কলকাতা, 1 সেপ্টেম্বর: বিভিন্ন ধরনের রোগ সারিয়ে তুলতে পারে মিউজ়িক । হাসপাতালে মিউজ়িক থেরাপিস্ট থাকলে রোগীর বিভিন্ন জটিলতা দূর হবে । তাই সরকারি হাসপাতালে মিউজ়িক থেরাপিস্ট নিয়োগের দাবি উঠছে । এই দাবি সম্বলিত ই-মেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়েছেন অর্থোপেডিক সার্জেন সুমন্ত ঠাকুর । যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, মিউজ়িক থেরাপিস্ট নিয়োগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত তারা কিছু ভাবছে না ।
মিউজ়িক থেরাপি অর্থাৎ সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অস্ত্রোপচার । অপারেশন থিয়েটারে যখন অস্ত্রোপচার চলে, তখন রোগী হয় নিজে গান করেন অথবা বাজনা বাজান , কিংবা সুরের তালে বিভোর হয়ে থাকেন । জেনারেল অ্যানিস্থেশিয়ার বদলে লোকাল অ্যানিস্থেশিয়া ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করা হয় । সব মিলিয়ে অপারেশন থিয়েটারের চিত্রটাই বদলে যায় ।
সুমন্ত ঠাকুর 1998 সাল থেকে অপারেশন থিয়েটারে মিউজ়িক প্রয়োগের বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন ৷ 2007 থেকে সক্রিয়ভাবে এই কাজটি শুরু করেছেন । অপারেশন থিয়েটারে এভাবে মিউজ়িক থেরাপি প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে এশিয়ান বুক অব রেকর্ড, ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এবং আমেরিকান বুক অফ রেকর্ডস থেকে স্বীকৃতি মিলেছে তাঁর৷
গতকাল কলকাতা প্রেস ক্লাবে এশিয়ান বুক অব রেকর্ড, ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম এবং ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের তরফে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানানো হয় সুমন্ত ঠাকুরকে ৷ এই অনুষ্ঠানে তাঁকে আনুষ্ঠানিক সম্মান জ্ঞাপন করেন ইউনিভার্সাল রেকর্ড ফোরামের চিফ এডিটর এবং ইন্টারন্যাশানাল জুরি সুনীল জোসেফ । তিনি বলেন, " ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরামের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড আজ আমরা ডাক্তার ঠাকুরকে প্রদান করলাম । কারণ, ডাক্তার ঠাকুরের এই মিউজ়িক থেরাপি মেডিসিনাল চিকিৎসার এক অন্য ফর্ম । সার্জারিতে সাধারণত জেনেরাল অ্যানিস্থেশিয়া দেওয়া হয় । এখানে জেনেরাল অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হয় না । এখানে মিউজ়িকের ব্যবহার হয় । আর অস্ত্রোপচার চলতে থাকে । একই সঙ্গে রোগীও মিউজ়িক উপভোগ করেন । যে কারণে অপারেশনের সময় রোগী অন্য কিছু ভাবতে পারেন না । এই ধরনের মিউজ়িক থেরাপির এটাই প্রধান বিষয় । বিশ্বে এই ধরনের মিউজ়িক থেরাপি এই প্রথম । " একই সঙ্গে তিনি বলেন, " সমস্ত ধরনের অসুস্থতা সারিয়ে তুলতে পারে মিউজ়িক । " সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের মিউজ়িক থেরাপির ব্যবহার উচিত? তিনি বলেন, "সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করেন সাধারণ মানুষ । সরকারি স্তরে এই মিউজ়িক থেরাপির পরিষেবা চালু হলে উপকৃত হবেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন : Exclusive : থিয়েটার থেরাপির মাধ্যমে মানুষকে মূল স্রোতে ফেরাচ্ছেন অভিজিৎ অনুকামিন
এই মিউজ়িক থেরাপি প্রত্যেকের উপকারে লাগতে পারে । তবে মিউজ়িককে মিউজ়িকের মতো করে শুনতে হবে । মানুষ যেমন গান সাধনা করেন, সেভাবে । একথা জানিয়ে সুমন্ত ঠাকুর বলেন, " যেমন, হয়তো যখন আমি ডিপ্রেসড, ভালো লাগছে না, কোনও সমস্যার মধ্যে হয়তো রয়েছি, তখন যদি আমার পছন্দের গানগুলি নিস্তব্ধ কোনও স্থানে শোনা যায়, তাহলে খুব উপকার হবে । শুধুমাত্র তাই নয় , যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, ঘুমোতে পারছেন না, এক্ষেত্রেও মিউজিক অত্যন্ত ভালো কাজ করে ।"
তিনি বলেন, " মিউজ়িক থেরাপিতে কতগুলি ট্রেন্ড রয়েছে । সেই ট্রেন্ড মেনে চলার জন্য কোনও একজন থেরাপিস্টের কাছে গেলে ভালো হয় । " একইসঙ্গে তিনি অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন, " যখন কেউ ঘুমোতে যাচ্ছেন, তখন হাই রিদিমের গান চলবে না । এগুলি বাদ দিয়ে ভায়োলিন বা পিয়ানোর সুর যেগুলি পালস বা হার্ট রেট বাড়াবে না, সেই ধরনের গান শুনলে অনেকটা স্ট্রেস রিলিফ হয় । আমার মনে হয় এটা একটা সাইকোলজ়িস্ট বা মিউজ়িক থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া যেতে পারে । কারণ, কীভাবে স্ট্রেস কমবে সেগুলি দেখে নিতে হবে।"
সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের মিউজ়িক থেরাপির পরিষেবা চালু করা উচিত কি না, এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুমন্ত ঠাকুর বলেন, " সরকারি হাসপাতালে সবেমাত্র শুরু হয়েছে । বহুদিন ধরে প্রত্যাশা করেছিলাম । তবে, এই পরিষেবাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চালু করতে হবে । যে সব মিউজ়িক থেরাপিস্ট পাশ করে বের হচ্ছেন, তাঁদের কোনও প্লেসমেন্ট নেই । তাঁরা কোনও চাকরি পান না । আগে যারা ফিজ়িওথেরাপিস্ট ছিলেন, তখন তাঁরাও চাকরি পেতেন না । কিন্তু এখন মানুষের জীবনে ফিজ়িওথেরাপিস্ট গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছেন । আমার মনে হয়, হাসপাতাল নার্সিংহোম প্রত্যেকটি সেক্টর যদি একটু সচেতন হয় এবং এই মিউজ়িক থেরাপিস্টদের নিয়োগ করেন কর্তৃপক্ষ, তাহলে রোগীর অনেক জটিলতা কমে যাবে । সেক্ষেত্রে তাঁরা অনেক লাভবান হবেন । " তিনি বলেন, " অদূর ভবিষ্যতে মিউজ়িক থেরাপিস্টরা নিশ্চয়ই প্লেসমেন্ট পাবেন । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি, ই-মেল করেছি। উত্তর পাইনি । আশা রাখছি পাব । প্রয়োজন হলে তাঁর কাছে আবারও আবেদন জানাব, যেন প্লেসমেন্ট অন্তত পান মিউজ়িক থেরাপিস্টরা । তাহলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে ।"
এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, " সরকারি হাসপাতালে মিউজ়িক থেরাপিস্ট নিয়োগের বিষয়ে এখনও কোনও ভাবনা-চিন্তা নেই ।" আগামী দিনে হতে পারে? তিনি বলেন, "এর জন্য পলিসি তৈরি হতে হবে ।"
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী পূর্ণদাস বাউল এবং ঠাকুর শ্রী শ্রী সমীর ব্রহ্মচারী ।