ETV Bharat / state

পড়ুয়ার সংখ্যার দ্বিগুণ চাওয়া হচ্ছে জুতো-ব্যাগ ! হিসেবের 'গরমিলে' ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী - education department

জেলার শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের পাঠানো তথ্য ও দেওয়া হিসেব নিয়ে ক্ষুব্ধ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শিক্ষা সচিব । কোনও জেলায় যা পড়ুয়া তার থেকে বেশি সংখ্যক জুতো-জামা চাওয়া হচ্ছে । আবার কোথাও পড়ুয়ার সংখ্যার তুলনায় কম চাওয়া হয়েছে প্রকল্পের জিনিসপত্র । হিসেবে কেন এত গরমিল ? সমস্যা কোথায় হচ্ছে তা নিয়ে জেলা থেকে আসা আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব ও শিক্ষামন্ত্রী ।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়
author img

By

Published : Jul 26, 2019, 3:15 AM IST

Updated : Jul 26, 2019, 3:48 AM IST

কলকাতা, 26 জুলাই : নজরুল মঞ্চে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের রাজ্য স্তরের পর্যালোচনা বৈঠকে মেজাজ হারালেন রাজ্যের শিক্ষা সচিব মনীষ জৈন । প্রকল্পের হিসেবে একাধিক জেলার রিপোর্টে গরমিল দেখা গেছে । তা নিয়ে জেলা থেকে আসে আধিকারিকদের কাছে জবাব চান তিনি । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও । তাঁর সামনেই হিসেবের গরমিল নিয়ে জবাব চান জেলা পরিদর্শক ও সার্কেল ইনস্পেক্টরদের কাছে । মনীষবাবু জেলা আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, কোথাও স্টুডেন্ট অতিরিক্ত ব‍্যাগ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও পড়ুয়া সংখ্যার অনুপাতে কম ব‍্যাগ চাওয়া হয়েছে । এমন কেন হচ্ছে? এই গরমিলের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও‌ । তিনি নজরুল মঞ্চে হওয়া তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই বিষয়টি তুলে ধরেন ।

tmc primay
নজরুল মঞ্চে সভা

বৈঠক চলাকালীন মনীষবাবু হুগলি জেলাকে প্রশ্ন করেন, ক্লাস সিক্সে 36 হাজার পড়ুয়া আছে । কিন্তু, টেক্সট বই চাওয়া হয়েছে 64 হাজার । কেন দ্বিগুণ বই চাওয়া হল? 63 হাজার ব্যাগের বদলে কেন 84 হাজার ব‍্যাগ চাওয়া হল? হাওড়া জেলা পরিদর্শককে এই প্রশ্ন করেন তিনি । সঙ্গে জানিয়ে দেন এই টাকা সরকার দেয় । কেন এত বেশি ব্যাগ লাগছে তা নিয়ে আশ্চর্য তিনি । একইভাবে নদিয়া জেলায় ক্লাস ফাইভের 68 হাজার 502 পড়ুয়া আছে বলে দাবি করেন জেলা পরিদর্শক । কিন্তু, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পড়ুয়া 62 হাজারের কিছু বেশি রয়েছে । অথচ জুতো ও ব্যাগ চাওয়া হয়েছে 79 হাজার । কেন এত বেশি চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব । পশ্চিম মেদিনীপুরে 84 হাজার ব্যাগ পাঠানো হয়েছে । কিন্তু, পড়ুয়া আছে 65 হাজার । বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ব্যাগ দেওয়া হয় না । সব খবর শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষা সচিব । উলটপুরাণ আবার দক্ষিণ 24 পরগনায় । সেখানে 1 লাখ 50 হাজার পড়ুয়া আছে । অথচ ব্যাগ চাওয়া হয়েছে মাত্র 53 হাজার । এত কম কেন ব্যাগ চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব । বিভিন্ন প্রকল্পের জিনিসপত্রের গরমিল ছাড়াও নানা বিষয়ে জেলা পরিদর্শকদের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি । যেমন, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় একটা স্কুল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে । কেন বন্ধ তা জেলা পরিদর্শক জানেন না । কী সমস্যা রয়েছে তা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলে দেখে স্কুলটি খোলার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মনীষবাবু ।

