ETV Bharat / state

এ রাজ‌্যের গণবণ্টন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা কি সত্যিই আছে ! - খাদ্য দপ্তর

রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর ।

Public Distribution System
গণবণ্টন ব্যবস্থা
author img

By

Published : Aug 19, 2020, 10:28 AM IST

কলকাতা, ১৫ অগাস্ট : রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থা আদৌ কি স্বচ্ছ? বিষয়টি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে । গত কয়েক মাসে কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে বহু মানুষকে । রাজ্য সরকার রেশনিং সিস্টেম বা গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের কাছে চাল, গম বিনা পয়সায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার জন্য সব মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া যায়নি । তবে পর্যাপ্ত চালের যোগান রয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চালের সঙ্গে ডাল দেওয়া হবে দরিদ্র সীমার নিচে থাকা মানুষজনকে । কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা মতো সেই ডাল পায়নি রাজ্যবাসী । দু'মাস পিছিয়ে জুন মাস থেকে মুসুরির ডাল দেওয়া শুরু হয়েছিল । অগাস্ট মাস থেকে মুগ ডাল দেওয়ার কথা ।

একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে রাজ্যের খাদ্য দপ্তরে । কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার যৌথভাবে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের জন্য চালের ব্যবস্থা করেছে । সেই চাল বণ্টন নিয়ে অভিযোগ ছিল রাজ্যব্যাপী । গত কয়েক মাসে সরকারি ভরতুকি-যুক্ত খাদ্যশস্যের কালোবাজারি করার জন্য ১৪ জন রেশন ডিলারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । শোকজ় করা হয়েছে ৩৯০ জন রেশন ডিলারকে । অভিযোগ, সরকারি ভরতুকি যুক্ত খাদ্যদ্রব্য স্থানীয় খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন তাঁরা । রাজ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষার আওতাধীন সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ছয় কোটি এক লাখ । বহু মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে খাদ্য দপ্তর ইতিমধ্যেই ৬৯ জন রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করেছে । তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বেআইনি মজুদদারির । বেআইনিভাবে গ্রাহকদের সঙ্গে খাদ্যশস্যের ওজন নিয়ে কারচুপি করার অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে ৩০ জন রেশন ডিলারকে । উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান এবং আলিপুরদুয়ারে সবচেয়ে বেশি গণবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে খাদ্য দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছে । অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, গণবণ্টন ব্যবস্থায় সকলের জন্য খাদ্য সুনিশ্চিত করার প্রয়োজনে রাজ্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও কয়েকটি জায়গায় খামতি রয়ে গিয়েছে । কোরোনা ভাইরাসের আবহে ভেদাভেদহীনভাবে সকলের জন্য চাল এবং গম দেওয়া হচ্ছে । নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব মেনেই সার্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থা করা হয়েছে । যাদের রেশন কার্ড নেই, তাঁদের জন্য স্পেশাল কুপনের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রয়েছে । চলতি আর্থিক বছরে খারিফ মরশুমে ৩৮.৯৮ মিলিয়ন গম মজুদ রয়েছে । ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার গোডাউনে পর্যাপ্ত খাদ্য দ্রব্য রয়েছে ।

কেন্দ্রীয় সরকার ভরতুকি দিয়ে মুগ, মুসুরির ডাল এবং ছোলার ডাল-সহ চালের ব্যবস্থা করেছে দরিদ্র মানুষের জন্য । রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের উপযুক্ত সহায়তা না মেলায় বহু মানুষ খাদ্য সুরক্ষার আওতা থেকে বাদ যাচ্ছিলেন । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের জন্য খাদ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছেন । রাজ্যের কোনও মানুষ যাতে অনাহারে না মরেন, তার জন্য রাজ্য সরকার সকলের জন্য খাদ্যের প্রকল্প চালু করেছে ।" কোরোনা ভাইরাসের এই প্রতিকূল সময়ে রাজ্যের কোনও মানুষ অভুক্ত নেই বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ৮০.৮১ কোটি মানুষ গণবণ্টন ব্যবস্থার অধীনে রয়েছে । ইতিমধ্যেই কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যের বহু রেশন ডিলার । কোথাও কোথাও কোরোনায় মারাও গিয়েছেন রেশন ডিলার । তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার পঞ্চাশ লাখ টাকা বিমার ব্যবস্থা করুক বলে দাবি জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু । তাঁর আবেদন, দেশের যে সমস্ত রাজ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে রেশন তোলার ব্যবস্থা রয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার সেই পদ্ধতিতেই মানুষকে রেশন দিক, যতদিন না কোরোনা ভাইরাস মুক্ত হচ্ছে এ দেশ । গণবণ্টন ব্যবস্থায় পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি । তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছু জায়গায় পদ্ধতি এবং কল্পনার সঠিকভাবে রূপায়নে হয়নি । যেমন, সমগ্র দেশে পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৮টি রেশন দোকান রয়েছে । কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সেই সমস্ত রেশন দোকানের মাধ্যমে দেশের চাষিদের উন্নত মানের শস্যের বীজ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি । সরকারি ভরতুকি দেওয়া চাল, গমের কালোবাজারি ব্যাপকভাবে চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি । আগে রেশন দোকানদাররা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন । এখন এই লকডাউনের সময় দেখা যাচ্ছে, কিছু ক্রেতা বিনামূল্যে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য রেশনের মাধ্যমে নিয়ে সেগুলিকে মুদিখানা দোকানে, গম ভাঙানোর চাকি কলে এবং খোলা বাজারে বিক্রি করছে । এমন ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যের বহু জেলায় । খাদ্য দপ্তরের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ ইতিমধ্যেই বহু রেশন কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে । ভরতুকি-যুক্ত চাল এবং গম খোলাবাজারে বিক্রি করার অভিযোগে । কৃষি ব্যবস্থা, কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যে যন্ত্রপাতি কৃষকদের দিচ্ছেন তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশ্বম্ভর বসু ‌।

