কলকাতা, 4 নভেম্বর: বিধিনিষেধ উঠে গেলেও, এখনও স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল । প্রত্যেক রুটেই বাস এবং মিনিবাসের সংখ্যা প্রায় হাতেগোনা । ফলে বাইরে বেরিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে । এনিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ পেয়ে এবার নড়ে বসল রাজ্য পরিবহণ দফতর । এই মুহূর্তে সময়সূচি মেনে, কোন রুটে কত সংখ্যক বাস চলছে, বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনগুলির কাছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়ে পাঠাল তারা ।
রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (আরটিএ) তরফে 7টি বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে । আগে কখনও এই ধরনের চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন বাসমালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা । তাতে খানিকটা ক্ষুব্ধও তাঁরা । তাঁদের যুক্তি, করোনা, লকডাউন এবং পেট্রল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যের ধাক্কায় দমবন্ধ হয়ে আসছে বাসমালিকদের । সব জেনেও ভাড়া বাড়াতে রাজি হয়নি সরকার । তার পরেও এমন চিঠি কেন ধরানো হল, তার উত্তর খুঁজছেন অনেকেই ।
আরও পড়ুন: Road Accident: কালীপুজোর দিন টালায় পথ দুর্ঘটনা, আহত যুবক
ওই চিঠির প্রসঙ্গে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিঠি হাতে পেয়ে একটাই কথা বলতে ইচ্ছে করছে—অন্ধের কী বা রাত, কীই বা দিন ৷ আজ কলকাতা শহরে প্রায় 70 শতাংশ বেসরকারি বাস ও মিনিবাস বসে গিয়েছে ৷ লিটার প্রতি ডিজেলের দাম 102 টাকা ৷ এমন অবস্থায় দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেই একটা বা দু’টো বেসরকারি বাস চোখে পড়বে রাস্তায় । সরকারি প্রতিদিন শেয়ার বাজারের মতো পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে ৷ বাড়ি থেকে বসে কাজ করছেন অফিস যাত্রীরা ৷ স্কুল-কলেজও বন্ধ ৷ তাই যাত্রী হচ্ছে না ৷ রাজ্য সরকার সব দেখেও চুপ ৷ ভাড়া বাড়াতে অনীহা তাদের ৷ এসবের জেরেই বাস পরিবহণ স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না ৷’’
একই সুর বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি সুরজিৎ সাহার গলাতেও ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘লোকাল ট্রেন এই দু’দিন হল চলছে ৷ তা সত্ত্বেও তেমন যাত্রী হচ্ছে না ৷ পাশাপাশি পুলিশের জুলুমও রয়েছে। তাই রাস্তায় বাস নামানোর সাহস হারিয়েছেন বাসমালিকরা ৷ কত দিন আর নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বাস চালানো সম্ভব ! আমরা গত দু’বছর ধরে বলে আসছি এবং বারে বারে চিঠি দিয়েও জানিয়েছি যে, ভাড়া না বাড়ালে রাস্তায় বাসেও সংখ্যা কমবেই ৷ বিমার টাকাই দিতে পারছেন না অনেকে ৷ তার জন্য বিমা সংস্থা গাড়ি কেড়ে নিচ্ছে ৷ কেউ কেউ আবার নিজে থেকেই গাড়ি সারেন্ডার করে দিচ্ছেন ৷ খরচ চালাতে না পেরে গাড়ির সংখ্যাও কমিয়ে দিচ্ছেন অনেকে ৷ ফলে গাড়ির সংখ্যা দিনদিন আরও কমে আসছে । যে বাসগুলি কোনও মতে পরিষেবা দিচ্ছে, সেগুলিও আর কত দিন রাস্তায় নামতে পারবে, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে ৷’’
আরও পড়ুন: Swasthya Sathi Card : স্বাস্থ্যসাথীর মুশকিল আসানে কার্ডের পিছনেই টোল ফ্রি ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কেটে যাওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে শুরু করে শহর কলকাতা ৷ কিন্তু আগে যে রুটে 10টি বাস চলত, এখন সেখানে মেরেকেটে 4টি বাস চলছে ৷ সেই নিয়ে ক্ষোভের জেরে সম্প্রতি পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে একদফা আলোচনায় বসেন পরিবহণ সচিবের । তার পরই বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনকে চিঠি লিখে তালিকা চাওয়া হয় । মিনিবাস কো-অর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক স্বপনকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘ভাইফোঁটার পর জানাব, কোন রুটে কত বাস চলছে । আর এর বেশি আমরা কী-ই বা করতে পারি ! আমাদের কোমর ভেঙে গিয়েছে । বাস চালকদের অধিকাংশই গত দু’বছর ধরে সবজি বিক্রি করছেন । কেউ আর পুরনো পেশায় ফিরতেই চাইছেন না । বাস চালানোর লোকও নেই তাই । এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় বাস নামানোর সাহসই পাচ্ছেন না বাসমালিকরা ।’’