ETV Bharat / state

রাজ্যে সংখ্যালঘু জোটের হাওয়া, চাপে মমতার ভোট ব্যাঙ্ক - আব্বাস সিদ্দিকির দল

এখনও পর্যন্ত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে রাজ্যের প্রায় 44 টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার । এর মধ্যে রয়েছে দুই 24 পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো বেশ কিছু জেলার মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি ।

minority alliance in West Bengal
ছবি
author img

By

Published : Jan 21, 2021, 10:39 PM IST

Updated : Jan 21, 2021, 10:44 PM IST

কলকাতা, 21 জানুয়ারি : বাইরের রাজ্যগুলিতে চল থাকলেও বাংলায় এই ধরনের ট্রেন্ড কিন্তু একেবারে নতুন । কোনও ধর্মগুরুর তৈরি রাজনৈতিক দল বাংলার মানুষ এর আগে সামনে থেকে দেখেননি । এবার সেই কাজটিই করে দেখালেন আব্বাস সিদ্দিকি । ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন নিজের দল । ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট । ধর্মগুরুর হাত ধরে তৈরি হলেও দলের নামকরণে কিন্তু থাকছে না কোনও ধর্মীয় সুরসুরি । বরং, দলকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে তুলে ধরা হবে । এমনটাই দাবি আব্বাস সিদ্দিকির ।

জল্পনা বেশ অনেকদিন ধরেই চলছিল । বেশ কয়েকবার দল ঘোষণার কথা বলেও যেন শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠছিল না । প্রথমে গত বছরের ডিসেম্বরে, তারপর জানুয়ারির শুরুর দিকে... দু'বার দল ঘোষণার দিন ঠিক হয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছিল আব্বাস সিদ্দিকিকে । অবশেষে আজ পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ী দল ঘোষণা করলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা । অনেকেই বলতে পারেন, ভোটের মাস দুই-তিন আগে একটা নতুন দল কতটা আর প্রভাব ফেলতে পারে ! কিন্তু রাজনীতির সমীকরণ কিন্তু অন্য হিসাব দিচ্ছে ।

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার নতুন দল ঘোষণা নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা । বিশেষত, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং উত্তর 24 পরগনা একটি অংশের নির্বাচনে প্রক্রিয়ায় এর আগেও একাধিকবার নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় আসতে দেখা গিয়েছে মুসলিম ভোটারদের । দক্ষিণ 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু এলাকাকেও বাদ দিলে চলবে না । এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের উপর আব্বাস সিদ্দিকির দল বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা ।

আরও পড়ুন : বিজেপির রিমোট দ্বারা পরিচালিত মিম, যেমন নাচাবে তেমন নাচবে : সিদ্দিকুল্লা

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার সমর্থন দীর্ঘদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই ছিল । ফুরফুরা শরিফের সমর্থনের জোরেই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের একটি বড় অংশ এতদিন ঘাসফুলের ঝুলিতে গিয়েছে । মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ স্বর শোনা গেলেও মমতার পাশেরই থেকেছেন আর এক পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি । কিন্তু সাম্প্রতিককালে একাধিকবার রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেছেন ত্বহার ভাইপো আব্বাস সিদ্দিকি । বর্তমান শাসক দলের উপর একপ্রকার রুষ্ট হয়েই যে তিনি নতুন দলের কথা ঘোষণা করেছেন, তাও স্পষ্ট । আজ নতুন দল ঘোষণার সময় তা যেন আরও স্পষ্ট করে দেন তিনি । বললেন, তৃণমূল অনেক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখালেও কিছুই মেলেনি । আর সেই না-পাওয়া স্বপ্নগুলি পূরণের জন্যই যে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট তাও বুঝিয়ে দিলেন আব্বাস।

এখনও পর্যন্ত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে রাজ্যের প্রায় 44 টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার । এর মধ্যে রয়েছে দুই 24 পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো বেশ কিছু জেলার মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি । আব্বাস ঘনিষ্ঠসূত্রে খবর, তাঁর নজর রয়েছে বাংলার 74 টি আসনে । এগুলির মধ্যে 60 টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল । 6 টিতে বিজেপি এবং 8 টিতে কংগ্রেস ।

রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের উপর থাবা বসাতেই ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নিয়ে আসছেন আব্বাস সিদ্দিকি । কিছুদিন আগেই মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি রাজ্যে এসেছিলেন । বৈঠক করেছিলেন আব্বাসের সঙ্গে । রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মিমের প্রার্থীদের দাঁড় করানোর বিষয়ে ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিলেন ওয়েইসি ।

