কলকাতা, 31 জুলাই: লড়াই যেন শেয়ানে, শেয়ানে । উত্তাপ নজরকাড়া । মণিপুর নিয়ে বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব এনে দিল হাইভোল্টেজ টি-টোয়েন্টির উত্তাপ । এই নিন্দা প্রস্তাবের সময় বিধানসভা কক্ষ উত্তপ্ত হতে পারে তা আগে থেকেই আন্দাজ করা গিয়েছিল । হলও তাই । রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং প্রশাসনিক প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রীর জবাব থেকে প্রত্যুত্তর সবটাতেই ছিল নজিরবিহীন বিতণ্ডা । সোমবার এ সবের মাঝেই ধ্বনিভোটে পাশ হল নিন্দা প্রস্তাব ৷
যুদ্ধের আখড়া বিধানসভা: 'চোর চোর' থেকে শুরু করে 'আর নেই দরকার বিজেপি সরকার'। শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের স্লোগান, হাততালি, জয় শ্রীরাম, জয় বাংলা - কী ছিল না আজ বিধানসভায় ৷ সবটাই ধ্বনিত হয়েছে এই ক্ষুদ্র পরিসরে । আলোচনার বিষয় মণিপুর হলেও বিধানসভা যেন হয়ে ওঠে শাসক বনাম বিরোধী যুদ্ধের আখড়া ।
মণিপুর নিয়ে হট্টগোল: এ দিন বক্তা তালিকায় বিরোধীপক্ষের পাঁচ বক্তা থাকলেও, শাসক পক্ষের একমাত্র বক্তা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । ফলে আলোচনার শুরু থেকেই বিরোধীদের অভিযোগের সুর ছিল চড়া । বিরোধী বিধায়করা বারবারই এই বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যে, বাংলায় বসে শাসকপক্ষ মণিপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন । কিন্তু এ রাজ্যের নারী নির্যাতন বা ভোট হিংসা তাঁদের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে না । খুব স্বাভাবিকভাবে এর পালটাও যে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন, তা সকলের এক প্রকার জানাই ছিল । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য শুরু করতেই আরম্ভ হয়ে যায় বিরোধীদের শোরগোল ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ইঁদুর কাটলেও রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল আসে, কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটলে তাঁরা যাওয়ার সময় পান না ।" মমতার কথায়, "বাংলা এগোচ্ছে, তাই বিজেপি বিধায়কদের এত গাত্রদাহ । আসলে বাংলার অগ্রগতি তারা সহ্য করতে পারছে না ।"
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী যখন মণিপুর নিয়ে বলতে যান, তখন বিরোধী বিধায়কেরা বলে ওঠেন, "বাংলার কথা বলুন ।" পালটা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ডোন্ট টক রাবিশ…।"
আরও পড়ুন: না-পারলে আমাদের দায়িত্ব দিন, আমরা মণিপুরে শান্তি ফেরাব: মমতা
আক্রমণ শুভেন্দুর: এ দিন নিজের বক্তব্য রাখার সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের নারী নির্যাতনের উদাহরণ দিতে গিয়ে কিছু ছবি তুলে ধরেন । একইসঙ্গে, বগটুইয়ে মৃতদের নাম তুলে ধরে তিনি বলেন, মমতার শাসনে এঁদের মানুষ ভোলেনি ।
এই ছবিগুলির উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "যে ছবি বিজেপি বিধানসভায় দেখিয়েছে ওটা ফেক । স্পিকার স্যার, আপনি ক্রস চেক করে নেবেন । বিধানসভায় যা খুশি তাই দেখানো যায় না ।"
পালটা মুখ্যমন্ত্রীর: এ দিন বিধানসভায় নিজেও কিছু তথ্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী । তৃণমূলের যে প্রতিনিধি দল মণিপুর গিয়েছিল, তাদের রিপোর্টও পাঠ করে শোনান মমতা । তিনি বলেন, "যে কোনও মূল্যে মণিপুরের পাশে থাকব । আমি টিম পাঠিয়েছি । আবারও পাঠাব । চোরের মায়ের বড় গলা ।"
এ দিন মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন, কেন মণিপুর যাচ্ছেন না ? আমি তো মণিপুর যেতে চেয়েছিলাম আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি । আজও বলছি, আপানারা না পারলে আমাদের বলুন ৷ আমরা মণিপুরকে শান্ত করবই ।"
নিন্দা প্রস্তাব পাশ: মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "বিদেশে যেতে পারেন আর মণিপুর যেতে পারেন না ?" দিনের শেষে ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় নিন্দা প্রস্তাব ৷ মমতা বলেন, "যে পথ বাংলা দেখাল, সেই পথ অনুসরণ হবে অন্য রাজ্যেও । বিজেপি বলছে, ইন্ডিয়া না ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । ইন্ডিয়া থাকবে । বিজেপি কোম্পানিতে পরিণত হবে ।"