কলকাতা, 11 নভেম্বর: সোমবার কয়েক হাজার পার্শ্বশিক্ষক বিকাশ ভবনের কাছে জমায়েত হয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন । তাঁদের দাবি, ভাতা প্রথার অবসান ঘটিয়ে বেতন কাঠামো চালু এবং স্থায়ীকরণ । বিকাশ ভবনের 100 মিটারের মধ্যে করুণাময়ী মেলা মাঠের বাইরে পার্শ্বশিক্ষকরা অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন । আন্দোলনকারীরা জানান, বিকাশ ভবনের 100 মিটারের মধ্যে 144 ধারা জারি করে রেখেছে রাজ্য সরকার । তাঁরা হাইকোর্টের বিশেষ অনুমতি নিয়ে সেখানে অবস্থানে বসেছেন ।
গত রবিবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বিকাশ ভবনের ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থানে বসার অনুমতি দেয় পার্শ্বশিক্ষকদের । পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের সহ-আহ্বায়ক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সহায়ক কর্মী ইউনিয়নের জেনেরাল সেক্রেটারি মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের দুটো দাবি । একটা হল, আমরা ১৫ বছর ধরে কাজ করছি, কিন্তু যে অসম্মানের জায়গায় রাজ্য সরকার আমাদের ফেলে রেখেছে সেই অসম্মান আমরা আর মানবো না । আমাদের পূর্ণশিক্ষকের মর্যাদা দিতে হবে । দ্বিতীয় দাবি, আমাদের এখনও পর্যন্ত থোক টাকায় পারিশ্রমিক দেওয়া হয় । কোনও বেতন দেওয়া হয় না । আমরা চাইছি বেতন কাঠামো, গ্রেড-পে উইথ পে-ব্যান্ড, যেটা সহকারি শিক্ষকরা পাচ্ছেন । এ ছাড়া, পার্শ্ব শিক্ষকদের ৭০ শতাংশ শিক্ষিকা । তাঁরা এখনও চাইল্ড কেয়ার লিভের (CCL) অধিকার পাননি । অবিলম্বে আমাদের CCL-এর অধিকার চাই ।"
রাজ্য সরকারের প্রতি মধুমিতার প্রশ্ন, "আমাদের বেতন প্রাথমিক স্তরের জন্য ১০ হাজার টাকা ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ১৩ হাজার টাকা । কেন এই শোষণ? কেন এই বঞ্চনা ? তাহলে কি যে কাটমানির কথা আমরা চারিদিকে শুনতে পাচ্ছি সেই কাটমানিটাই রাজ্য সরকার নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের পকেট কেটে ?"
পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের যৌথ আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন, "আমাদের মূল দাবি সমকাজে সমবেতনের নিরিখে বেতন কাঠামো চালু করা হোক । দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় থেকেও আমাদের চাকরির নিরাপত্তা নেই । আমরা চাইছি ভাতা প্রথার অবসান ঘটিয়ে বেতন কাঠামো অবিলম্বে চালু করা হোক । এই সরকার দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বঞ্চনা করছে । কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা দেয় তা থেকে এই সরকার কেটে নিচ্ছে । PAB রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯-এ কেন্দ্রীয় সরকার প্রাথমিকে পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য ১৫ হাজার টাকা করে এবং উচ্চপ্রাথমিকের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা দেয় । এর উপরে রাজ্যের আরও ৪০ শতাংশ দেওয়ার কথা । কিন্তু, আমরা পাচ্ছি প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা এবং উচ্চপ্রাথমিকের ক্ষেত্রে ১৩ হাজার টাকা । শুধুমাত্র আর্থিক অনটনের জন্যই গত তিন বছরে প্রায় ১০০ জনের মতো পার্শ্বশিক্ষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে । তাঁদের পরিবারকে রাজ্য সরকার একটি পয়সা দিয়ে সাহায্য করেনি ।"