বিধাননগর, 11 জুন : প্রথমে লুচি-আলুরদম । তারপর সল্টলেকের একটি অনুষ্ঠানে মুকুল রায়ের সঙ্গে 'সৌজন্য' সাক্ষাৎ । আর এবার বিধাননগর পৌরনিগমের বৈঠকে গরহাজির থাকলেন 'অসুস্থ' মেয়র সব্যসাচী দত্ত । গরহাজির ছিলেন আরও 23 জন কাউন্সিলরও । আর এরপরই খোদ তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি সব্যসাচীর জার্সি বদলানো আসন্ন ? এনিয়ে মেয়রের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা তথা ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়ের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, "বিষয়টি এরকম যে বিয়ে করেছি, বউকেও ছাড়ছি না । আবার যাকে বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি তাকেও বিয়ে করছি না । বা এরকমভাবে বলা যায়, ভেন্টিলেশনে রয়েছে । কবে মৃত্যু হবে, শুধু খুলে দেওয়ার অপেক্ষায় । শুধু খুলে দিলেই হয় । "
লোকসভা নির্বাচনের আগেই লুচি-আলুর দম থেকে জল্পনার শুরু । সব্যসাচীর বাড়িতে হঠাৎ খেতে চলে গেছিলেন মুকুল । সৌজন্যতার খাতিরে ফিরিয়ে দেননি রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক । বাড়ি থেকে বেরিয়ে মুকুল বলেছিলেন, "লুচি-আলুরদম খেতে বারবার আসব ।" প্রথমে সব্যসাচী বলেছিলেন, "কেউ খেতে আসলে কী করব ? তাঁকে ফিরিয়ে দেব ? " তা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়, তাহলে কি ফের আরও এক তৃণমূল নেতা গেরুয়া শিবিরে যেতে চলেছেন ? বিতর্কের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করে তৃণমূল । বৈঠকের পর তৃণমূল শীর্ষনেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে সব্যসাচী বলেছিলেন, "ভুল হয়েছে ।" সাময়িকভাবে ইতি পড়লে জল্পনার আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলছিল । এরপর লোকসভা ভোটের প্রচারেও সব্যসাচীকে খুব একটা দেখা যায়নি । জল্পনা চলছিল, এই বুঝি BJP যাচ্ছেন ।
অন্যদিকে, ভোটের পর অমিতাভ মজুমদার একটি গণতান্ত্রিক মঞ্চ গড়েন । নাম দেন নবজাগরণ মঞ্চ । কুণাল ঘোষ সেই মঞ্চের উদ্বোধন করেন । সব্যসাচী এই মঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন । তিনি বলেন, "পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করব ।" এরপর ফের গুঞ্জন শুরু হয় । তাহলে কি সত্যিই BJP-তে যাচ্ছেন ? ইতিমধ্যে 3 জুন মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে নবান্নে যান সব্যসাচী । রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল, তাহলে জোড়াফুল শিবিরেই থাকছেন রাজারহাট-নিউটাউনের মেয়র !
যদিও সেই ধারণা পালটাতে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি । সেদিন সন্ধ্যাতেই একই ফ্রেমে ধরা পড়েন সব্যসাচী ও মুকুল রায় । সল্টলেকে একটি অনুষ্ঠানে পাশাপাশি দেখা যায় দু'জনকে । তারপরই সব্যসাচীর BJP যোগ নিয়ে ফের নতুন করে জল্পনা শুরু হয় । যদিও সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন সব্যসাচী ও মুকুল দু'জনেই । আর তাতে সেই জল্পনার তালিকায় নতুন সংযোজন গতকালের বৈঠকে অনুপস্থিতি । যা সব্যসাচীর BJP যোগের গুঞ্জনে আরও ঘি ঢালল ।
নির্বাচনের পরে গতকাল বিধাননগর পৌরনিগমের প্রথম বোর্ড মিটিং ছিল । কিন্তু, সভায় অনুপস্থিত ছিলেন মেয়র সহ 24 জন কাউন্সিলর । চিঠি মারফত 6 জন অনুপস্থিতির কারণ জানালেও বাকিরা অনুপস্থিতির কারণ জানা যায়নি । সব্যসাচী চিঠি দিয়ে জানান, তিনি অসুস্থ । পাশাপাশি, উপস্থিত ছিলেন না ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়ও । রাজনৈতিক মহলের অভিমত, তৃণমূলের অন্দরে রীতিমতো ব্যাকফুটে সব্যসাচী । তলে তলে মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার আলোচনা শুরু হয়েছে । প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও দফায় দফায় কাউন্সিলররা বৈঠক করেছেন । পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ সব্যসাচী সেই আঁচ পেয়েই বৈঠক এড়িয়ে যান । বিধানগরের ডেপুটি মেয়রের কথাতেও অনাস্থার প্রস্তাবের ইঙ্গিত মেলে ।
তিনি বলেন, "দু-আড়াই মাসে নিউটাউনে ভোটে কোনও কাজ করেনি । কর্মিসভাতে নেই । শুধু মুখ্যমন্ত্রী যেদিন এসেছিলেন সেদিন গেছিলেন । অনেকদিন ধরেই সব্যসাচীর কার্যকলাপে আমরা বিরক্ত । দলকে জানাব । তিনি কোনও কাজ করতে দিচ্ছেন না । আজকের দিন পর্যন্ত বলা যাবে না, তিনি তৃণমূল রয়েছেন কি নেই । সব কাউন্সিলররা বিরক্ত । তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় পরিষ্কার করতে হবে । এটা সবার বক্তব্য নাও হতে পারে । এটা আমার মত । দলের কাছে পরিষ্কার করে দিন । তাঁর (সব্যসাচীর) ভূমিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে । " পাশাপাশি, মেয়র পদ থেকে সব্যসাচীর পদত্যাগেরও দাবি তোলেন তিনি । তাহলে কোনও নোটিশ কী আনবেন ? এনিয়ে তাপসবাবু বলেন, "দলের অভ্যন্তরে লিখিত নোটিশ আনব কি না সেটা বলব না । পরে দলে বলব । দলের নিয়ম মেনেই সব হবে ।"
পাশাপাশি, সব্যসাচীর অনুগামী কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতি নিয়েও নতুন এক জল্পনা শুরু হয়েছে । বিশেষত, লোকসভা ভোটের পর ভাটপাড়া, হালিশহর, নৈহাটি পৌরসভার যে হাল হয়েছিল সেই একই দিকে এগোচ্ছে বিধাননগর পৌরনিগম ? সব্যসাচী কি একা নন, তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও BJP-তে যোগ দিতে পারেন ? রয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না ।