গরমিলের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও । প্রথমে তিনি তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, "এখানে কোথাও কোথাও বড্ড বেশি অনিয়ম দেখা যাচ্ছে । আগে তো প্রচুর হত । এখন আমরা নিজেরা চেষ্টা করে অনেকটা কমিয়েছি । ক্লাস ফাইভের একটা গল্প বলি । জুতো নেবেন 80 হাজার, জামাকাপড় হল 1 লাখ । এটা কী করে হয় আমি জানি না । এই আজগুবি হিসেবগুলো দিয়েই তো আগের সরকার চলেছে ।"

tmc primary teachers
তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভা

তারপরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন আধিকারিকদের কাজে তিনি খুশি নন । তিনি বলেন, "সঠিকভাবে সরকারি যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ঠিকমতো তাঁরা করছেন কি না, স্কুলগুলো পাচ্ছে কি না শিক্ষকের সংখ‍্যা কত, ছাত্রদের সংখ্যা কত, অ-শিক্ষক কর্মচারীদের সংখ্যা কত সব মিলিয়ে আমরা বিদ‍্যালয় শিক্ষার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি । আমরা তাঁদের বলেছি, কোনওরকম নিয়োগ করার আগে আপনাদের দেখতে হবে কোন স্কুলে কত ছাত্র আছে । অথচ তাদের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে রিপোর্টিংটা ঠিক হচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রী এটাই বলেছিলেন, আমরা যা দিই তা মানুষ ঠিক মতো পাচ্ছে কি না সেটা দেখা দরকার । এবারে ভুলে গিয়েছি সমস্ত ইউনিফর্ম টেন্ডারের মাধ্যমে সেল্ফ হেল্প গ্রুপকে দিতে হবে । অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না । এটা অনলাইনে করার চেষ্টা করছি। কত শিক্ষক নিয়োগ হবে, কত শিক্ষক দরকার সেটা তখনই ঠিক হবে যখন এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষক আছেন তাঁদের উপযুক্ত ব‍্যবহার করার জন্য ট্রান্সফার করা হবে ।"

প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস চাওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "এতদিনের যারা সরকার ছিলেন তাঁরা কি এইগুলো করেননি? আমরা ধরছি বলে আপনারাও জানতে পারছেন । আমরা ধরি, দেখি কোথায় কী হচ্ছে । প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"

partha
বক্তব্য রাখছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়

পর্যালোচনা বৈঠকের পর তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রমোশন নীতির কথা বলেন । সভার আয়োজনকারী সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র প্রোমোশনের দাবি তোলেন । সেই দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "আমরা একটা প্রমোশন পলিসি তৈরির সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়েছি । প্রমোশন পলিসি আমরা করব । খসড়াও তৈরি হচ্ছে এবং পলিসি আকারে সেটা বের হবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই । আর একটা জিনিস যেটা প্রমোশন পলিসিরই অন্তর্ভুক্ত তা হল আপার প্রাইমারিতে কিছু সংরক্ষণ প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য করা হবে । তাঁদের জন্য 10 শতাংশ বা 15 শতাংশ সংরক্ষণ করা যায় প্রোমোশনের মধ‍্য দিয়ে । সুপ্রিম কোর্টও এতে সহমত ।"

এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে জানান শিক্ষামন্ত্রী ‌। তিনি জানান, বেসরকারি স্কুলের ফি কমানো নিয়ে ভবিষ্যতে যদি কিছু করা যায় তার চেষ্টা করা হবে । স্কুলে ড্রপ আউট সংখ‍্যা কমাতে কয়েকটি স্কুলে শনি বা রবিবার স্পেশাল ক্লাস নেওয়া হবে ।

কলকাতা, 26 জুলাই : নজরুল মঞ্চে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের রাজ্য স্তরের পর্যালোচনা বৈঠকে মেজাজ হারালেন রাজ্যের শিক্ষা সচিব মনীষ জৈন । প্রকল্পের হিসেবে একাধিক জেলার রিপোর্টে গরমিল দেখা গেছে । তা নিয়ে জেলা থেকে আসে আধিকারিকদের কাছে জবাব চান তিনি । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও । তাঁর সামনেই হিসেবের গরমিল নিয়ে জবাব চান জেলা পরিদর্শক ও সার্কেল ইনস্পেক্টরদের কাছে । মনীষবাবু জেলা আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, কোথাও স্টুডেন্ট অতিরিক্ত ব‍্যাগ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও পড়ুয়া সংখ্যার অনুপাতে কম ব‍্যাগ চাওয়া হয়েছে । এমন কেন হচ্ছে? এই গরমিলের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও‌ । তিনি নজরুল মঞ্চে হওয়া তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই বিষয়টি তুলে ধরেন ।

