কলকাতা, 29 এপ্রিল : ধৈর্যের বাঁধ শেষ পর্যন্ত আর ছিল না । শিরদাঁড়া ভেঙে গেছে । অথচ, রোগীকে ভরতি নেওয়া হচ্ছে না । সকাল থেকে তিনটি মেডিকেল কলেজ ঘুরে পার হয়ে গেছে 12 ঘণ্টা । রোগীকে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও বলা হয়, বেড নেই। রোগীকে ভরতি নেওয়া হবে না । অবশেষে রোগীর পরিজনরা বলেন, তাঁরা ধরনায় বসবেন । এরপরও পেরিয়ে যায় 12 ঘণ্টা । এই সময় ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় বলে পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয় । শেষ পর্যন্ত গতকাল দুপুরে ভরতি নেওয়া হয় রোগীকে । রাত থেকে রোগীর চিকিৎসা শুরু হয় বলে বলেন পরিজনরা ।
রোগীর নাম সঞ্জয় নাথ (36) । পেশায় তিনি বাসের কন্ডাক্টর। তিনি বালির রাজচন্দ্রপুরের বাসিন্দা । সঞ্জয়ের পরিজনরা বলেন, গত শুক্রবার বাসচালকের সঙ্গে বচসা হয় সঞ্জয়ের । বাসচালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা । বচসার সময় বাসচালকের হাতে আক্রান্ত হন সঞ্জয় । প্রদীপ মাইতি নামে রোগীর এক আত্মীয় বলেন, "বাসের চালকের সঙ্গে সঞ্জয়ের বচসা হয় । এই সময় বাসের চালক কনুই দিয়ে সঞ্জয়ের ঘাড়ে মারতে থাকে । সঞ্জয়ের স্পাইনাল কর্ড ভেঙে গেছে । এই অবস্থায় সঞ্জয়কে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল বাসের চালক । স্থানীয় বাসিন্দারা সঞ্জয়কে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান ।"
রোগীর অন্য আর এক আত্মীয় রামকৃষ্ণ দাস বলেন, "উত্তরপাড়ার একটি হাসপাতাল থেকে সঞ্জয়কে নিয়ে আসা হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । সেখান থেকে SSKM হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ।" প্রদীপ মাইতি বলেন, "শনিবার সকাল সাড়ে 10টা নাগাদ SSKM হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জয়কে । এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, MRI করানো হয় । অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্রেচারে করেই এমারজেন্সিতে রাখা হয়েছিল সঞ্জয়কে । ডাক্তাররা মাঝে মধ্যে এসে দেখছিলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন । রাত সাড়ে 10টা নাগাদ SSKM হাসপাতাল থেকে বলা হয়, বেড নেই । সঞ্জয়কে ভরতি নেওয়া সম্ভব নয় ।" তিনি জানিয়েছেন, SSKM হাসপাতাল থেকে রোগীকে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অথবা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় ।
প্রদীপ মাইতি আরও বলেন, "এরপর আমরা নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাই । সেখানে কিছু রক্ত পরীক্ষা করানো হয় । এরপর সেখান থেকে বলা হয় বেড নেই । আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে সঞ্জয়কে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় । শনিবার রাত সাড়ে 11টা নাগাদ সঞ্জয়কে আমরা আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাই ।" তারপর ? তিনি বলেন, "রিপোর্ট দেখে আর জি কর থেকে বলা হয়, বেড নেই । কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সঞ্জয়কে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন আর জি করের ডাক্তাররা ।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "অত রাতে আমাদের ধৈর্যের বাঁধ তখন শেষ । আমরা বলি, রোগীর ন্যূনতম চিকিৎসা তো শুরু হবে । রোগীকে ভরতি নেওয়া না হলে আমরা ধরনায় বসব । কিন্তু ডাক্তাররা বলেন বেড নেই ।"
প্রদীপ মাইতি বলেন, "এরপরও আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে সঞ্জয়কে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় । শেষপর্যন্ত গতকাল বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ সঞ্জয়কে ভরতি নেওয়া হয় ।" রামকৃষ্ণ দাস বলেন, "সঞ্জয়কে ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছে । চিকিৎসা শুরু হয়েছে ।"
স্পাইনাল কর্ড ভেঙে যাওয়া এক রোগীকে ট্রমা কেয়ার সেন্টারেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখার এই অভিযোগের বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বলতে পারব, কী হয়েছে ।"