আরও পড়ুন : মিমকে ভোট দেওয়া মানে বিহারের মতো অবস্থা হবে : অনুব্রত মণ্ডল

নতুন বছরের শুরুতে মিম প্রধানের বড় ঘোষণা । জানিয়েছিলেন, আব্বাস সিদ্দিকির পাশে থেকেই ভোটে লড়বে মিম । এরপর আজ আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট ঘোষণা । আর এরপর থেকেই শুরু হয়েছে রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘু জোট জল্পনা । তবে কি আব্বাস সিদ্দিকি আর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি একজোটে নামতে চলেছেন বাংলার ভোটের ময়দানে ? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে রাজ্য-রাজনীতির আনাচে-কানাচে ।

রাজ্যে প্রায় 30 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট । আসন্ন নির্বাচনে এই 30 শতাংশ মুসলিম ভোটের উপর বেশ অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলার তখত । আর এটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল । এদিকে মিম বাংলার সংখ্যালঘু ভোটের দিকে 'নজর' দেওয়ার সময় থেকেই তেলেবেগুনে চটে রয়েছে রাজ্যের শাসক দল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে একের পর এক তৃণমূল নেতার মুখে তাই শোনা গেছে, মিম নাকি আসলে বিজেপির বি টিম । তৃণমূলের আশঙ্কা খুব একটা ভুল নয় । প্রতিবেশী বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও দেখা গিয়েছিল মিমকে প্রার্থী দিতে । আর ভোট কাটাকুটির খেলায় আখেড়ে লাভ হয়েছিল এনডিএ জোটের । কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দিয়েও ম্যাজিক ফিগার পার করতে পারেনি লালুপ্রসাদের দল । সেই একই ছবি এবার বাংলাতেও হবে না তো ! রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সম্ভবত সেই সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটির খেলাকেও ভয় পাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।

আরও পড়ুন : 2019-এ আমরা ছিলাম না, বিজেপি কী করে 18টি সিট পেল ? প্রশ্ন ওয়েইসির

রাজনীতির সমীকরণে যে সব সময় দু'য়ে দু'য়ে চার হয় না, তা ভালোই বোঝেন সুজন-মান্নানরাও । মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে পেলে বাম-কংগ্রেসের পালেও যে হাওয়া লাগবে, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না । কংগ্রেসের সঙ্গে বেশ কিছুদূর আলোচনাও এগিয়েছে । রবিবারই সোমেনবাবুর ছেলে রোহনের সঙ্গে কথা হয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির । শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের জেতা কোনও আসনে প্রার্থী দেবেন না বলে রোহনকে আশ্বস্ত করেছেন পীরজাদা ।

সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের চোখেও আব্বাস হলেন 'গুড বয়' । আব্বাস সিদ্দিকিকে শুধু একটি মাত্র সম্প্রদায়ের নেতা বলে তারা মনে করতে নারাজ তিনি । কোথাও আব্বাসকে একটি ধর্মের কথা বলতে শোনেননি সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা ।

তবে তৃণমূল-বিমুখ আব্বাস এখনও পর্যন্ত নিজে এই বিষয়ে কিছু স্পষ্ট ইঙ্গিত দেননি । আব্বাসের ঘনিষ্ঠ মহলের থেকে যেটুকু জানা যাচ্ছে, আপাতত সব দলের সঙ্গেই আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছেন তিনি ।

আব্বাস মমতা-বিমুখ হলেও ত্বহা সিদ্দিকি কিন্তু নতুন দল ঘোষণায় মোটেই খুশি নন । ফুরফুরার 'কালো দিন' বলে কটাক্ষ করেছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে । এই পরিস্থিতিতে ত্বহাকে নিজেদের দিকে শক্ত করে আগলে রাখার জন্য তৃণমূল মরিয়া চেষ্টা করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ।

তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় আব্বাসকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ । বলছেন, আব্বাস সিদ্দিকি নতুন প্লেয়ার । তিন মাসে কিছু করা যায় না । মিম নিয়েও একই সুর তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় । দলের কর্মীদের মনোবল যাতে না ভেঙে যায়, সেজন্য আশ্বাস দিয়ে বলছেন, রাজ্যের ভোটে মিম কোনও ফ্যাক্টর নয় । তবে রাজ্য-রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, তাঁদের কথায়, উপরে উপরে তৃণমূল যতই আব্বাস-ওয়েইসিকে গুরত্ব না দিক, ভিতরে ভিতরে স্নায়ুর চাপটা যথেষ্টই বেগ দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দলকে ।

