কলকাতা, 31 মে: তিন নয়, এবার বাংলায় জারি হল চার বছরের স্নাতক কোর্স । উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে জারি করা হয়েছে নির্দেশিকা । সেই নির্দেশ অনুযায়ী, এই বছর থেকেই চার বছরের অনার্স কোর্স করতে পারবেন পড়ুয়ারা । তবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ পর কেন এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে শিক্ষামহল ।
এই নির্দেশিকা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "যখন প্রায় সমস্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতক স্তরের ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনও অতিরিক্তি পরিকাঠামো না দিয়ে, একদমই শেষ মুহূর্তে 4 বছরের কোর্সে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিল । এর ফলে সরকার আরও একবার প্রতিষ্ঠা করল যে তারা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামিদিনে বেসরকারি হাতে তুলে দেবে ।’’
একই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার । তাঁর মতে, এই শিক্ষানীতি জারি করা অনিবার্য । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ পর কেন এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ? একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তির মান নিয়েও প্রশ্নও তুলেছেন তিনি । তিনি বলেন, "জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা আছে যদি কোনও পড়ুয়া পড়াশোনার মাঝে সেই কোর্স থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, তাহলে সেও একটি সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে ওই বছর বেরোতে পারবে । এই বিষয়গুলো কিছুই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়নি । তার ফলে যাঁরা অনার্স ও পাস কোর্সে ভর্তি হবেন, তাঁদের মধ্যে তার সংশয় থেকে যাবে । এটা ভাবতে অবাক লাগছে যে একটা দফতর যে এত বড় একটা নীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এত সংকটে ভুগছে ।"
যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই জাতীয় শিক্ষানীতির যথাযথ পরিকল্পনা টুইটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন । তিনি বলেন, "রাজ্য সরকার একটি পৃথক স্টেট এডুকেশন পলিসি গঠন করেছে । যেখানে ভালো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ।" শিক্ষামন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, যদি এই চার বছরের অনার্স কোর্স শুরু না করা হয় তাহলে প্রায় সাত লক্ষ পড়ুয়া সর্বভারতীয় স্তরে সমস্যায় পড়তেন । এর পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে রাজ্য সরকার কোনোভাবেই শিক্ষাব্যবস্থায় ৫+৩+৩+৪ পদ্ধতি চালু করা বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ-সহ আরও জাতীয় শিক্ষানীতির বেশ কিছু পয়েন্ট মেনে নেয়নি ৷
এই জাতীয় শিক্ষানীতি বিরুদ্ধে শুধু শিক্ষামহল নয়, সরব হয়েছে রাজনৈতিক মহলও । এআইডিএসও বহু দিন ধরেই জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলন করছে । সেই সংগঠন সদস্য গৌরাঙ্গ খাটুয়া বলেন, "বর্তমানে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্যের অভাব । এছাড়াও তিন বছরের অনার্স কোর্সের পরীক্ষা নিতেই বহু সমস্যা দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে । ফলে এই চার বছরের অনার্সের জন্য আদৌও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো রয়েছে কি ?"
আরও পড়ুন: চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হচ্ছে 4 বছরের স্নাতক
এই বিষয়ে আন্দোলনে নেমেছিল বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও । সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, "এই জাতীয় শিক্ষানীতির ফলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেবে । এটা একটা ভয়ানক উদ্যোগ ।" এই শিক্ষানীতির জেরের গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা থেকে দূরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি ৷