ETV Bharat / state

Winter Memories: হারিয়ে যাওয়া প্রিয় শীতকে রতনতনুর চিঠি - শীতের চিঠি

শীত মানে উৎসব ৷ শীত মানে আনন্দে মেতে ওঠা ৷ আবার এই শীত মানে নস্টালজিয়াও ৷ একটা সময়ে শীতের দিনে চিঠি লেখার চল ছিল ৷ এখন আর তা হয় না ৷ কিন্তু কখনও কখনও ফিরতেই হয় শিকড়ের টানে ৷ আমরাও ফিরলাম শীতের চিঠির কাছে ৷ ইটিভি ভারতের হয়ে এই কলামে কলম ধরবেন বিশিষ্টরা ৷ আজ রতনতনু ঘাটী...

Ratantanu Ghati writes letter depicting his winter memories
কলম ধরলেন রতনতনু ঘাটী ৷
author img

By

Published : Jan 15, 2023, 7:50 PM IST

প্রিয় শীত,

ছেলেবেলায় লেপের ওম ছেড়ে ছুট্টে আমগাছের নীচে দৌড়ে যেতাম ভাইবোনের সঙ্গে কম্পিটিশন করে, তখন তোর সঙ্গে দেখা হত ! ঘনঘোর কুজ্ঝটি কুয়াশার নীচে তুই তখন ছোট-ছোট আমগুলোকে অন্ধকারে লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতিস ৷ যাতে আমি না আমগুলো খুঁজে পাই ! আসলে ভাইবোনদের মধ্যে আমি ঢের-ঢের ভ্যাবলা ছিলাম ৷ ভাইবোনেরা ঘোষণা করত তাদের পকেটে ক'টা করে আম ভরে উঠেছে, তার সমৃদ্ধ পরিসংখ্যান ৷ আর আমি কী বোকার হদ্দ, তখন কুয়াশার ভিতর তোকে খুঁজতাম ৷

মিথ্যে বলব না ! তোকে ঠিক দেখতে পেতাম ! তুই দাঁড়িয়ে আছিস, আমাদের উত্তর পাড়ার সেই যাযাবর পাখিশিকারি দলের নাচনেওয়ালি কিশোরীর অলকার মতো ৷ নাকে তোর হাট থেকে কেনা নথটা অত আন্ধারেও ঝিকমিক করে উঠত ! তোদের রান্না করা মাটির উনুন থেকে লক্ষ্মীপ্রতিমার মতো সরু আঙুল ঘষে তুলে আনা কালি লেপটে দু'চোখে পরেছিস ৷ ও মা ! কাজল পরতে হবে না ? তোর চোখের কাজলরেখা আমি স্পষ্ট দেখতে পেতাম কুয়াশার দমকা ঝলকানিতে ৷ আর ছেঁড়া ফ্রকের উপর একটা ময়লা গামছা বুকের উপর বিছিয়ে, তুই যেমন করে আড়াল করতিস দিনেরবেলা তোর দুটো না-ফোটা শ্বেত আকন্দ ফুলের কুঁড়ি, কুয়াশায়ও অমন করতিস কেন ? ইস, আমিই লজ্জায়, সত্যি বলছি মরে যেতাম ৷

আরও পড়ুন: প্রিয় কাশ্মীর ... ভূস্বর্গকে 'শীতের চিঠি' ভাস্বরের

ভাইবোনদের আমকুড়নোর সদর্প আহ্লাদের পিছনে চুপিচুপি খালি হাতে দুর্বা ঘাসের মাথায় জড়ানো কুয়াশা মেখে ঘরে ফিরে আসতাম ৷ মা ঠিক জানত, আমি একটাও আম কুড়োতে পারব না ৷ তবু জিজ্ঞেস করত, "বড়খোকা, তুই ক'টা আম পেয়েছিস ?" আমি ঘাড় নাড়তাম, "একটাও না ৷"

মায়ের চোখ দু'টো একটুখানি ভিজে উঠত কি ? কে জানে ! অতটুকুন বয়সে মায়ের চোখের অশ্রু ঠিকঠাক চিনতে পারতাম না ৷ দুপুর-দুপুর তুই যখন ফের সত্যি-সত্যি আমাদের খিড়কি দুয়ারে এসে দাঁড়াতিস এক মুঠো মুড়ির লোভে ৷ ঠাকুরমা বলত, "আয়, নেচে-নেচে একটা গান শোনা তো !" মা হলুদ-বাটা হাতে মুখ তুলে রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলত, "সেই 'আনারকলি' টকির গানটা !" আর তুই ঘাঘরার মতো ফ্রকের ঘেরটা দু'হাতে ধরে ঘুরতে ঘুরতে নেচে-নেচে গাইতিস- "ইয়ে জিন্দেগি উসি কি হ্যায়..." আমি দূরে দাঁড়িয়ে শুনছি !

একদিন আমার ঠাকুরমা ফস করে বলল, "কী সুন্দর তুই গান করিস ! তোকে আমার নাতবউ করব !" অমনি গান আর নাচ থামিয়ে অলকা আমাদের পিছনবাড়ি দিয়ে ছুট-ছুট-ছুট..., তাদের যাযাবর মহল্লায় ! তার এক সপ্তাহের ভিতর পাখিশিকারি যাযাবর দলের সঙ্গে অলকাও চলে গেল কোথাও ৷

শীত, তুই বিশ্বাস কর, সেই কৈশোর থেকে অলকার মতো তোকেও হারিয়ে ফেলেছি শীত ৷ প্রতি বছরের মতো এ বছরও ঘন কুয়াশার মধ্যে এই বৃদ্ধ বয়সে তোকেই খুঁজে চলেছি শীত ৷ না, তেমন করে তোর দেখা আর পাইনি !