কলকাতা, 21 জানুয়ারি : বাইরের রাজ্যগুলিতে চল থাকলেও বাংলায় এই ধরনের ট্রেন্ড কিন্তু একেবারে নতুন । কোনও ধর্মগুরুর তৈরি রাজনৈতিক দল বাংলার মানুষ এর আগে সামনে থেকে দেখেননি । এবার সেই কাজটিই করে দেখালেন আব্বাস সিদ্দিকি । ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন নিজের দল । ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট । ধর্মগুরুর হাত ধরে তৈরি হলেও দলের নামকরণে কিন্তু থাকছে না কোনও ধর্মীয় সুরসুরি । বরং, দলকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে তুলে ধরা হবে । এমনটাই দাবি আব্বাস সিদ্দিকির ।

জল্পনা বেশ অনেকদিন ধরেই চলছিল । বেশ কয়েকবার দল ঘোষণার কথা বলেও যেন শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠছিল না । প্রথমে গত বছরের ডিসেম্বরে, তারপর জানুয়ারির শুরুর দিকে... দু'বার দল ঘোষণার দিন ঠিক হয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছিল আব্বাস সিদ্দিকিকে । অবশেষে আজ পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ী দল ঘোষণা করলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা । অনেকেই বলতে পারেন, ভোটের মাস দুই-তিন আগে একটা নতুন দল কতটা আর প্রভাব ফেলতে পারে ! কিন্তু রাজনীতির সমীকরণ কিন্তু অন্য হিসাব দিচ্ছে ।

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার নতুন দল ঘোষণা নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা । বিশেষত, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং উত্তর 24 পরগনা একটি অংশের নির্বাচনে প্রক্রিয়ায় এর আগেও একাধিকবার নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় আসতে দেখা গিয়েছে মুসলিম ভোটারদের । দক্ষিণ 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু এলাকাকেও বাদ দিলে চলবে না । এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের উপর আব্বাস সিদ্দিকির দল বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা ।

আরও পড়ুন : বিজেপির রিমোট দ্বারা পরিচালিত মিম, যেমন নাচাবে তেমন নাচবে : সিদ্দিকুল্লা

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার সমর্থন দীর্ঘদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই ছিল । ফুরফুরা শরিফের সমর্থনের জোরেই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের একটি বড় অংশ এতদিন ঘাসফুলের ঝুলিতে গিয়েছে । মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ স্বর শোনা গেলেও মমতার পাশেরই থেকেছেন আর এক পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি । কিন্তু সাম্প্রতিককালে একাধিকবার রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেছেন ত্বহার ভাইপো আব্বাস সিদ্দিকি । বর্তমান শাসক দলের উপর একপ্রকার রুষ্ট হয়েই যে তিনি নতুন দলের কথা ঘোষণা করেছেন, তাও স্পষ্ট । আজ নতুন দল ঘোষণার সময় তা যেন আরও স্পষ্ট করে দেন তিনি । বললেন, তৃণমূল অনেক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখালেও কিছুই মেলেনি । আর সেই না-পাওয়া স্বপ্নগুলি পূরণের জন্যই যে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট তাও বুঝিয়ে দিলেন আব্বাস।

এখনও পর্যন্ত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে রাজ্যের প্রায় 44 টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার । এর মধ্যে রয়েছে দুই 24 পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো বেশ কিছু জেলার মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি । আব্বাস ঘনিষ্ঠসূত্রে খবর, তাঁর নজর রয়েছে বাংলার 74 টি আসনে । এগুলির মধ্যে 60 টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল । 6 টিতে বিজেপি এবং 8 টিতে কংগ্রেস ।

রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের উপর থাবা বসাতেই ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নিয়ে আসছেন আব্বাস সিদ্দিকি । কিছুদিন আগেই মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি রাজ্যে এসেছিলেন । বৈঠক করেছিলেন আব্বাসের সঙ্গে । রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মিমের প্রার্থীদের দাঁড় করানোর বিষয়ে ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিলেন ওয়েইসি ।

