৌগত রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, "পার্থ নিশ্চয় তাঁর সমস্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতেন না ৷ আমাদের অনুমান, গ্রেফতার হওয়ার ঠিক পরই তিনি যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ফোন করেছিলেন, তাতে আসলে গোটা দলকেই বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন পার্থ ৷ তিনি নিজে যে বিপদে ছিলেন, সেই বিপদেই অন্যদেরও জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন ৷"
তবে, তৃণমূল নেতার এই যুক্তির সঙ্গে একমত হতে পারছেন না বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের নেতারা ৷ তাঁদের পালটা অভিযোগ, সৌগত রায়ের মতো নেতারা 'ভালো চোর', 'খারাপ চোর'-এর তত্ত্ব খাড়া করে পুরো ঘটনাটাকেই গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ৷ এই প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "পার্থ ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে যেমন নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তেমনই মানিক ভট্টাচার্য এবং অনুব্রত মণ্ডলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও কোটি কোটি টাকার হদিশ মিলেছে ৷ ওঁরা দু'জনই দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছেন ৷ এবং তিনজনই সমান দোষী ৷"
আর রাজ্য বিজেপি-এর মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য হল, "যদি টাকা উদ্ধারের ভিডিয়ো এবং ছবি দেখেই এত ফারাক করতে হয়, তাহলে তো সৌগত রায় নিজেও পার পাবেন না ৷ কারণ, ওঁকেও তো ভিডিয়ো ফুটেজে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে ৷ নারদা স্টিং অপারেশনের সময় আমরা সেই ছবি দেখেছি ৷ এই সম্পর্কে সৌগত রায় কী বলবেন ?"