কলকাতা, 5 অগস্ট : পুজোর বাকি প্রায় দু'মাস ৷ বিগত বেশ কিছু দিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি চলছে ৷ বাদ যায়নি কলকাতাও ৷ প্রতিমা তৈরির মরশুমে এই বৃষ্টিতে তছনছ কলকাতার কুমোরটুলি ৷ সমস্যায় মৃৎশিল্পীরা ৷
বৃষ্টিতে বেশির ভাগ কাঁচা মাটির মূর্তি শুকোচ্ছে না । রোদ উঠলে মূর্তিগুলিকে শুকিয়ে নতুন করে মাটির প্রলেপ দিতে হবে ৷ কুমোরটুলির ঘিঞ্জি অলিগলিতে কোথাও রাস্তায় কোনওরকমে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে মূর্তি, সব মূর্তি ঘরে রাখা সম্ভব নয় ৷ আর লকডাউনে বহু শিল্পী বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৷ তাই কারিগরের সংখ্যাও কম এবার ৷ কী করে সময়ের মধ্যে শেষ করবেন প্রতিমা, সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিল্পীরা ৷
মৃৎশিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল বলেন, "নিম্নচাপটা তো একদিনের নয় । প্রায় 8-9 দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি হওয়ার জন্য একজন কারিগর একটা ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে পারছেন না । সবচেয়ে বড় কথা আমাদের এই ঘরগুলি প্রায় ১০০ বছরের পুরানো । এই ঘরগুলি রিমডেলিং হয়নি ।" তাঁর পূর্বপুরুষেরা যে ভাবে ঘরগুলি তৈরি করে গিয়েছিলেন, এখনও সে ভাবে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি । কিন্তু এতে বৃষ্টির জল চারদিক থেকে ঢুকে পড়ায় প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । কোথাও ঠাকুরের হাতে বৃষ্টির জল লেগে হাত খুলে যাচ্ছে, কোথাও বা পা । সব প্রতিমা ঘরে রাখার জায়গা নেই, তাই কিছু প্রতিমা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে বাইরে রাখতে হয়েছে বলে জানালেন মৃৎশিল্পী ৷
আরও পড়ুন : Weather Forecast : আজ ও কাল অব্যাহত থাকবে বৃষ্টির দাপট
কুমোরটুলির আরেক মৃৎশিল্পী তপন পাল বলেন, "ঠাকুরের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে । নিম্নচাপের বৃষ্টির ফলে যে ঠাকুরগুলির কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেই ঠাকুরগুলিতেও আবার কাজ করতে হচ্ছে । এতে আমদের লেবার খরচ আরও বাড়ছে ৷"
সিদ্ধার্থশংকর রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কুমোরটুলির এই পরিকাঠামো পাল্টে নতুন করে স্থায়ী ছাউনি তৈরির ভাবনা চিন্তা হয়েছিল, জানালেন ইন্দ্রজিৎ পাল ৷ আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি ৷ কিন্তু এ নিয়ে খুব একটা আক্ষেপ নেই তাঁর ৷ কারণ এই কাদামাটি মাখা সরু গলি, গলির দু'ধারে দাঁড় করানো খড়ের কাঠামো, অসম্পূর্ণ মাটির মূর্তি, ঘুপচি ঘরে হলদে আবছা আলোয় কারিগরের তুলির টান, সব মিলিয়ে কলকাতার কুমোরপাড়ার একটা আলাদা আকর্ষণ আছে, ঐতিহ্য আছে, গন্ধ আছে ৷ সেই টানে ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের চিত্রগ্রাহকরা, সিনেমার শুটিংও হয় এখানে ৷
তাই মাঝে মধ্যে সমস্যায় পড়লে মাথার উপর কংক্রিটের স্থায়ী ছাউনির কথা মনে হলেও এই ঐতিহ্য বদলের পক্ষে সায় নেই ইন্দ্রজিতের মতো বহু মৃৎশিল্পীর ৷ আর এই এত বড় আস্তানা অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে গিয়ে জায়গার পুনর্নির্মাণেও 2-3 বছর সময় লেগে যাবে ৷ সেই সময় কোথায় কাজ করবেন শিল্পীরা ? তাই মূর্তি ভিজুক, হাত গলে যাক, তবু এমনি করে যায় যদি দিন, যাক না মনোভাব শিল্পীরা ৷