কলকাতা, 8 ডিসেম্বর: কোভিড অতিমারীর সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল । সেই বিতর্ক আবার ফিরে এল ৷ এবার বার্ধক্য ভাতায় ডায়মন্ড হারবার মডেল আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে ৷ তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টির মধ্যে কোনও বিতর্ক দেখছে না স্বাভাবিকভাবে ৷ তবে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা ৷ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মডেল আসলে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাই প্রকাশ্যে আনছে বলে কটাক্ষ করছেন বিরোধী বিধায়করা ৷
বার্ধক্য ভাতার আবেদন করেও যাঁরা এখনও টাকা পাননি, তাঁদের তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে টাকা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অভিষেক ৷ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ হিসেবে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন ৷ ফলে পুরো ব্যাপারটাই দক্ষিণ 24 পরগনার ওই সংসদীয় এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, সেটাও সেদিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ৷
ডায়মন্ড হারবারের প্রায় 70 হাজার মানুষ আবেদন করেও বার্ধক্য ভাতার টাকা পাননি ৷ অভিষেকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ জানা গিয়েছে, 31 ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁরা সরকারিভাবে এই সুবিধা পাবেন না, তাঁরাই তৃণমূলের তরফে এই আর্থিক সাহায্য আগামী জানুয়ারি থেকে পাবেন । এর জন্য ডায়মন্ড হারবারে 203টি শিবিরের আয়োজন করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস । যাঁরা শিবিরে পৌঁছাতে পারবেন না, তাঁদেরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে ।
অভিষেকের প্রতিশ্রুতি মতো এই কর্মসূচি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা ৷ এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী ৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার যে মানুষকে বার্ধক্য ভাতা দিতে পারছে না, অভিষেকবাবুর পদক্ষেপে সেটাই আরও একবার সামনে আসছে । রাজ্য সরকার দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে আবেদনগুলি জমা নিয়েছে, তা পূরণ করতে পারছে না, এটাই কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখাতে চাইছেন ?’’
অন্যদিকে গত নভেম্বরে অভিষেক যখন বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখনই এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ সেই সময় সোশাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ভাইপোর (অভিষেক) ডায়মন্ড হারবার মডেল পিসির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দুয়ারে সরকার প্রতারণার উদ্যোগকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে । বার্ধক্য ভাতা পেতে জোর করে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল বয়স্ক মানুষদের । কিন্তু তাঁরা ভাতা পাননি ।’’
আর ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূল যখন সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে উদ্যোগী হয়েছে, তখন বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের 12 লাখ 35 হাজার আবেদনকারীর মধ্যে কোনও একটি লোকসভা কেন্দ্রে কীভাবে এমন উদ্যোগ নেওয়া যায় । হারের ভয়েই এসব করতে হচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে । এই লোকগুলিকে যদি সরকারি অর্থ দেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেকের বাড়িতে আমাদের ফোন যাবে । আমরা বলে দেব ন্যাশনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রকল্পের মাধ্যমে আপনারা এই টাকা পাচ্ছেন, যেখানে 800 টাকা দিল্লির এবং 200 টাকা রাজ্যের ।’’
যদিও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, কথা দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কথা রেখেছেন তিনি । তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘সরকারিভাবে বার্ধক্য ভাতা দিতে গেলে বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু নিয়ম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় । তাই দলের তরফে বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ সাধুবাদ যোগ্য । আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই উদ্যোগই সফলভাবে সম্পাদন করার চেষ্টা করছেন ।’’
আরও পড়ুন: