কলকাতা, 23 মার্চ: বিরল অস্ত্রোপচার (rare operation) কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (Nil Ratan Sircar Medical College and Hospital)। 46 বছরের মহিলার পেটের ভিতর থেকে অস্ত্রোপচার করে বের করা হয়েছে 4 কেজির জেলি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওই মহিলা 'সিউডোমিক্সোমা পেরিটোনি' (Pseudomyxoma Peritonei) নামে এক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় 'জেলি বেলি'।
চিকিৎসর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার বাসিন্দা ছাপিয়া শেখ ৷ বেশ কয়েকমাস ধরেই খাওয়ার প্রতি তাঁর অনীহা তৈরি হয়েছিল। অল্প কিছু খেলেই পেট ফুলে যেত বিশাল। পেটে হাত দিলে বাইরে থেকে দানা জাতীয় জিনিস অনুভব করা যেত। তারপরেই তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর সিটি স্ক্যানের পর ধরা পরে এই রোগের বিষয়টি ৷ অবশেষে, অপারেশন বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক উৎপল দের তত্ত্বাবধানে রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়।
চিকিৎসক জানান, "ওই মহিলা আক্রান্ত সিউডোমিক্সোমা পেরিটোনি নামে এক বিরল রোগে। যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় জেলি বেলি।" কী এই 'জেলি বেলি' ? চিকিৎসক জানান, "মূলত টিউমার হয় শক্ত মাংসপিন্ডের। তবে এই রোগের ক্ষেত্রে সেটা হয় তরল জাতীয়। এপেনডিক্স বা ওভারিতে থেকে এই ধরনের রোগের শুরু । টিউমারের যে কোষগুলো আছে তা একটা ছিদ্র দিয়ে আচমকা বেরিয়ে সারা পেটে ছড়িয়ে পড়ে। তার ফলে তা জেলির আকার ধারণ করে নেয়। সাইক্লো রিডাক্টিভ চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব ৷ তবে জেলি সম্পূর্ণভাবে টিউমার থেকে নির্মূল করা সম্ভবপর হয় না।"
তিনি আরও জানান, "এই চিকিৎসার মাধ্যমে ওই মহিলার শরীরে টিউমারের মধ্যে থাকা জেলি টাকে বার করে দেওয়া হয়। চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে হাইপেক নামক আরেকটি চিকিৎসা চলতে থাকে। যাকে সোজা ভাষায় বলা হয় কেমোথেরাপি। যাতে অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি কেমোও দেওয়া হয়। তাতে রোগীর সুস্থ থাকার সম্ভাবনা থাকে প্রায় 80 শতাংশ।"
আরও পড়ুন: 15 দিন শ্বাসনালীতে আটকে জোঁক ! উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বিরল অস্ত্রোপচারে ফিরল জীবন
তবে রাজ্যে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না। গত শনিবার ওই রোগীর অস্ত্রপচার হয়। প্রায় এক গামলা জেলি ওই মহিলার শরীর থেকে অস্ত্রোপচার করে বার করা হয়েছে। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার ৷ আগামী কিছুদিনের মধ্যে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে ৷ এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে ক্যানসার বিভাগে এবং সেইখানে গিয়ে চলবে কেমোথেরাপির চিকিৎসা ৷ বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ ওই মহিলা রোগী। আস্তে আস্তে সাধারণ জীবনযাত্রায় আবার ফিরতে পারবেন ওই মহিলা, জানিয়েছেন চিকিৎসক ৷