কলকাতা, 9 জুন : অতিথি শিক্ষকদের ধরনা, আন্দোলন না করার আবেদন করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গতকাল সাংবাদিক বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি অতিথি শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন । সেখানেই এই আবেদন করেছেন। যদিও, অতিথি শিক্ষকদের মতে, এটা তাঁদের আন্দোলন ভাঙার একটা চেষ্টা। নিজেদের দাবিদাওয়াগুলি তুলে ধরতে আজই তাঁরা হাজরা মোড়ে একটি আন্দোলন কর্মসূচি করবেন।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আজ গেস্ট লেকচারারদের 10 জন প্রতিনিধিকে আমি ডেকেছিলাম, তাদের কী সমস্যা আছে সেগুলি শোনার জন্য। আমি বিশদে তাদের সঙ্গে দু-আড়াই ঘন্টা কথা বলেছি এবং শোনার চেষ্টা করেছি । তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে তাঁদের দাবির বিষয়গুলি কী। নির্বাচনের আগে তাঁরা যখন গেছিল, আমরা বলেছিলাম নির্বাচনের সময় এগুলি পরীক্ষা করার সময় নয়। তারপর তাঁরা আবার তাঁদের দাবি নিয়ে এসেছিল এবং তাঁদের 10 জন প্রতিনিধি গোপাল ঘোষের নেতৃত্বে আসেন । আলোচনা করেন। আমি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের কাছে অনুরোধ করেছি যে তাঁরা যেন আন্দোলন কর্মসূচি, ধরনা এগুলি থেকে বিরত থাকেন।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, "আমরা দেখছি। সমস্ত কলেজগুলি থেকে তাঁদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি এবং নিঃসন্দেহে আমরা তাঁদের বিষয়টিকে পরীক্ষা করব। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা কী করে গ্রহণ করা যায় সে ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করব। আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি, এখন যেন তাঁরা আর নতুন করে কোনও ধরনা বা কর্মসূচির মধ্যে না যায়। আলোচনার টেবিলে তাঁরা যখন আছেন, তখন আলোচনার জন্য, পরীক্ষার জন্য তাঁদের বিষয়গুলি নিয়ে তাঁদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত। এটা যেমন একদিকে রয়েছে , তেমনি অন্যদিকে এই গেস্ট লেকচারাররা কেউই কিন্তু সরকারের দ্বারা, শিক্ষা দপ্তরের দ্বারা নিযুক্ত হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রয়োজনে নিয়েছে। আমি তাঁদের কাছে আবেদন করছি, আলোচনা যখন হচ্ছে তখন তাঁরা যেন ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করেন।"
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সমকাজে সমবেতন, স্থায়ীকরণের দাবিতে বহুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি শিক্ষকরা । এর আগে বহুবার তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন । কিন্তু, প্রতিবারই আশ্বাস মিললেও তা কাজে পরিণত হয়নি বলে অভিযোগ অতিথি শিক্ষকদের । এবার শিক্ষামন্ত্রীর আন্দোলন না করার আবেদনকে আন্দোলন ভাঙারই একটা চেষ্টা বলে মনে করছেন তাঁরা। আজ তাঁরা হাজরা মোড়ে একটি আন্দোলন কর্মসূচি করবেন বলেও জানাচ্ছেন।
নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল গেস্ট লেকচারার অ্যাসোসিয়েশন নিমাই সাঁতরা বলেন, "আমরা পরীক্ষা ডিউটি থেকে যাবতীয় কাজ করি। সেক্ষেত্রে আমাদের বেতনটা একটু কম ছিল এবং আমাদের সরকারের তরফ থেকে পার্মানেন্টও করা হয়নি। আমাদের আবেদন, যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, সমকাজে সমবেতন। তাহলে আমরা সমকাজে সমবেতন কেন পাব না? আমরা একই জায়গায় কাজ করছি, আমাদের পদটা আলাদা । কিন্তু কাজ আমাদের একই, তাহলে বেতনটা কেন একই হবে না? 2010 সালের সেপ্টেম্বরে আমরা নিযুক্ত হলাম। ওরা হয়ে গেল পার্ট টাইম। সরকারের তরফ থেকে একটা অর্ডার বার করল, একটা ফিক্সড বেতন করে দিল । সঙ্গে ওদের পার্মানেন্ট করে দিল। তারপরে যাঁরা নিযুক্ত হল তাঁরা কুমাতার সন্তান হয়ে গেল ।"
তিনি বলেন, "প্রায় আট ন'বছর হয়ে গেল, এই সরকারের কোনও সদিচ্ছা নেই, কোনো সদর্থক ভূমিকাও নেই। আমরা বারবার শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে এই কথাগুলি জানিয়েছি । বসেছি এবং চিঠিও দিয়েছি। আমাদের আবেদনগুলি তুলে ধরেছি । 2019 সালের মার্চ মাসে একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করল, কত কী গেস্ট আছে একটা তালিকা দিন। প্রত্যেকটা কলেজের কাছে চেয়েছিল। আবার গত 27 মে আবার একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করল। যাদের NET, SET আছে, MPhil,PhD আছে ও 2017 থেকে 2019-এর মধ্যে অন্ততপক্ষে কোনও একটা কলেজে এক বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁদের 15 দিনের মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হল। এক্ষেত্রে আমাদের একটাই দাবি, যাদের নেট, সেট ক্লিয়ার নেই অথচ সাত আট বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এসেছে কলেজের জন্য, বা যাদের NET, SET আছে, MPhil,PhD আছে তাঁদের সবার জন্য সরকার ভাবুক।"
শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলন বা ধরনা না করার অনুরোধ করেছেন। এই বিষয়ে নিমাইবাবু বলেন, "আমরা বারবার আবেদন করেছি। আমরা 2012 সাল থেকে আন্দোলনে নেমেছি। এবং 2015 সালের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত আমরা ছিলাম। কলেজ স্কয়্যারে ধরনায় বসেছিলাম 7 দিন। কিন্তু কিছু হয়নি। উনি বারবার বলেন আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু সমাধান করবেন। কিন্তু, কোনও কিছুই করছেন না। খালি একটাই কথা আমাদের বলছেন যে, আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। টাকা পয়সা নেই। টাকা পয়সা নেই মানে শুধু শিক্ষা দপ্তরেই তো টাকা পয়সার অভাব নয়। অন্যদিকেও তো টাকা পয়সার অভাব হতে পারে। কিন্তু, আমরা সাইকেল দেওয়া থেকে সব কিছুর ব্যবস্থা করছি, আর টিচারদের বেতন দেব না এটা তো হতে পারে না। আগামীকাল হাজরা মোড়ে আমাদের একটা বিশাল জনসমাবেশ হয়েছে। সমস্ত কলেজের যাঁরা 2010 সালের সেপ্টেম্বরের পরে নিযুক্ত হয়েছেন তাঁরা অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবিদাওয়াগুলি জমা দেব। কারণ, আমরা দীর্ঘদিন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এই দাবিদাওয়াগুলি জানিয়েছি। উনি বারবার একই কথা বলেছেন। উনি দেখা করবেন বলেছিলেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। আজকেও যে আশ্বাস দিয়েছেন তাতেও কিছু হবে না। শুধুমাত্র আমাদের আন্দোলনটা ভাঙার জন্য চেষ্টা। আমাদের এই আন্দোলন চলবে। আমরা এখনও সরকারের প্রতি আস্থা হারাইনি। আমরা চাইছি সরকার আমাদের সঙ্গে বসুক এবং আমাদের দাবিদাওয়াগুলি মিটিয়ে দিক।"