গণবণ্টন ব্যবস্থা

গত আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার চাল এবং গমের বাজেটের তিনভাগের এক ভাগ খরচ করেছে । মোট এক কোটি ৮৭ লক্ষ ৯৬৮ হাজার কোটি টাকা ভরতুকি দিয়েছে । বর্তমান আর্থিক বছরে ভরতুকির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে । কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় বিভিন্ন প্রকল্পে দেশের গরিব দরিদ্র মানুষের জন্য পর্যাপ্ত চাল এবং গমের ব্যবস্থা করেছে । পি এইচ এইচ, এস পি এইচ এইচ, সহ রাজ্য সরকারের আর কে এস ওয়াই-১ এবং ২ রেশন কার্ড খাদ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে মাথাপিছু যথাক্রমে পাঁচ কেজি চাল, ১৫ কেজি চাল পরিবার পিছু এবং ডালের ব্যবস্থা করা হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার এরাজ্যে এক কেজি করে মুসুরির ডাল দেওয়ার কথা বলেছিল । এপ্রিল এবং মে মাসে ডাল পায়নি রাজ্যবাসী । জুন মাসে মুসুরির ডাল পেয়েছেন তারা । অগাস্ট মাসে মুগ ডাল দেওয়া হবে এ রাজ্যে । অন্যান্য রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকেই গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকরা ডাল পাচ্ছেন । দু'মাস পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ডাল পাওয়ার ক্ষেত্রে । ছোলার ডাল দেওয়া হবে অগাস্ট মাস থেকে । নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী অন্ন যোজনায় দেশের মানুষকে চাল এবং ডাল দেওয়া হবে । এই কারণে খরচ আরও বাড়বে । পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার হিসেব না পাঠানো প্রকৃত ভরতুকির পরিমাণ বলতে পারেননি বিশ্বম্ভর বসু । তবে বর্তমানে এ-রাজ্যে দরিদ্র মানুষের জন্য প্রতি কেজি চালে ২৭ টাকা করে ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার । অন্যান্য সময় ২ টাকা কেজি দরের চালে ২৫ টাকা ভরতুকি দেয় রাজ্যের খাদ্য দপ্তর । গমের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে ভরতুকি দেওয়া হয় ।

খাদ্য দপ্তরের নিজস্ব ভিজিল্যান্স টিম সমগ্র কালোবাজারির ওপর নজরদারি চালাচ্ছে । পাশাপাশি প্রত্যেক খাদ্য অধিকর্তার নিজস্ব ভিজিল্যান্স টিম রয়েছে নজরদারি চালানোর জন্য । কালোবাজারির ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত বলে মনে করেন শাসকদলের রেশন সংগঠনের নেতা সমীরণ চক্রবর্তী । খাদ্য দপ্তরেও অভিযোগ জানানো যাবে রেশন সংক্রান্ত যেকোনও দুর্নীতি রোধে । কালোবাজারি এবং দুর্নীতি রুখতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সবকটি রেশন দোকানের বাইরে প্রত্যেক ক্রেতা কতটা পরিমাণে খাদ্যশস্য পাবেন, তার হিসেব দেওয়া থাকে । রেশন কার্ডের বিভিন্নতার হিসেবে । CCTV, GPS প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে রাজ্যের সর্বত্র । রেশন ডিলারদের উপযুক্ত কমিশনই পারে গণবণ্টন ব্যবস্থাকে কিছুটা স্বচ্ছ করতে, জানিয়েছেন সমীরণ চক্রবর্তী ।

