কলকাতা, 11 ডিসেম্বর : বহুদিন ধরে চলা আপার প্রাইমারি স্তরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মামলার রায় দিল আজ কলকাতা হাইকোর্ট । আর সেই রায় সামনে আসতেই হতাশাগ্রস্ত আপার প্রাইমারির চাকরিপ্রার্থীরা । কারণ, 2016 সাল থেকে চলে আসা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাতিল করে নতুন করে প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য । প্রায় সাত বছর ধরে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা, বিশেষত যাঁরা চলে আসা প্রক্রিয়ায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছিলেন, তাঁরা চরম হতাশ এই নির্দেশে । শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি । তিনি জানান, বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না ।
2014 সালে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী টেট পরীক্ষা হয় 2015 সালের অগাস্ট মাসে । ফল প্রকাশিত হয় 2016 সালে । তারপরে কয়েক বছর ধরে সেই প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে থাকে । শেষমেশ 2019 সালে শুরু হয় আপার প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া । সেই প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিলেও তা কাটিয়ে সম্পূর্ণ হয় ভেরিফিকেশন ও ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া । কিন্তু, তারপর আইনি জটিলতায় আবারও থমকে যায় আপার প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া । হাইকোর্টের নির্দেশে 2019 সালের 4 অক্টোবর প্রকাশিত হয় প্রভিশনাল মেধাতালিকা । কিন্তু, সেই মেধাতালিকাতেও বহু অসঙ্গতি দেখা যায় । নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট । চলতে থাকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার একাধিক অসঙ্গতির অভিযোগের মামলা । দীর্ঘদিন ধরে চলা সেই মামলার রায় আজ দিল হাইকোর্ট । সেই নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে 2016 সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া । বাতিল করা হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন প্রকাশিত মেধাতালিকাও । নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে ।
হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন, 2021 সালের 4 জানুয়ারি থেকে শুরু করতে হবে প্রার্থীদের নথি যাচাই প্রক্রিয়া । 5 এপ্রিল পর্যন্ত চলবে যাচাইয়ের কাজ । 10 মের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে ইন্টারভিউয়ের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা । সেই তালিকার ভিত্তিতে ইন্টারভিউ, মেধাতালিকা ও তার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে । সবমিলিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে 31 জুলাইয়ের মধ্যে ।
হাইকোর্টের এই রায়ে হতাশায় ডুবেছে আপার প্রাইমারির চাকরিপ্রার্থীরা । আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী অতনু ঘোষ বলেন, "আজকের নির্দেশে আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ । কারণ, সাত বছর ধরে একটা প্রক্রিয়া চলছিল । সেটা বিচারপতি আবার নতুন করে শুরু করতে বললেন । এতে আমি হতাশ । আমি মেধাতালিকায় ভালো স্থানে ছিলাম । আশা করব, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সরকার দ্রুত এই প্রক্রিয়া আবার শুরু করে দ্রুত তা শেষ করবে ।"
বায়োসায়েন্সের প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, "চরম হতাশাগ্রস্ত আমরা । এই নিয়োগ এবার কবে হবে কে জানে । আমাদের বয়স তো বেড়েই যাচ্ছে। এই নির্দেশে ফ্রেশ প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল এক প্রকার । আমরা দুর্নীতির জন্য দায়ীদের শাস্তি প্রার্থনা করছি ।"
মেধাতালিকায় থাকা আর এক প্রার্থী মৌমিতা ঘোষ বলেন, "যে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছিল, চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশ হয়ে গেছিল, প্রায় 24 হাজার প্রার্থী ছিল সেই মেধাতালিকায়, আজ হাইকোর্টের রায়ে সেই প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে গেল । আবার নতুন করে নিয়োগ হবে । আমি মেধাতালিকায় থাকা একজন প্রার্থী । অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় । আবার যে কবে ভেরিফিকেশন শুরু হবে, যাঁরা আগে ইন্টারভিউ দিয়ে মেধাতালিকায় এসেছিলেন তাঁরা পরের ইন্টারভিউতে আদৌ ভালো করবেন কি না । ফলে, যাঁরা এই প্যানেলে ছিলেন তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে গেল এই রায়ের কারণে । আর কিছু বলার নেই । দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয় ।"