tmc primay
নজরুল মঞ্চে সভা

বৈঠক চলাকালীন মনীষবাবু হুগলি জেলাকে প্রশ্ন করেন, ক্লাস সিক্সে 36 হাজার পড়ুয়া আছে । কিন্তু, টেক্সট বই চাওয়া হয়েছে 64 হাজার । কেন দ্বিগুণ বই চাওয়া হল? 63 হাজার ব্যাগের বদলে কেন 84 হাজার ব‍্যাগ চাওয়া হল? হাওড়া জেলা পরিদর্শককে এই প্রশ্ন করেন তিনি । সঙ্গে জানিয়ে দেন এই টাকা সরকার দেয় । কেন এত বেশি ব্যাগ লাগছে তা নিয়ে আশ্চর্য তিনি । একইভাবে নদিয়া জেলায় ক্লাস ফাইভের 68 হাজার 502 পড়ুয়া আছে বলে দাবি করেন জেলা পরিদর্শক । কিন্তু, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পড়ুয়া 62 হাজারের কিছু বেশি রয়েছে । অথচ জুতো ও ব্যাগ চাওয়া হয়েছে 79 হাজার । কেন এত বেশি চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব । পশ্চিম মেদিনীপুরে 84 হাজার ব্যাগ পাঠানো হয়েছে । কিন্তু, পড়ুয়া আছে 65 হাজার । বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ব্যাগ দেওয়া হয় না । সব খবর শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষা সচিব । উলটপুরাণ আবার দক্ষিণ 24 পরগনায় । সেখানে 1 লাখ 50 হাজার পড়ুয়া আছে । অথচ ব্যাগ চাওয়া হয়েছে মাত্র 53 হাজার । এত কম কেন ব্যাগ চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব । বিভিন্ন প্রকল্পের জিনিসপত্রের গরমিল ছাড়াও নানা বিষয়ে জেলা পরিদর্শকদের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি । যেমন, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় একটা স্কুল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে । কেন বন্ধ তা জেলা পরিদর্শক জানেন না । কী সমস্যা রয়েছে তা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলে দেখে স্কুলটি খোলার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মনীষবাবু ।

গরমিলের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও । প্রথমে তিনি তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, "এখানে কোথাও কোথাও বড্ড বেশি অনিয়ম দেখা যাচ্ছে । আগে তো প্রচুর হত । এখন আমরা নিজেরা চেষ্টা করে অনেকটা কমিয়েছি । ক্লাস ফাইভের একটা গল্প বলি । জুতো নেবেন 80 হাজার, জামাকাপড় হল 1 লাখ । এটা কী করে হয় আমি জানি না । এই আজগুবি হিসেবগুলো দিয়েই তো আগের সরকার চলেছে ।"

tmc primary teachers
তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভা

তারপরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন আধিকারিকদের কাজে তিনি খুশি নন । তিনি বলেন, "সঠিকভাবে সরকারি যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ঠিকমতো তাঁরা করছেন কি না, স্কুলগুলো পাচ্ছে কি না শিক্ষকের সংখ‍্যা কত, ছাত্রদের সংখ্যা কত, অ-শিক্ষক কর্মচারীদের সংখ্যা কত সব মিলিয়ে আমরা বিদ‍্যালয় শিক্ষার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি । আমরা তাঁদের বলেছি, কোনওরকম নিয়োগ করার আগে আপনাদের দেখতে হবে কোন স্কুলে কত ছাত্র আছে । অথচ তাদের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে রিপোর্টিংটা ঠিক হচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রী এটাই বলেছিলেন, আমরা যা দিই তা মানুষ ঠিক মতো পাচ্ছে কি না সেটা দেখা দরকার । এবারে ভুলে গিয়েছি সমস্ত ইউনিফর্ম টেন্ডারের মাধ্যমে সেল্ফ হেল্প গ্রুপকে দিতে হবে । অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না । এটা অনলাইনে করার চেষ্টা করছি। কত শিক্ষক নিয়োগ হবে, কত শিক্ষক দরকার সেটা তখনই ঠিক হবে যখন এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষক আছেন তাঁদের উপযুক্ত ব‍্যবহার করার জন্য ট্রান্সফার করা হবে ।"

