কলকাতা, 26 ডিসেম্বর: করোনা আবহের পর থেকে প্রত্যেকেই এখন কমবেশি স্বাস্থ্য সচেতন । কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষে সঠিক কত সংখ্যক মানুষ বা সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন বা তা নিয়ে চিন্তিত সেটি বর্তমানে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে । এটি আরেকবার প্রমাণিত হল গতকাল বড়দিনের রাতে যখন গোটা শহর কলকাতা পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ছিল, ঠিক সেই রাতেই মধ্য কলকাতার খাদ্যভবনের ভিতর একজন পুলিশকর্মী নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হলেন ।
যদিও কলকাতা শহরে কর্মরত পুলিশকর্মীর সার্ভিস রিভলভার থেকে আত্মঘাতী কিংবা খুনের ঘটনা এই প্রথম নয় । কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে বারবার ? এই ঘটনাগুলির নেপথ্যে কোন প্রকারের মানসিক অবসাদ কাজ করে ? এর সমাধানের রাস্তাই বা কী ? ইটিভি ভারতকে বিস্তারিত জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতা ।
তাঁর কথায়, "ভারতবর্ষে সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থাগুলি এখনও ভেবে উঠতে পারেনি যে তাদের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কীভাবে কাজ করা যায় । যদিও বাইরের দেশের বিভিন্ন সংস্থার দেখাদেখি ভারতবর্ষের বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা তাদের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনাচিন্তা খানিকটা শুরু করলেও সরকারি দফতরে এই চিন্তাভাবনা কার্যত বিরল । আর তার জন্যই এই প্রকারের ঘটনা বারংবার ঘটে চলেছে । একটি করে ঘটনা ঘটে আর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে । তারপরের একটি নতুন কেসের জন্য অপেক্ষাই থাকি আমরা ।"
তাঁর মতে, "এবার সরকারি বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই কর্মচারীদের শারীরিক সচেতনতার থেকেও মানসিক সচেতনতা নিয়ে ভাবনাচিন্তার সুযোগ বা সময় এখন চলে এসেছে । যে কোনও সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা যদি একজন করে মনোবিদ নিযুক্ত করে প্রতি বছর নিচু থেকে উঁচুতলার কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি জানতে চায় তবে সে ক্ষেত্রে নিচুতলার কর্মীদের একাধিক অভাব অভিযোগের কথা সামনে আসবে । আর সেগুলি সমাধানের মধ্যে দিয়েই এই মানসিক ব্যাধিকে চিরতরে বিদায় জানানো সম্ভব হবে ।"
সার্ভিস রিভলভারে পুলিশকর্মীর আত্মহত্যার ঘটনা:
- 2021 সালে 21 ডিসেম্বর ৷ হুগলিতে নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন পুলিশকর্মী ৷
- 10 জুন 2023 ৷ পার্ক সার্কাস এলাকায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার অফিসের সামনে নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি ছুড়ে প্রথমে এক তরুণীকে হত্যার পরে সেই রিভলবারের গুলিতেই আত্মঘাতী হন কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবল ।
- 20 অক্টোবর নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পুলিশকর্মী । পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় ।
- 19 ডিসেম্বর হরিদেবপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় এক পুলিশকর্মীর ঝুলন্ত দেহ । প্রত্যেকটির নেপথ্যেই ছিল মানসিক অবসাদ ৷
এই ঘটনাগুলি এড়াতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, প্রত্যেকটি পুলিশ ব্যারাক বা অন্যান্য সংস্থায় যদি একটি করে ড্রপবক্স দেওয়া হয় যেখানে পুলিশকর্মী বা সংস্থার কর্মীরা তাদের মনের ইচ্ছাগুলি নাম প্রকাশ না করেই লিখতে পারবে ৷ সেখানে কর্মীদের মানসিক যন্ত্রণা, চাওয়া-পাওয়া এইগুলি পড়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে সরকার ৷ তখনই এই সমস্যাকে জয় করা যাবে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক এই সমস্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পুলিশে নিয়োগ নেই । ফলে 10 জন পুলিশকর্মীর কাজ একজনকে দিয়ে করাতে হচ্ছে । ফলে তারা উঁচুতলার পুলিশ কর্মীদের ভয়ে নিজের মনের কথা জাহির করতে পারে না । পাশাপাশি পরপর কর্তব্য পালনে তারা সাংসারিক দিক দিয়েও অনেকে বিভিন্ন ঝামেলায় থাকে । সব ঝামেলা একত্রিত হয়ে এই ঘটনা ঘটছে বলে আমার ব্যক্তিগত মত । আমার মতে, প্রত্যেক নিচুতলার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে মাসে একবার করে তাদের মনের খুলে কথা বলতে দেওয়া খুব প্রয়োজন ।"
আরও পড়ুন :
1 খাদ্যভবনের ভিতরে সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল
2 পুরুষদের থেকে কম সুখী মহিলারা, কেন ? ভালো থাকতে কী করবেন ?
3 মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন কনস্টেবল চোডুপ লেপচা ! পার্ক সার্কাস শুট-আউটে প্রশ্ন একাধিক