কলকাতা, 18 নভেম্বর : ব্রেন ডেথ হলে পরিজনের সম্মতি নিয়ে সাধারণত রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় । এই দু'বছরে শহরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হারও বেড়েছে । কিন্তু এর মধ্যেই এক নতুন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অরগানাইজ়েশন (ROTTO) । কী সেই সমস্যা ? ব্রেন ডেথ রোগীদের অঙ্গদানের ক্ষেত্রে বাছাই করছে পরিজনরা । অর্থাৎ, কোনও ক্ষেত্রে পরিজনরা বলছেন হার্ট ও লিভার দান করবেন না । শুধু দুটি কিডনি দান করবেন । আবার কেউ বলছেন, লিভার ও কিডনি দান করবেন । কিন্তু হার্ট দান করবেন না । রোগীর পরিজনদের এরকম মানসিকতার সমাধান খুঁজতে তাই বৈঠকে বসছে ROTTO ।
একজনের অঙ্গ অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি সামনে আসার পর থেকেই এই কাজে এগিয়ে এসেছেন অনেক ব্রেন ডেথ রোগীর পরিজনরা । কলকাতায় এখনও পর্যন্ত হার্ট, লিভার, কিডনি, কর্নিয়া ও স্কিন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে । বছর দুই ধরে এভাবে সংগৃহীত কোনও অঙ্গ অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের হারও বেড়েছে শহরে । কিন্তু এখন সেক্ষেত্রেও দেখা দিচ্ছে নতুন এক সমস্যা । অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে বাছাই করছেন পরিজনরা । যেমন, পথদুর্ঘটনায় জখম হুগলির বাসিন্দা অতনু চক্রবর্তী (27)-র ব্রেন ডেথ 16 নভেম্বর শনিবার SSKM হাসপাতালে ঘোষণা করা হয় । তাই অঙ্গ দানের জন্য পরিজনদের সঙ্গে কথাবার্তার প্রক্রিয়া শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । এদিকে ততক্ষণে চিকিৎসকরা জানতে পারেন ব্রেন ডেথ ঘোষিত অতনুর হার্ট, লিভার ও কিডনি অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনযোগ্য ।
আশায় ছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানতে পারেন অতনুর হার্ট কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেরই আর এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব । কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় অতনুর পরিজনরা । তারা অঙ্গ দানে রাজি বলে জানায় ঠিকই । কিন্তু সব অঙ্গ নয় । শুধুমাত্র দুটি কিডনি দান করতে তারা রাজি হয়েছে । স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, "শুধুমাত্র দুটি কিডনি দান করতে রাজি হয়েছে ব্রেন ঘোষিত এই রোগীর পরিজনরা । তাও অনেক বোঝানোর পরে । হার্ট ও লিভার দান করতে তারা রাজি হয়নি ।"
বারুইপুরের বাসিন্দা তন্ময় হালদার (20)। পথদুর্ঘটনায় জখম হয়ে SSKM হাসপাতালে ভরতি ছিলেন তিনি । 28 সেপ্টেম্বর তাঁর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়েছিল SSKM হাসপাতালে । তাই তন্ময়ের হার্ট SSKM হাসপাতালেরই এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য আশায় ছিলেন চিকিৎসকরা । কিন্তু সেক্ষেত্রেও একই সমস্যার শিকার হতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে । তন্ময়ের লিভার ও কিডনি দান করতে সম্মতি জানালেও হার্ট দান করতে অস্বীকরা করে পরিজনরা ।
এই দুটি ক্ষেত্রে বেছে বেছে অঙ্গ দানের জন্য রাজি হয়েছেন পরিজনরা । তবে, এরকমও দেখা গেছে যে, অনেক বোঝানোর পরেও ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীর কোনও অঙ্গ দান করতে রাজি হননি পরিজনরা । SSKM হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "এভাবে বেছে বেছে অঙ্গদান করা যায় না ।" ROTTO-র এক আধিকারিক বলেন, " বুঝতে পারছি না, দান করছেন যখন, তখন কেন পুরোটা নয় । এভাবে যদি হার্ট দান করতে পিছিয়ে যান পরিজনরা তাহলে হার্ট প্রতিস্থাপনের হার আরও কমে যেতে থাকবে ।" যদিও, স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, "ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীর পরিজনরা এমন করতেই পারেন । তাদের ইচ্ছার উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে ।" তবে, ROTTO-র জয়েন্ট ডিরেক্টর, চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায় বলেন, "এমন কেন হচ্ছে, তা আমরা ভাবছি । বৈঠকে বসে আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য পথ খুঁজব ।" এই বিষয়ে দীর্ঘ বছর মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে চলা একটি সংগঠনের উপদেষ্টা ব্রজ রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "অনেকে মনে করেন হার্ট মানেই সবকিছু । তাই হয়তো হার্ট দান করতে তারা রাজি হচ্ছে না । এক্ষেত্রে ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীর পরিজনদের বুঝিয়ে রাজি করানো ছাড়া আর কিছু করার নেই ।"