কলকাতা, 12 জুন: আগামী 8 জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ ভোটগ্রহণের সেই দিন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষেই কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলার শুনানি হচ্ছে ৷ সেখানেই নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর কাছে এই প্রস্তাব দেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞনম ৷ যদিও কমিশনের তরফে আদালতে জানানো হয় যে রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া ভোট পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় ৷
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ কিন্তু মনোনয়নের সময়সীমা কম, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় ৷ গত শুক্রবার মামলার শুনানি হয় ৷ সেখানে মনোনয়নের দিন কম বলে আদালতের তরফে বলা হয় ৷ তার পর সোমবার আবার শুনানি হচ্ছে ৷ সেখানে আদালতের নির্দেশ মতো এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র রিপোর্ট জমা দেন ।
ওই রিপোর্টে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নের দিনক্ষণ একদিন বাড়ানোর প্রস্তাব দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন । কমিশনের তরফে প্রতিদিন আরও দু'ঘণ্টা করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে । কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র জানান, 15 জুনের পরিবর্তে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনক্ষণ 16 জুন, মানে একদিন বাড়ানো যেতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে ছ’দিনের পরিবর্তে সাতদিন হবে । সব দিক খতিয়ে দেখে এটা করা যেতে পারে ৷ এর পর প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের প্রশ্ন, কেন সাতদিনের বেশি বাড়ানো যাবে না ? কমিশনের উত্তর, সাতদিনই যথেষ্ট মনে করছে কমিশন । আগের নির্বাচনগুলোতেও এই রকম সময়ই দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য দেওয়া সময় পর্যাপ্ত নয়, সাফ জানাল হাইকোর্ট
মনোনয়নের সময়সীমা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কথা বলার সময় ভোট পিছনোর কথা বলে আদালত ৷ রাজ্যের অনুমতি ছাড়া নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব নয় বলে জানান কমিশনের আইনজীবী । তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই সমস্তপক্ষ নির্বাচনে আত্মবিশ্বাস পায় । কিন্তু আপনারা সেটাকে কীভাবে সুনিশ্চিত করবেন ?’’ কমিশনের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনারা একটা নিরপেক্ষ সংস্থা তো !’’
এ দিন শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারছি পর্যাপ্ত মনোনয়নপত্র পাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও কোথাও নিরাপত্তার অভাব দেখা যাচ্ছে ৷ এই বিষয়গুলো যেন না হয়, সেটা কমিশন সুনিশ্চিত করুক । সাত দিনের মধ্যে শনিবার ও রবিবার ছুটির জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি । তাহলে সাত দিন হচ্ছে কোথায় ?’’
শুনানিতে বিজেপির তরফে আইনজীবী গুরু কৃষ্ণ কুমার বলেন, ‘‘মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার । 73 হাজার আসন । গত নির্বাচনে 20 হাজারের বেশি আসনে কোনও নির্বাচন ছাড়াই শাসক দলের প্রতিনিধিরা বিজয়ী হয়েছিলেন । 9 জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল ৷ সেদিনই বেলা 11টার সময় থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা বলা হল । প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হয়েছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য । 73 হাজার আসন । 40 সেকেন্ডেরও কম সময় । এর মধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব ?’’
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এখন পর্যন্ত কতজন মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন ? কমিশনের উত্তর, এখনও পর্যন্ত 10 হাজার প্রার্থী জমা দিতে পেরেছে । এবং চলছে । তখন প্রধান বিচারপতি জানান, 2018 সালের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হোক ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা বরদাস্ত নয়, কড়াবার্তা রাজ্যপালের