কলকাতা, 19 জুন: কথায় বলে, একে রামে রক্ষে নেই আবার সুগ্রীব দোসর। সেকথাই সত্যি হল পুরুলিয়ার বাসিন্দা কৃষ্ণা বিদের ক্ষেত্রে। তাঁর একটি অঙ্গ অবস্থানগতভাবে শরীরে বিপরীত দিকে। হৃদযন্ত্র বাঁ-দিকে থাকলেও কৃষ্ণা বিদের শরীরে যকৃৎ অবস্থান করছে ডানদিকে। যা দেখে অবাক চিকিৎসকরা। সঙ্গে দোসর হয়েছে কোলন ক্যানসার। সেই শারীরিক অবস্থাতেই অস্ত্রোপচার হল কলকাতার অন্যতম সরকারি হাসপাতাল নীলরতন সরকারে ৷ সোমবার তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে ৷
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের বাসিন্দা কৃষ্ণা বিদের বয়স 51। সম্প্রতি আচমকাই তাঁর শুরু হয় তীব্র পেটের যন্ত্রণা । এলাকার বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখিয়ে অবশেষে তিনি আসেন কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক উৎপলদের তত্ত্বাবধানে ভরতি হন তিনি। সেখানেই প্রথম কৃষ্ণা বিদ জানতে পারেন তাঁর শরীরের একটি অঙ্গ বিপরীত দিকে রয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানতে পারেন ওই রোগীর শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার।
কোলনে রয়েছে সেই মারাত্মক রোগ। দ্রুত অস্ত্রোপচার না-করলে ছড়িয়ে পড়তে পারে মারণ এই রোগ। তাই চিকিৎসকরা দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শরীরে যকৃতের বিপরীত অবস্থান নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তাঁরা। সাধারণত এই কেসগুলির ক্ষেত্রে রক্তবাহী নালীগুলো অবস্থানও হয় বিপরীতে। যেহেতু এই রোগীর ক্ষেত্রে যকৃতের অবস্থান বিপরীতে তাই শরীরের অন্যান্য অংশগুলি শারীরিক গঠনের বিপরীত দিকে হয় ৷ তাই এই সমস্ত অস্ত্রোপচারের আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয় চিকিৎসকদের। অস্ত্রোপচারেও ব্যাপক ঝক্কি থাকে। আর সেই ঝক্কি নিয়ে হয় তাঁর অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের তাঁর শরীর থেকে বাদ দিতে হয় কোলনের একাংশ।
আরও পড়ুন: ওটিতে গিয়েও হল না অস্ত্রোপচার, বিক্ষোভের চাপে অবস্থান বদল হাসপাতালের
চিকিৎসক উৎপল দে জানান, ওনার ক্ষেত্রে অ্যানাটমিটা পুরোই বিপরীত থাকার জন্য অস্ত্রোপচারটা খুব চ্যালেঞ্জের ছিল। এই ধরনের কেসকে আমরা বলে থাকি সাইটার্স ইনভারসার্স পার্সেয়ালি। এই বিপরীত অ্যানাটমির সঙ্গে কোলন ক্যানসার, যা চিকিৎসকের মতে পৃথিবীতে মোট 15 জনের হয়েছে। ভারতে দ্বিতীয়। চিকিৎসকরের কথায় এই রোগ 2 লক্ষ মানুষের মধ্যে একজনের হয়। কলকাতার অন্যতম সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করে জীবন ফিরে পেলেন কৃষ্ণা। তিনি বলেন, "আমি এখানে এসেই জানতে পারি আমার যকৃৎ বিপরীতে। এখন সুস্থ আছি। রাতে ঘুম হচ্ছে, খেতে পাচ্ছি। বাড়ি ফিরে যাচ্ছি আজ।"