প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস চাওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "এতদিনের যারা সরকার ছিলেন তাঁরা কি এইগুলো করেননি? আমরা ধরছি বলে আপনারাও জানতে পারছেন । আমরা ধরি, দেখি কোথায় কী হচ্ছে । প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"

partha
বক্তব্য রাখছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়

পর্যালোচনা বৈঠকের পর তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রমোশন নীতির কথা বলেন । সভার আয়োজনকারী সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র প্রোমোশনের দাবি তোলেন । সেই দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "আমরা একটা প্রমোশন পলিসি তৈরির সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়েছি । প্রমোশন পলিসি আমরা করব । খসড়াও তৈরি হচ্ছে এবং পলিসি আকারে সেটা বের হবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই । আর একটা জিনিস যেটা প্রমোশন পলিসিরই অন্তর্ভুক্ত তা হল আপার প্রাইমারিতে কিছু সংরক্ষণ প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য করা হবে । তাঁদের জন্য 10 শতাংশ বা 15 শতাংশ সংরক্ষণ করা যায় প্রোমোশনের মধ‍্য দিয়ে । সুপ্রিম কোর্টও এতে সহমত ।"

এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে জানান শিক্ষামন্ত্রী ‌। তিনি জানান, বেসরকারি স্কুলের ফি কমানো নিয়ে ভবিষ্যতে যদি কিছু করা যায় তার চেষ্টা করা হবে । স্কুলে ড্রপ আউট সংখ‍্যা কমাতে কয়েকটি স্কুলে শনি বা রবিবার স্পেশাল ক্লাস নেওয়া হবে ।

Intro:কলকাতা, 25 জুলাই: আজ নজরুল মঞ্চে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের রাজ্য স্তরের পর্যালোচনা বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন সহ স্কুল শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা। উপস্থিত ছিলেন প্রতিটি জেলার জেলা পরিদর্শক ও সার্কেল ইনস্পেক্টররা। বৈঠকে শুরু থেকেই মেজাজ হারান শিক্ষা সচিব মনীশ জৈন। কারণ, প্রকল্পের হিসেবে একাধিক জেলার রিপোর্টে গরমিল দেখা গেছে। কোথাও স্টুডেন্ট অতিরিক্ত ব‍্যাগ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও পড়ুয়া সংখ্যার অনুপাতে কম ব‍্যাগ চাওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ জেলা পরিদর্শকরাই এটা ও অন্যান্য একাধিক কারণে ক্ষোভের মুখে পড়েন। এই গরমিলের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও‌। তিনি আজই নজরুল মঞ্চে হওয়া তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই বিষয়টি তুলে ধরেন।


Body:বৈঠক চলাকালীন শিক্ষা সচিব হুগলি জেলাকে প্রশ্ন করেন ষষ্ঠ শ্রেণীতে 36 হাজার পড়ুয়া আছে, কিন্তু টেক্সট বই চাওয়া হয়েছে 64 হাজার। কেন দ্বিগুণ বই চাওয়া হল? 63 হাজার ব্যাগের বদলে কেন 84 হাজার ব‍্যাগ চাওয়া হল? হাওড়া জেলা পরিদর্শককে এই প্রশ্ন করেন তিনি। সঙ্গে জানিয়ে দেন এই টাকা সরকার দেয়। কেন এত বেশি ব্যাগ লাগছে তা নিয়ে আশ্চর্য তিনি। একইভাবে নদীয়া জেলায় পঞ্চম শ্রেণিতে 68 হাজার 502 পড়ুয়া আছে বলে দাবি করেন জেলা পরিদর্শক। কিন্তু, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পড়ুয়া 62 হাজারের কিছু বেশি রয়েছে। অথচ জুতো এবং ব্যাগ চাওয়া হয়েছে 79 হাজার। কেন এত বেশি চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন মণীশ জৈন। পশ্চিম মেদিনীপুরে 84 হাজার ব্যাগ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, পড়ুয়া আছে 65 হাজার। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ব্যাগ দেওয়া হয় না। সব খবর শিক্ষা মন্ত্রীকে জানানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষা সচিব। উলটপুরাণ আবার দক্ষিণ 24 পরগনায়। সেখানে 1 লক্ষ 50 হাজার পড়ুয়া আছে। অথচ ব্যাগ চাওয়া হয়েছে 53 হাজার। এত কম কেন ব্যাগ চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব। বিভিন্ন প্রকল্পের জিনিসপত্রের গরমিল ছাড়াও নানা বিষয়ে জেলা পরিদর্শকদের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন শিক্ষা সচিব। যেমন, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় একটা স্কুল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। কেন বন্ধ তা জেলা পরিদর্শক জানেন না। কী সমস্যা রয়েছে তা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলে দেখে স্কুলটি খোলার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন মণীশ জৈন‌।

