কলকাতা, 29 মার্চ : কল্পনার জগতে ছন্দ খুঁজে আনেন তাঁরা । কিংবা কোনও কালজয়ী সৃষ্টি । সুখী গৃহকোণ বা বই ঘেরা ডাইনিংয়ের আরামকেদারায় তাঁদের স্বস্তি । সেখানেই প্রাণ পায় "লোটাকম্বল"-এর পিন্টু কিংবা "ফুলবউ"-রা । দেশজুড়ে লকডাউন । এখন কী করছেন তাঁরা ? ETV ভারতের মাধ্যমে রাজ্যবাসীর কাছে অসবরযাপনের সেই অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নিলেন রাজ্যের কলমচিরা।
এই অবসরে মনকে শান্ত রাখা ভীষণ প্রয়োজন । লকডাউনের পরিস্থিতিতে নিজেকে বাড়িতে রাখার জন্য তাই শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের কথামৃত এবং স্বামী বিবেকানন্দের যেকোনও লেখা আমাদের পথ প্রদর্শক হতে পারে বলে মনে করছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় । স্বামী বিবেকানন্দের লেখাতে আধ্যাত্মিকতা যেমন পাওয়া যায়, পাওয়া যায় অসম্ভব এক জীবন দর্শন । সেই জীবন দর্শনকে রপ্ত করলে অনায়াসেই কাটবে অবসর,মনে করছেন তিনি । অবসর বোধহয় এটাই । এমনটাই বললেন সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আসুন আমরা আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং অন্তরের বিশ্বাসগুলোকে ঝালিয়ে নিন এই সময়টায়। তাতেই আমরা খুঁজে নিতে পারব ভেতরের আমিটাকে। আবার ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে তার শক্তিও খুঁজে পাব বলে আমার বিশ্বাস।"
সাহিত্যের পাশাপাশি আধ্যাত্বিক চর্চা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে। ১৯৫০ সাল থেকেই বরানগরবাসী সাহিত্যিক জড়িয়ে রয়েছেন আধ্যাত্মিকতা সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমার সংগ্রহে রয়েছে অসংখ্য বই। সেইসব বই এখন আমার সঙ্গী। সঙ্গে গান আমার অত্যন্ত প্রিয়। অবসরে গান গাইছি। তবে একটা বিষয়, অনেকেই আমার কাছে আসতেন। নানা বইয়ের প্রসঙ্গে আলোচনা চলত। আবার অনেক সভা-সমিতিতে নানা বই প্রসঙ্গে আলোচনা করতাম। এখন সে সব বন্ধ। এতে একদিকে ভালোই হয়েছে। আগে নানা কাজের চাপে ধ্যান কিংবা আধ্যাত্মিকতায় বিঘ্ন ঘটত, এখন সেটা নেই । অন্যদের বলব, ধ্যান করার চেষ্টা করুন। দেখবেন মনটা শান্ত হয়ে গেছে।
"এই সময়ে একটা হবি তৈরি করুন, বাকি জীবনটা বদলে যাবে । এমনটাই বলছেন আবুল বাশার । তার দিনগুলো কাটছে ঘরের মধ্যেই। সাহিত্যিক আবুল বাশার বললেন, “ আমার সংগ্রহে এমন অনেক বই আছে যেগুলো পড়া হয়ে ওঠেনি। এই সময়টায় সেগুলো পড়াশোনা করছি। তার সঙ্গে গান শুনছি। সঙ্গে লেখালেখিতেই সময় কেটে যাচ্ছে। বাকি সময়টা পোষ্যর সঙ্গে খুনসুঁটি করে কেটে যাচ্ছে । জানেন,আমার বাড়ির সামনে নিজের হাতে একটা তৈরি বাগান আছে । খুব ছোটো তার পরিসর। সেখানে রংবেরঙের ফুল ফুটেছে। সেখানে অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে । বাইরে বেরোতে পারছি না বলে একফোঁটাও অসুবিধা হচ্ছে না ।" কালজয়ী বেশ কিছু উপন্যাসের স্রষ্টা রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বললেন, “ যদি আপনার পোষ্য থাকে তার সঙ্গে সময় কাটান। দেখুন তাদের নিজস্ব একটা ভাষা আছে। অনেক কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন। আর প্রকৃতিকে ভালবাসুন। সময় কাটানোর জন্য বাগান তৈরির অভ্যেস করতে পারেন। ইনডোর অনেক গাছ হয় জানেন। আর যাদের ছাদ কিংবা বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গা আছে, তাঁরা লেগে পড়ুন না বাগান করতে। যখন সেই বাগানের ফুল আসবে কিংবা ফল, তখন অদ্ভুত এক প্রসন্নতা আপনাকে ঘিরে ফেলবে। মনে হবে আমি নিজের হাতে এই ফলটা ফলালাম। তার একটা অন্যরকমের তৃপ্তি আছে। সেই তৃপ্তি আপনাকে আগামী দিনেও জীবনের অন্য একটা দিশা দেখাবে ।তার সঙ্গে সময় কাটান ইনডোর গেমস খেলে। পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে ইনডোর গেমস মেতে উঠুন। দেখবেন জীবনটা অত্যন্ত সুন্দর।"
মনটাই আসল রাজা, সেটাকে বশ মানালেই কেল্লাফতে, বলছেন সুবোধ সরকার । লকডাউনের আগে থেকেই তিনি নিজেকে টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে বন্দী করে ফেলেছেন। সেখান থেকেই মনের ভাবনাগুলোকে চিরকুটে কিংবা রাইটিং প্যাডে লিখে রাখছেন । সুবোধ সরকার বলেন, “ এই কয়েকদিন একবারেই বাইরে যাইনি। তবে কোনও অসুবিধে হয়নি। লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের কারও খুব একটা অসুবিধা হবে না। আমারতো এই অভ্যাস টা 35 বছরের। কিন্তু আমজনতার কাছে এটা সত্যিই একটা নতুন অভিজ্ঞতা। সারা ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখলে কখনও কখনও মনটা উদাস হয়ে উঠছে। যখন দেখি গতকাল দিল্লিতে প্রচুর শ্রমিক একসঙ্গে হাঁটতে শুরু করেছেন তখন মনটা বিষন্নতায় ভরে গিয়েছিল । সত্যিই তো ওরা বাঁচলেই তো নিজের বেঁচে থাকা। ভারতবর্ষের সব মানুষ বাঁচলে তো আমরা বেঁচে থাকবো। কিন্তু বাঁচতেই হবে। প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে এখন বাইরে বেরোনো মানেই আত্মহত্যা। বাড়িতে থাকাটাই কাজ। তার জন্য মানসিকভাবে জোর আনতে হবে। মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে। চলুন এই যুদ্ধটাও আমরা একসঙ্গে জিতে নিই।"