কলকাতা, 18 অগস্ট: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অতি-বাম বিপ্লবী ছাত্র ফেডারেশন (আরএসএফ) এবং বিজেপির যুব মোর্চার কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের একদিন পর শুক্রবার তাঁর উপর 'পরিকল্পিত আক্রমণ এবং খুনের চেষ্টা'-এর অভিযোগে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর দাবি, তিনি যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে যুব মোর্চার বিক্ষোভে বক্তৃতা দেওয়ার পর চলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত আততায়ীর একটি দল তাঁর উপর আক্রমণ চালায় ৷ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, আট জনের দুষ্কৃতীর একটি দল তাঁর উপর হামলা চালায় ৷ এমনকী তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা হয় বলেও লিখিত অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু ৷ একই সঙ্গে, আরএসএফ নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের তরফেই এই হামলা চালানো হয়েছে তাঁর উপর বলেও দাবি করেছেন তিনি ৷
শুভেন্দু টুইটে লিখেছেন, "আমি এই ঘটনার বিষয়ে এফআইআর দায়ের করেছি ৷" তিনি বলেন, "বক্তৃতায় তাদের ভণ্ডামি বলেছি তা সংগঠনের সদস্যরা পছন্দ করেননি। এই লোকেরা এমন একটি দলের অংশ যারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশবিরোধী এবং অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া তৈরি করেছে ৷ তারা প্রতিষ্ঠান বিরোধী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাদর্শকে আশ্রয় করে চলছে ৷ সবসময় এরা সরকারের সমালোচনা করে, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও আঁকড়ে পড়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত সব সুবিধাগুলি উপভোগ করতে থাকে।"
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, তাঁর উপর হুমকি থাকার জেরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁকে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিয়েছে ৷ তিনি এদিন দাবি করেছেন, যুব মোর্চার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার পর স্লোগান দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার সময় হঠাৎ সাত-আটজন লোক তাঁর উপর হামলা চালায়। পাশাপাশি তাঁকে কালো পতাকা দেখানোর সঙ্গেই হামলাকারীরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে পাথর ছুঁড়েছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন তিনি ৷ যদিও শুভেন্দুর দাবি, তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা সময়মত হস্তক্ষেপ করার ফলেই পরিস্থিতি থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন।
শুভেন্দু বলেন, "আমি জানতে পেরেছি যে ওই হামলাকারীরা ভারত সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ নকশাল সংগঠন আরএসএফ-এর সমর্থক ছিল ৷ যদিও আমি তাদের নাম জানি না তবে তাদের দেখলে সনাক্ত করতে পারব ৷" অন্যদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই 8-বি বাস স্ট্যান্ডের সামনে বিজেপি যুব মোর্চার ধরনা মঞ্চ খুলে দিল পুলিশ ৷ আর তার জেরেই ফের একবার ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় যাদবপুর এলাকায় ৷ শুক্রবার বিজেপি যুব মোর্চার ধরনা মঞ্চ পুলিশের নির্দেশে খুলে দেওয়া হয়। আর পুলিশের তরফে মঞ্চ খোলা শুরু হতেই যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা মঞ্চ খুলতে বাধা দেয় পুলিশকে। যা নিয়ে প্রাথমিক তর্কাতর্কি শেষে ধস্তাধস্তি শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হোস্টেলে 18 অনূর্ধ্ব পড়ুয়ার রহস্য মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। সেই ঘটনার প্রতিবাদে গত 16 থেকে আগামী 19 অগস্ট পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে 8-বি বাস স্ট্যান্ডের কাছে বিজেপি যুব মোর্চার ধরনা কর্মসূচির আয়োজন করা হয় ৷ বৃহস্পতিবার সেই মঞ্চেই হাজির হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ সেখান থেকেই যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে আগামী কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন তিনি ৷ কিন্তু এদিন বিজেপি যুব মোর্চার সেই ধরনা মঞ্চ খুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ। তবে মঞ্চ খোলার সময় তীব্র প্রতিবাদ জানায় যুব মোর্চা।
আরও পড়ুন: রহস্য উন্মোচনে ধৃত ছাত্র সপ্তককে হস্টেলে নিয়ে গেল পুলিশ, চলছে যাদবপুরের ঘটনার পুনর্নির্মাণ
বিজোপি যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা পুলিশকে বাধা দিলে এরপর শুরু হয়ে যায় দুই পক্ষের মধ্যে প্রবল ধস্তাধস্তি। পুলিশ সেখান থেকে যুব মোর্চার একাধিক কর্মী-সমর্থকদের আটকও করে। বিজেপি সূত্রে খবর, যুব মোর্চার ধরনা মঞ্চ থেকে পুলিশ সংগঠনের কর্মীদের বলপূর্বক সরিয়ে দিতে থাকে। পুলিশ 12 জন যুব মোর্চা কর্যকর্তাদের আটক করেছে বলেও জানিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরনা কর্মসূচির জন্য পুলিশের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বিজেপির তরফে। যদিও অনুমতি ছাড়াই চলছিল এই ধরনা কর্মসূচি। অনুমতি ছাড়াই গত দু'দিন তাঁদের প্রতিবাদ চালাতে থাকে। তারপরও অবশ্য জোর করে মঞ্চ খুলে দেয় পুলিশ ৷