কলকাতা, ১৫ অগাস্ট : রাজ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থা আদৌ কি স্বচ্ছ? বিষয়টি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে । গত কয়েক মাসে কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে বহু মানুষকে । রাজ্য সরকার রেশনিং সিস্টেম বা গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের কাছে চাল, গম বিনা পয়সায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার জন্য সব মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া যায়নি । তবে পর্যাপ্ত চালের যোগান রয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চালের সঙ্গে ডাল দেওয়া হবে দরিদ্র সীমার নিচে থাকা মানুষজনকে । কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা মতো সেই ডাল পায়নি রাজ্যবাসী । দু'মাস পিছিয়ে জুন মাস থেকে মুসুরির ডাল দেওয়া শুরু হয়েছিল । অগাস্ট মাস থেকে মুগ ডাল দেওয়ার কথা ।

একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে রাজ্যের খাদ্য দপ্তরে । কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার যৌথভাবে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের জন্য চালের ব্যবস্থা করেছে । সেই চাল বণ্টন নিয়ে অভিযোগ ছিল রাজ্যব্যাপী । গত কয়েক মাসে সরকারি ভরতুকি-যুক্ত খাদ্যশস্যের কালোবাজারি করার জন্য ১৪ জন রেশন ডিলারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । শোকজ় করা হয়েছে ৩৯০ জন রেশন ডিলারকে । অভিযোগ, সরকারি ভরতুকি যুক্ত খাদ্যদ্রব্য স্থানীয় খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন তাঁরা । রাজ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষার আওতাধীন সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ছয় কোটি এক লাখ । বহু মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে খাদ্য দপ্তর ইতিমধ্যেই ৬৯ জন রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করেছে । তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বেআইনি মজুদদারির । বেআইনিভাবে গ্রাহকদের সঙ্গে খাদ্যশস্যের ওজন নিয়ে কারচুপি করার অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে ৩০ জন রেশন ডিলারকে । উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান এবং আলিপুরদুয়ারে সবচেয়ে বেশি গণবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে খাদ্য দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছে । অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, গণবণ্টন ব্যবস্থায় সকলের জন্য খাদ্য সুনিশ্চিত করার প্রয়োজনে রাজ্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও কয়েকটি জায়গায় খামতি রয়ে গিয়েছে । কোরোনা ভাইরাসের আবহে ভেদাভেদহীনভাবে সকলের জন্য চাল এবং গম দেওয়া হচ্ছে । নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব মেনেই সার্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থা করা হয়েছে । যাদের রেশন কার্ড নেই, তাঁদের জন্য স্পেশাল কুপনের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রয়েছে । চলতি আর্থিক বছরে খারিফ মরশুমে ৩৮.৯৮ মিলিয়ন গম মজুদ রয়েছে । ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার গোডাউনে পর্যাপ্ত খাদ্য দ্রব্য রয়েছে ।

কেন্দ্রীয় সরকার ভরতুকি দিয়ে মুগ, মুসুরির ডাল এবং ছোলার ডাল-সহ চালের ব্যবস্থা করেছে দরিদ্র মানুষের জন্য । রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের উপযুক্ত সহায়তা না মেলায় বহু মানুষ খাদ্য সুরক্ষার আওতা থেকে বাদ যাচ্ছিলেন । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলের জন্য খাদ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছেন । রাজ্যের কোনও মানুষ যাতে অনাহারে না মরেন, তার জন্য রাজ্য সরকার সকলের জন্য খাদ্যের প্রকল্প চালু করেছে ।" কোরোনা ভাইরাসের এই প্রতিকূল সময়ে রাজ্যের কোনও মানুষ অভুক্ত নেই বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ৮০.৮১ কোটি মানুষ গণবণ্টন ব্যবস্থার অধীনে রয়েছে । ইতিমধ্যেই কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যের বহু রেশন ডিলার । কোথাও কোথাও কোরোনায় মারাও গিয়েছেন রেশন ডিলার । তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার পঞ্চাশ লাখ টাকা বিমার ব্যবস্থা করুক বলে দাবি জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু । তাঁর আবেদন, দেশের যে সমস্ত রাজ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে রেশন তোলার ব্যবস্থা রয়েছে, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার সেই পদ্ধতিতেই মানুষকে রেশন দিক, যতদিন না কোরোনা ভাইরাস মুক্ত হচ্ছে এ দেশ । গণবণ্টন ব্যবস্থায় পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি । তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছু জায়গায় পদ্ধতি এবং কল্পনার সঠিকভাবে রূপায়নে হয়নি । যেমন, সমগ্র দেশে পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৮টি রেশন দোকান রয়েছে । কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সেই সমস্ত রেশন দোকানের মাধ্যমে দেশের চাষিদের উন্নত মানের শস্যের বীজ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি । সরকারি ভরতুকি দেওয়া চাল, গমের কালোবাজারি ব্যাপকভাবে চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি । আগে রেশন দোকানদাররা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন । এখন এই লকডাউনের সময় দেখা যাচ্ছে, কিছু ক্রেতা বিনামূল্যে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য রেশনের মাধ্যমে নিয়ে সেগুলিকে মুদিখানা দোকানে, গম ভাঙানোর চাকি কলে এবং খোলা বাজারে বিক্রি করছে । এমন ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যের বহু জেলায় । খাদ্য দপ্তরের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ ইতিমধ্যেই বহু রেশন কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে । ভরতুকি-যুক্ত চাল এবং গম খোলাবাজারে বিক্রি করার অভিযোগে । কৃষি ব্যবস্থা, কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যে যন্ত্রপাতি কৃষকদের দিচ্ছেন তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশ্বম্ভর বসু ‌।

