কলকাতা, 23 জুন : ফুল দিয়ে সাজানো হয়নি গেট ৷ বিজ্ঞাপনের জন্য টাঙানো হয়নি কোনও হোর্ডিং বা পোস্টার ৷ নেই কোনও ব্যস্ততা ৷ চারিদিকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা ৷ শুধু নিয়মরক্ষার তাগিদে কয়েকটা কম্পানির অফিস খুলেছে ৷ এবছর রথযাত্রায় অচেনা ছন্দে দেখা গেল চিৎপুরের যাত্রাপাড়াকে ৷
প্রতিবছর এই রথযাত্রার দিন চিৎপুরের যাত্রাপাড়ার শুভ মহরৎ হয় ৷ প্রতিটি যাত্রা কম্পানির অফিস সাজানো হয় ফুল দিয়ে ৷ কম্পানির অফিসের বাইরে সারি করে যাত্রার পোস্টার লাগায় যাত্রা দলগুলি ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে ৷ গ্রামের কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পছন্দসই যাত্রা কম্পানিকে বায়না দিয়ে যায় তারা ৷
এই একটা দিন নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না চিৎপুরে যাত্রাপাড়ার মানুষদের ৷ এক কথায় এই রথযাত্রার দিন আনন্দে-উৎসবে জমজমাট থাকে চিৎপুরের যাত্রাপাড়া ৷ কিন্তু, এবছর চিৎপুরের এই চেনা ছন্দকে কেড়ে নিয়েছে কোরোনা ৷
রুকমঞ্জরী ও স্বর্ণমঞ্জরী যাত্রা দলের শিল্পী সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "রথের দিন আমাদের এখানে ব্যানার লাগানো হয় ৷ বায়না করতে লোক আসে ৷ কিন্তু, এবছর কোনও কিছুই নেই ৷ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, অগাস্টের মাঝামাঝি একটি মিটিং করবেন ৷ তারপর যদি উনি অনুমতি দেন তাহলে এই যাত্রাপাড়ার সঙ্গে যুক্তে মানুষগুলোকে বাঁচানো যাবে ৷ "
কোরোনার জেরে এবছর আর রথযাত্রা উপলক্ষ্যে আর ব্যস্ততা নেই চিৎপুরে ৷ একে তো দীর্ঘ দু'মাসের অধিক লকডাউন চলায় মানুষের পকেটে টান পড়েছে, তার উপর আনলক 1 -এও জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে ৷ ফলে এবছর আর রথযাত্রায় গ্রাম থেকে পার্টিরাও আসেনি যাত্রার বায়না দিতে ৷ উলটে বাতিল হয়েছে যাত্রাপালার বায়না ৷
চিৎপুরের সোনার বাংলা যাত্রা কম্পানির ম্যানেজার নেপাল দত্ত বলেন, "গতবছর আর এবছরের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য ৷ এবছর এখনও পর্যন্ত কোনও দলও করে উঠতে পারিনি ৷ জানি না কী হবে ৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা করব ৷ অনেক বায়না বাতিল হয়েছে ৷ 60-70 পালার বায়না বাতিল হয়েছে ৷ চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এই তিন মাস যাত্রার ভালো বাজার ৷ এই সময়ে বিভিন্ন গ্রামে নান পুজো উপলক্ষ্যে যাত্রা পালা হয় ৷ সেগুলো সব বাতিল হয়ে গেছে ৷ আজকের দিনে আমরা নতুন যাত্রার ঘোষণা করি ৷ যাত্রাপালার উদ্যোক্তাদের আপ্যায়ন করি ৷ কিন্তু এবছর কিছু নেই ৷ নিয়মরক্ষার্থে অফিস খুলে একটু ফুল দিয়েছি ৷"
চিৎপুরের এই যাত্রাপাড়ায় প্রায় 40 টি যাত্রা কম্পানি রয়েছে ৷ এই কম্পানিগুলির সঙ্গে প্রযোজক থেকে শুরু করে, শিল্পী , সাজঘরের লোক-সহ সরাসরি যুক্ত প্রায় 2 হাজার জন ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন তাঁরা প্রত্যেকেই অনিশ্চয়তায় ৷ কবে, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানে না কেউ ৷ তাও সেই আশাতেই দিন কাটাচ্ছেন এই যাত্রাপাড়ার মানুষরা ৷