ইতি-

রতনতনু

প্রিয় শীত,

ছেলেবেলায় লেপের ওম ছেড়ে ছুট্টে আমগাছের নীচে দৌড়ে যেতাম ভাইবোনের সঙ্গে কম্পিটিশন করে, তখন তোর সঙ্গে দেখা হত ! ঘনঘোর কুজ্ঝটি কুয়াশার নীচে তুই তখন ছোট-ছোট আমগুলোকে অন্ধকারে লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতিস ৷ যাতে আমি না আমগুলো খুঁজে পাই ! আসলে ভাইবোনদের মধ্যে আমি ঢের-ঢের ভ্যাবলা ছিলাম ৷ ভাইবোনেরা ঘোষণা করত তাদের পকেটে ক'টা করে আম ভরে উঠেছে, তার সমৃদ্ধ পরিসংখ্যান ৷ আর আমি কী বোকার হদ্দ, তখন কুয়াশার ভিতর তোকে খুঁজতাম ৷

মিথ্যে বলব না ! তোকে ঠিক দেখতে পেতাম ! তুই দাঁড়িয়ে আছিস, আমাদের উত্তর পাড়ার সেই যাযাবর পাখিশিকারি দলের নাচনেওয়ালি কিশোরীর অলকার মতো ৷ নাকে তোর হাট থেকে কেনা নথটা অত আন্ধারেও ঝিকমিক করে উঠত ! তোদের রান্না করা মাটির উনুন থেকে লক্ষ্মীপ্রতিমার মতো সরু আঙুল ঘষে তুলে আনা কালি লেপটে দু'চোখে পরেছিস ৷ ও মা ! কাজল পরতে হবে না ? তোর চোখের কাজলরেখা আমি স্পষ্ট দেখতে পেতাম কুয়াশার দমকা ঝলকানিতে ৷ আর ছেঁড়া ফ্রকের উপর একটা ময়লা গামছা বুকের উপর বিছিয়ে, তুই যেমন করে আড়াল করতিস দিনেরবেলা তোর দুটো না-ফোটা শ্বেত আকন্দ ফুলের কুঁড়ি, কুয়াশায়ও অমন করতিস কেন ? ইস, আমিই লজ্জায়, সত্যি বলছি মরে যেতাম ৷

আরও পড়ুন: প্রিয় কাশ্মীর ... ভূস্বর্গকে 'শীতের চিঠি' ভাস্বরের

ভাইবোনদের আমকুড়নোর সদর্প আহ্লাদের পিছনে চুপিচুপি খালি হাতে দুর্বা ঘাসের মাথায় জড়ানো কুয়াশা মেখে ঘরে ফিরে আসতাম ৷ মা ঠিক জানত, আমি একটাও আম কুড়োতে পারব না ৷ তবু জিজ্ঞেস করত, "বড়খোকা, তুই ক'টা আম পেয়েছিস ?" আমি ঘাড় নাড়তাম, "একটাও না ৷"

মায়ের চোখ দু'টো একটুখানি ভিজে উঠত কি ? কে জানে ! অতটুকুন বয়সে মায়ের চোখের অশ্রু ঠিকঠাক চিনতে পারতাম না ৷ দুপুর-দুপুর তুই যখন ফের সত্যি-সত্যি আমাদের খিড়কি দুয়ারে এসে দাঁড়াতিস এক মুঠো মুড়ির লোভে ৷ ঠাকুরমা বলত, "আয়, নেচে-নেচে একটা গান শোনা তো !" মা হলুদ-বাটা হাতে মুখ তুলে রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলত, "সেই 'আনারকলি' টকির গানটা !" আর তুই ঘাঘরার মতো ফ্রকের ঘেরটা দু'হাতে ধরে ঘুরতে ঘুরতে নেচে-নেচে গাইতিস- "ইয়ে জিন্দেগি উসি কি হ্যায়..." আমি দূরে দাঁড়িয়ে শুনছি !

একদিন আমার ঠাকুরমা ফস করে বলল, "কী সুন্দর তুই গান করিস ! তোকে আমার নাতবউ করব !" অমনি গান আর নাচ থামিয়ে অলকা আমাদের পিছনবাড়ি দিয়ে ছুট-ছুট-ছুট..., তাদের যাযাবর মহল্লায় ! তার এক সপ্তাহের ভিতর পাখিশিকারি যাযাবর দলের সঙ্গে অলকাও চলে গেল কোথাও ৷

শীত, তুই বিশ্বাস কর, সেই কৈশোর থেকে অলকার মতো তোকেও হারিয়ে ফেলেছি শীত ৷ প্রতি বছরের মতো এ বছরও ঘন কুয়াশার মধ্যে এই বৃদ্ধ বয়সে তোকেই খুঁজে চলেছি শীত ৷ না, তেমন করে তোর দেখা আর পাইনি !

ইতি-

রতনতনু

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.