গণবণ্টন ব্যবস্থা

গত আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার চাল এবং গমের বাজেটের তিনভাগের এক ভাগ খরচ করেছে । মোট এক কোটি ৮৭ লক্ষ ৯৬৮ হাজার কোটি টাকা ভরতুকি দিয়েছে । বর্তমান আর্থিক বছরে ভরতুকির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে । কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় বিভিন্ন প্রকল্পে দেশের গরিব দরিদ্র মানুষের জন্য পর্যাপ্ত চাল এবং গমের ব্যবস্থা করেছে । পি এইচ এইচ, এস পি এইচ এইচ, সহ রাজ্য সরকারের আর কে এস ওয়াই-১ এবং ২ রেশন কার্ড খাদ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে মাথাপিছু যথাক্রমে পাঁচ কেজি চাল, ১৫ কেজি চাল পরিবার পিছু এবং ডালের ব্যবস্থা করা হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার এরাজ্যে এক কেজি করে মুসুরির ডাল দেওয়ার কথা বলেছিল । এপ্রিল এবং মে মাসে ডাল পায়নি রাজ্যবাসী । জুন মাসে মুসুরির ডাল পেয়েছেন তারা । অগাস্ট মাসে মুগ ডাল দেওয়া হবে এ রাজ্যে । অন্যান্য রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকেই গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকরা ডাল পাচ্ছেন । দু'মাস পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ডাল পাওয়ার ক্ষেত্রে । ছোলার ডাল দেওয়া হবে অগাস্ট মাস থেকে । নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী অন্ন যোজনায় দেশের মানুষকে চাল এবং ডাল দেওয়া হবে । এই কারণে খরচ আরও বাড়বে । পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার হিসেব না পাঠানো প্রকৃত ভরতুকির পরিমাণ বলতে পারেননি বিশ্বম্ভর বসু । তবে বর্তমানে এ-রাজ্যে দরিদ্র মানুষের জন্য প্রতি কেজি চালে ২৭ টাকা করে ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার । অন্যান্য সময় ২ টাকা কেজি দরের চালে ২৫ টাকা ভরতুকি দেয় রাজ্যের খাদ্য দপ্তর । গমের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে ভরতুকি দেওয়া হয় ।

খাদ্য দপ্তরের নিজস্ব ভিজিল্যান্স টিম সমগ্র কালোবাজারির ওপর নজরদারি চালাচ্ছে । পাশাপাশি প্রত্যেক খাদ্য অধিকর্তার নিজস্ব ভিজিল্যান্স টিম রয়েছে নজরদারি চালানোর জন্য । কালোবাজারির ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত বলে মনে করেন শাসকদলের রেশন সংগঠনের নেতা সমীরণ চক্রবর্তী । খাদ্য দপ্তরেও অভিযোগ জানানো যাবে রেশন সংক্রান্ত যেকোনও দুর্নীতি রোধে । কালোবাজারি এবং দুর্নীতি রুখতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সবকটি রেশন দোকানের বাইরে প্রত্যেক ক্রেতা কতটা পরিমাণে খাদ্যশস্য পাবেন, তার হিসেব দেওয়া থাকে । রেশন কার্ডের বিভিন্নতার হিসেবে । CCTV, GPS প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে রাজ্যের সর্বত্র । রেশন ডিলারদের উপযুক্ত কমিশনই পারে গণবণ্টন ব্যবস্থাকে কিছুটা স্বচ্ছ করতে, জানিয়েছেন সমীরণ চক্রবর্তী ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.