গরমিলের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। প্রথমে তিনি তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, "এখানে কোথাও কোথাও বড্ড বেশি অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। আগে তো প্রচুর হতো। এখন আমরা নিজেরা চেষ্টা করে করে অনেকটা কমেছে। ক্লাস ফাইভের একটা গল্প বলি। জুতো নেবেন 80 হাজার, জামাকাপড় হল 1 লক্ষ। এটা কী করে হয় আমি জানি না। এই আজগুবি হিসেবগুলো দিয়েই তো আগের সরকার চলেছে।"

তারপরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন আধিকারিকদের কাজে তিনি খুশি নন। তিনি বলেন, "সঠিকভাবে সরকারি যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ঠিকমতো তাঁরা করছেন কিনা, স্কুলগুলো পাচ্ছে কিনা শিক্ষকের সংখ‍্যা কতো, ছাত্রদের সংখ্যা কতো, অ-শিক্ষক কর্মচারীদের সংখ্যা কতো সব মিলিয়ে আমরা বিদ‍্যালয় শিক্ষার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা তাঁদেরকে বলেছি, কোনও রকম নিয়োগ করবার আগে আপনাদের দেখতে হবে কোন স্কুলে কতো ছাত্র আছে। আমরা তাঁদেরকে বলেছি, কোনোরকম নিয়োগ করবার আগে আপনাদের দেখতে হবে কোন স্কুলে কতো ছাত্র-ছাত্রী আছে, কতো শিক্ষক আছে এবং পরিকাঠামোগত কোনো উন্নয়নের দরকার আছে কিনা। তাদের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে তাদের রিপোর্টিংটা ঠিক হচ্ছে না। বই ঠিকমতো যাচ্ছে কিনা, সবাই বই পাচ্ছে কিনা। মুখ্যমন্ত্রী এটাই বলেছিলেন যে, আমরা যা দিই তা মানুষ ঠিকমতন পাচ্ছে কিনা দেখা দরকার। এবারে ভুলে গিয়েছি সমস্ত ইউনিফর্ম টেন্ডারের মাধ্যমে সেল্ফ হেল্প গ্রুপকে দিতে হবে। অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না। এটা অনলাইনে করার চেষ্টা করছি। কতো শিক্ষক নিয়োগ হবে, কতো শিক্ষক দরকার সেটা তখনই ঠিক হবে যখন এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষক আছেন তাঁদের উপযুক্ত ব‍্যবহার করার জন্য ট্রান্সফার করা হবে।" প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস চাওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "এতদিনের যারা সরকার ছিলেন তাঁরা কি এইগুলো করেননি। আমরা ধরছি বলে আপনারাও জানতে পারছেন। আমরা ধরি, দেখি কোথায় কী হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাঁদেরকে বলা হয়েছে।"

এদিন পর্যালোচনা বৈঠকের পর তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রমোশন নীতির কথা বলেন। সভার আয়োজনকারী সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র প্রোমোশনের দাবি তোলেন। সেই দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "আমরা একটা প্রমোশন পলিসি তৈরি করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়েছি। প্রমোশন পলিসি আমরা করব। অলরেডি আমাদের খসড়া তৈরি হচ্ছে এবং পলিসি আকারে সেটা বের হবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই। আর একটা জিনিস যেটা প্রমোশন পলিসিতেই অন্তর্ভুক্ত যে, আপার প্রাইমারিতে কিছু সংরক্ষণ প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য যাদের যোগ্যতা আছে, তাঁদের জন্য 10 শতাংশ বা 15 শতাংশ সংরক্ষণ করা যায় প্রোমোশনের মধ‍্য দিয়ে। সুপ্রিম কোর্টও এটায় সহমত।"

এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে জানান শিক্ষামন্ত্রী‌। তিনি জানান, বেসরকারি স্কুলের ফি কমানো নিয়ে ভবিষ্যতে যদি কিছু করা যায় তার চেষ্টা করা হবে, স্কুলে ড্রপ আউট সংখ‍্যা কমাতে বেশ কয়েকটি স্কুলে শনি বা রবিবার স্পেশাল ক্লাস নেওয়া হবে, পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকে আনা হবে, প্রাক-প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য যুদ্ধ পোশাকের ব্যবস্থা করা হবে, মিউচ্যুয়াল ট্রান্সফার শুরু করা হবে।



Conclusion:
Last Updated : Jul 26, 2019, 3:48 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.