কলকাতা, 1 ডিসেম্বর : যেকোনও স্কুল শুরুর সময় ও ছুটির সময় স্কুলের চারপাশে কিছুক্ষণের জন্য তৈরি হয় যানজট । আর এই যানজটকে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । তাই যানজট এড়ানোর সূত্র খুঁজতে কলকাতার 18-20 টি রাস্তার ধারের স্কুল চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর । ইতিমধ্যেই সেই স্কুলগুলিকে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার চিঠি পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের সঙ্গে আলোচনা করে যানজট এড়ানোর একটি পরিকল্পনা করতে । জানা গেছে, আগামীকাল স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনারের নেতৃত্বে বৈঠক হবে এই পরিকল্পনা নিয়ে ।
কলকাতার দূষণ সূচন মাত্রা ছাড়িয়েছে রাজধানীর । এই নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতের তরফে বেশ কয়েক দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুদূষণ কমাতে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা হলফনামা দিয়ে মুখ্যসচিবকে জানাতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত । এই সপ্তাহেই সেই হলফনামা পেশ করার কথা । সেই প্রেক্ষিতেই শুক্রবার নবান্নে মুখ্যসচিব বৈঠক করেন । মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে হওয়া সেই বৈঠকে কলকাতার বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে অনেকগুলো বিষয় চিহ্নিত করা হয় । তাঁর মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, স্কুলের চারপাশের যানজট । জানা গেছে, সেই কারণটি অর্থাৎ স্কুলের চারপাশে তৈরি হওয়া যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখ্যসচিব একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন । এই কমিটির কো-অর্ডিনেটর হল স্কুল শিক্ষা দপ্তর । অর্থাৎ এই কমিটি পরিচালনা করবে স্কুল শিক্ষা দপ্তর । পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ, কলকাতা পৌরসভা, পরিবহন দপ্তর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন এই কমিটিতে ।
স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই এই কমিটি কলকাতার 18-20 টি স্কুলকে চিহ্নিত করেছে, যাদের চারপাশে যানজটের মাত্রা অনেক বেশি থাকে । চিহ্নিত হওয়া স্কুলগুলি তালিকায় রয়েছে লা মার্টিনিয়ার, শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের মতো কলকাতার একাধিক নামী স্কুল । এই স্কুলগুলির বাইরে যানজট কী করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যেই স্কুলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার । তারপরে তিনি স্কুলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে একটা ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের খসড়া প্রস্তাব তৈরি করতে । সেই প্রস্তাবগুলি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনার জন্য আগামীকাল আবার বৈঠক হবে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে স্কুলগুলির।
স্কুল শিক্ষা দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক এই বিষয়ে বলেন, "মুখ্যসচিব এটা নিয়ে বৈঠক করেছিলেন । সেই বৈঠক করার পর তিনি স্কুল শিক্ষা দপ্তর, কলকাতা পুলিশ, কলকাতা পৌরসভা, পরিবহন দপ্তর এবং পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে দেন । সেই কমিটি স্কুল শিক্ষা দপ্তর কো-অর্ডিনেট করবে । তারা কলকাতায় যে স্কুলগুলির সামনে যানজট হয়, সেই যানজট এড়ানোর জন্য রিপোর্ট জমা করবে । সেই প্রেক্ষিতে কমিশনার বৈঠক ডেকেছিলেন কলকাতার সেইসব স্কুলগুলির সঙ্গে যাদের যানজটের সমস্যাগুলো আছে । তাঁদেরকে তিন রকম ভাগে পরামর্শ দেওয়া হয় । এক, যদি স্কুল নিজেদের বাস অ্যারেঞ্জ না করতে পারে তাহলে অন্ততপক্ষে পুলকারের ব্যবস্থা করা বা একটা জায়গায় পার্কিং করে বাচ্চাদের লাইন দিয়ে নিয়ে যাওয়া । দুই, শ্রেণি অনুযায়ী টাইমগুলোকে ভাগ করা যায় কি না । যেমন, প্রথমে স্কুল বাস এল, তারপরে পুলকার, তারপরে প্রাইভেট গাড়ি । এই ধরনের 3- 4 রকম পরামর্শ দিয়ে স্কুলগুলিকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা ট্র্যাফিক প্ল্যান করতে বলা হয়েছে ।"
শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ বলেন, "শিক্ষা দপ্তর আমাদের ডেকেছে । কাল বৈঠক আছে । বলা হয়েছে, যে সমস্ত যানবাহন স্কুলের প্রয়োজন ব্যবহৃত হয় তার থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে যে বায়ুদূষণ হচ্ছে সেই সম্বন্ধে আপনাদের স্কুলের অভিজ্ঞতা বলুন বা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনারা কী চিন্তাভাবনা করছেন বলুন । যেমন, আপনার স্কুল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ট্রাফিকের সঙ্গে কী করে যোগাযোগ করেন, গাড়িগুলো যাতে ঠিকঠাক যাতে পার্কিং করা হয়, বাতাসের গুনমান যাতে ভালো করা যায় । এখনও বৈঠক হয়নি । আমরা কিছু প্রস্তাব ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছি । কাল কমিশনারের ডাকা বৈঠকটাতেও অংশগ্রহণ করব।"