কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি: ভাষা দিবসের (International Mother Language Day 2023) মঞ্চকে ব্যবহার করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay) সমালোচনা করলেন কবি সুবোধ সরকার । গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে খিদিরপুরে মাইকেল মধুসূদন লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে গিয়ে নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কবিতার সমালোচনা করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । মঙ্গলবার দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে ব্যাটন ধরলেন সুবোধ সরকার ।
এদিন এই মঞ্চ থেকেই নাম না করে বিচারপতিকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিলেন এই বিশিষ্ট কবি । তিনি বলেন, ‘‘আমি একটা ছোট্ট কবিতা পড়ছি, কবিতাটা লিখেছেন কবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তার আগে আজ এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমার একটা প্রশ্ন আছে । এই প্রশ্নটা কয়েকদিন ধরে আমার মধ্যে গুমড়ে মরছে ।’’
এর পর তিনি বলেন, ‘‘আজ মাতৃভাষা দিবস কেউ কি পারেন কোনও কবির লেখা লাইব্রেরিতে রাখা যাবে না একথা বলতে । তিনি বিচারক হন বা যিনি হন, তিনি কি পারেন বলতে ? লাইব্রেরিতে আপনারা এর বই রাখবেন না । আমি মনে করি এটা একটা ফ্যাসিজম । আমি এই ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আজকে এই ছোট্ট কবিতাটি আপনাদের শোনাচ্ছি ।’’ শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা আবৃত্তি করেই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, এরপরেও তাঁকে কটাক্ষ করতে শোনা গিয়েছে ।
প্রসঙ্গত, এদিন যে কবিতাটি সুবোধ সরকার পড়ে শুনিয়েছেন সেটি অনেকটা এইরকম - রাস্তায় আমাদের নিশানা । আমাদের আস্তানা নেই কোনও জীবনের চিরস্থায়ী ঠিকানা । এইভাবে কাজ করতে করতে হয়তো রাস্তার পাশেই মিলবে আশ্রয় । রাস্তার ধুলোই হোক গুলোর মতো সার্থক । এই ধুলোতেই মিশে থাকবে অতি বাস্তব । এরপরই এই কবি বলেছেন, ‘‘ধুলোর মতো সার্থক যিনি লিখতে পারেন, একজন বিচারক এই ছোট্ট লাইন একবার লিখে দেখান ।’’ রাজনৈতিক মহলের মতে, বিচারপতির সমালোচনার যোগ্য জবাব এদিন ভাষা শহীদ মঞ্চ থেকেই উঠে এসেছে । যে জবাব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেননি ৷ দিয়েছেন বাংলার প্রতিষ্ঠিত গ্রহণযোগ্য কবি, সুবোধ সরকার ।
খিদিরপুরে মাইকেল মধুসূদন লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে গিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, "কবিতার প্রথম লাইন এপাং ওপাং ঝপাং, আমরা সবাই ড্যাং ড্যাং । এই যদি কবিতার বই হয়, কেউ পড়বে ? আমার মনে হয় কেউ পড়বে না । এই অখাদ্য জিনিসগুলো গ্রন্থাগারে রাখবেন না, এটা আজ বলার সময় এসেছে । অখাদ্য বই সরবরাহ হয় সরকারি গ্রন্থাগারে, পড়তে চাইবে কোনও মনুষ্য সন্তান ? এই বই কিনলে তবেই সাহায্য পাওয়া যায়, না হলে পাওয়া যায় না । এই ধরনের বই সরবরাহ হলে, উইপোকা ছাড়া কারও সুবিধা হবে না ।’’
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিচারপতির এই বক্তব্যকেই সম্ভবত ফ্যাসিজম বলতে চেয়েছেন বিশিষ্ট কবি । যদিও এদিনের অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গে একটি শব্দ খরচ করেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রশ্ন এই অবস্থায় বিশিষ্ট বিচারপতি কি এই নিয়ে পাল্টা কোন প্রতিক্রিয়া দেবেন ? নাকি এ বক্তব্য পুরোপুরি মেনে নেবেন !
আরও পড়ুন: জলকে পানি, মাকে আম্মা বলে, এটা মানতে হবে; ভাষা দিবসে শুভাপ্রসন্নকে ভর্ৎসনা মমতার