কলকাতা, 12 মার্চ: পোস্ত চাষের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। গত বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে নিজেই একথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এ বিষয়ে বিরোধী বিধায়কদের সহমত পোষণেরও অনুরোধ করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর এই আবেদন ঘিরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর (Oppositions attack Mamata Banerjee over poppy cultivation requisition) ৷ নানান প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। পোস্ত চাষের নামে রাজ্যকে মাদকের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলার অপচেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিরোধীরা।
বিরোধীদের যুক্তি, রাজ্য সরকারের অধিকাংশ প্রকল্প বা কাজে দুর্নীতি হয়েছে। গরু, কয়লা, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ধরা পড়ায় নতুন কৌশল খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও দাবি বিরোধীদের। তাদের যুক্তি, রাজ্যবাসীকে কম দামে পোস্ত খাওয়াতে চাইলে কেন্দ্রের কাছে সেস কমানোর আর্জি জানাতে পারেন। তাহলেই তো হয়ে যায় ৷ তা কেন হল না? নিতান্তই পোস্ত চাষ করতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। যেখানে, আফিমের করবার না-হওয়ার প্রতিশ্রুতি লেখা থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। অবৈধভাবে আফিমের কারবার রোধে কী কী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে, তাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর কথা বলেছেন বিরোধীরা।
পোস্তর সঙ্গে আফিমের সম্পর্ক কী? এককথায়, একই অঙ্গে দু'টি রূপ। পোস্ত হল শুকনো ফলের বীজ। আর কাঁচা অবস্থায় ওই ফলটিরই খোসার নির্যাস হল আফিম। এই অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কারণে ভারতে পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ। সরকারি তত্ত্বাবধান ছাড়া দেশের কোথাও পোস্ত চাষ করা যায় না। এমনকী সিঙ্গাপুর, চিন, তাইওয়ানের মতো বহু দেশে পোস্ত চাষে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে আফগানিস্তানে পোস্ত কিংবা আফিমের চাষ হয়। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণে পোস্ত এদেশে আমদানি করা হয়
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত শুভেন্দু, বিস্ফোরক অভিযোগ এনে তদন্তের দাবি কুণালের
বিরোধীদের বক্তব্য: প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, "আমাদের রাজ্যে যে হারে মাদকের বা আফিমের কারবার চলছে তা তিনি রোধ করতে পারছেন না। বিদেশ থেকে আসা পোস্তর সেস কমাতে কেন্দ্রকে বলা যেতে পারে। প্রণব মুখোপাধ্যায় থাকাকালীন কংগ্রেসের উদ্যোগে কেন্দ্রের কাছে পোস্তর সেস কমানোর আর্জি জানানো হয়। সেস কমেও। ফলে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমানের মতো রাঢ়বঙ্গের পোস্ত প্রিয় বাঙালিরা সুবিধা পেয়েছিল। তা না হলে বিপদ। কারণ, এরআগে রাজ্যে পোস্তর চাষ হয়েছে। মালদার কালিয়াচক, কোচবিহারে পোস্তর চাষ হয়েছে। কিন্তু, আফিমের কারবার চলায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, পুলিশের বিরুদ্ধেই আফিমের কারবার চালাবার অভিযোগ ওঠে। আর এরা (তৃণমূল) টেট, কয়লা, গরু, চিটফান্ড সবকিছুতেই ধরা পড়ে গেছে। এখন নতুন করে ফন্দিফিকির করে আফিম চাষ করে রাজ্যটাকে মাদকের পীঠস্থান করে দিতে চাইছে।"
সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, "এই সরকার যেটাতেই হাত দেবে সেটাতেই দুর্নীতি। আপাদমস্তক দুর্নীতিতে আসামী যখন কাঠগড়ায় তখন এই সরকার মানুষের স্বার্থে কোনও কাজ করবে বলে মনে হয় না।" বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, "চাষিরা আলুর দাম পাচ্ছেন না। ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। পোস্তর চাষ করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যে রাজ্যে কাঁটাতারের সীমানা রয়েছে সেখানে আফিমের কারবারে আন্তর্জাতিক ড্রাগ মাফিয়ারা যুক্ত হয়ে যাবে। এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে এগোনো উচিত। না-ভেবেই কেন উনি উৎসুক উনিই বলতে পারবেন।"