আরও পড়ুন : মিমকে ভোট দেওয়া মানে বিহারের মতো অবস্থা হবে : অনুব্রত মণ্ডল

নতুন বছরের শুরুতে মিম প্রধানের বড় ঘোষণা । জানিয়েছিলেন, আব্বাস সিদ্দিকির পাশে থেকেই ভোটে লড়বে মিম । এরপর আজ আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট ঘোষণা । আর এরপর থেকেই শুরু হয়েছে রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘু জোট জল্পনা । তবে কি আব্বাস সিদ্দিকি আর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি একজোটে নামতে চলেছেন বাংলার ভোটের ময়দানে ? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে রাজ্য-রাজনীতির আনাচে-কানাচে ।

রাজ্যে প্রায় 30 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট । আসন্ন নির্বাচনে এই 30 শতাংশ মুসলিম ভোটের উপর বেশ অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলার তখত । আর এটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল । এদিকে মিম বাংলার সংখ্যালঘু ভোটের দিকে 'নজর' দেওয়ার সময় থেকেই তেলেবেগুনে চটে রয়েছে রাজ্যের শাসক দল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে একের পর এক তৃণমূল নেতার মুখে তাই শোনা গেছে, মিম নাকি আসলে বিজেপির বি টিম । তৃণমূলের আশঙ্কা খুব একটা ভুল নয় । প্রতিবেশী বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও দেখা গিয়েছিল মিমকে প্রার্থী দিতে । আর ভোট কাটাকুটির খেলায় আখেড়ে লাভ হয়েছিল এনডিএ জোটের । কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দিয়েও ম্যাজিক ফিগার পার করতে পারেনি লালুপ্রসাদের দল । সেই একই ছবি এবার বাংলাতেও হবে না তো ! রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সম্ভবত সেই সংখ্যালঘু ভোট কাটাকাটির খেলাকেও ভয় পাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।

আরও পড়ুন : 2019-এ আমরা ছিলাম না, বিজেপি কী করে 18টি সিট পেল ? প্রশ্ন ওয়েইসির

রাজনীতির সমীকরণে যে সব সময় দু'য়ে দু'য়ে চার হয় না, তা ভালোই বোঝেন সুজন-মান্নানরাও । মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে পেলে বাম-কংগ্রেসের পালেও যে হাওয়া লাগবে, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না । কংগ্রেসের সঙ্গে বেশ কিছুদূর আলোচনাও এগিয়েছে । রবিবারই সোমেনবাবুর ছেলে রোহনের সঙ্গে কথা হয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির । শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের জেতা কোনও আসনে প্রার্থী দেবেন না বলে রোহনকে আশ্বস্ত করেছেন পীরজাদা ।

সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের চোখেও আব্বাস হলেন 'গুড বয়' । আব্বাস সিদ্দিকিকে শুধু একটি মাত্র সম্প্রদায়ের নেতা বলে তারা মনে করতে নারাজ তিনি । কোথাও আব্বাসকে একটি ধর্মের কথা বলতে শোনেননি সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা ।

তবে তৃণমূল-বিমুখ আব্বাস এখনও পর্যন্ত নিজে এই বিষয়ে কিছু স্পষ্ট ইঙ্গিত দেননি । আব্বাসের ঘনিষ্ঠ মহলের থেকে যেটুকু জানা যাচ্ছে, আপাতত সব দলের সঙ্গেই আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছেন তিনি ।

আব্বাস মমতা-বিমুখ হলেও ত্বহা সিদ্দিকি কিন্তু নতুন দল ঘোষণায় মোটেই খুশি নন । ফুরফুরার 'কালো দিন' বলে কটাক্ষ করেছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে । এই পরিস্থিতিতে ত্বহাকে নিজেদের দিকে শক্ত করে আগলে রাখার জন্য তৃণমূল মরিয়া চেষ্টা করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ।

তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় আব্বাসকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ । বলছেন, আব্বাস সিদ্দিকি নতুন প্লেয়ার । তিন মাসে কিছু করা যায় না । মিম নিয়েও একই সুর তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় । দলের কর্মীদের মনোবল যাতে না ভেঙে যায়, সেজন্য আশ্বাস দিয়ে বলছেন, রাজ্যের ভোটে মিম কোনও ফ্যাক্টর নয় । তবে রাজ্য-রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, তাঁদের কথায়, উপরে উপরে তৃণমূল যতই আব্বাস-ওয়েইসিকে গুরত্ব না দিক, ভিতরে ভিতরে স্নায়ুর চাপটা যথেষ্টই বেগ দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দলকে ।

Last Updated : Jan 21, 2021, 10:44 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.