ETV Bharat / state

কত শিল্প বাস্তবায়িত ? শ্বেতপত্র দাবি বিরোধীদের, কটাক্ষ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনকে

Opposition questions BGBS: রাজ্য সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বাস্তবায়িত হওয়া শিল্প এবং কর্মসংস্থানের খতিয়ান দিক, তবেই মানবে মানুষ ৷ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনকে কটাক্ষ করে এমনই দাবি তুলল বিরোধীরা ৷

Opposition questions BGBS
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনকে কটাক্ষ বিরোধীদের
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 23, 2023, 2:40 PM IST

কলকাতা, 23 নভেম্বর: শেষ হয়েছে দু'দিনের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন । বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমাপ্তি ভাষণে জানিয়েছেন যে, এ বার বাংলায় 3 লক্ষ 76 হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে । পাশাপাশি আগ্রহপত্র এবং সমঝোতা পত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে 188টি । আদতেও কি এই অঙ্ক বাস্তবায়িত হবে ? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা ।

গত বারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল 3 লক্ষ 42 হাজার কোটি টাকার । এই বারের সম্মেলন সেই রেকর্ড ভাঙল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, এই বার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে 3 লক্ষ 76 হাজার কোটি টাকার । স্বাভাবিকভাবেই সরকারের দাবি, এ বারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন সফল এবং তা আগের সংস্করণগুলোর থেকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে ৷

তবে বিরোধীরা তা মানতে রাজি নয় ৷ সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, "পারফরম্যান্স রিপোর্ট দিতে হয় । শ্বেতপত্র প্রকাশ করলে হয়ে যায় । বললেন কী সব হাব করবেন । ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়েছেন । গ্রামকে গ্রাম মাঠে কাজ করছে । শিক্ষিত বেকাররা বসে আছে ।"

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন যে, "মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে এটা কোনও শিল্প সম্মেলন নয়, বরং ধর্মীয় সমাবেশ চলছে । নুন ছাড়া যেমন তরকারি হয় না, তেমনই শিল্প ছাড়া শিল্প সম্মেলন হয় না । সৌজন্য দেখিয়ে সকলকেই প্রশংসা করতে হয় । তার মনে এই নয় যে, এই সৌজন্যতা কোনও শিল্পায়নের সাফল্য ৷ বা ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল শিল্পায়নের সম্ভাবনা তৈরি হল, তা এতে বোঝায় না ।"

তিনি আরও বলেন যে, "2015 সাল থেকে মানুষের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে শুধু । কত বিনিয়োগ হয়েছে বাংলায় ? যাঁরা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা কোথায় ? পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় 20 হাজার 700 কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলেছিলেন । কিন্তু তিন বছর ধরে কোনও জমি পাননি তিনি । জিন্দলরা চার হাজার একর জমি ফেরত দিয়ে চলে গিয়েছেন । মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ইস্পাত শিল্পের হাব এখানে । অথচ নতুন কোনও প্রজেক্ট নেই । 2015 সাল থেকে যে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে সরকার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, তার তিন শতাংশ রাজ্যে বিনিয়োগ হয়নি । বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা চাই এই রাজ্যে শিল্প হোক, কিন্তু বাস্তব চিত্র এটা নয় ।"

এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় জানান যে, "আগে যেমন সাঁতরাগাছি তে পরিযায়ী পাখি আসত, সে রকমই প্রত্যেকবার এই বেঙ্গল বিজনেস সামিটে কিছু ব্যবসায়ীরা আসেন, তাঁরা এখানে সুন্দর সময় কাটান আর তারপরে ফিরে যান । এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ৷ 100 দিনের কাজের কর্মী প্রত্যেক দিন বাড়ছে । শিল্প আসছে এই গল্প শুনতে শুনতে বাংলার মানুষের কান পচে গিয়েছে । গত যতগুলি বেঙ্গল সামিট হয়েছে তার যদি 25 শতাংশ বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হত, তাহলে 50 শতাংশ বেকার দূরীকরণ হয়ে যেত এই রাজ্য থেকে । বিরোধীরা চায় শিল্প হোক বাংলায় । কিন্তু বিরোধীদের দাবি যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বলুন যে, 2015 সাল থেকে এই রাজ্যে কত বিনিয়োগ এসেছে, কত মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং কতগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে, কত কর্মসংস্থান হয়েছে । কোথাও এই তথ্য পাওয়া যায় না । তাহলে কি শিল্পটা আকাশে হচ্ছে ?"

তিনি আরও বলেন যে, "মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রথম ক্ষমতায় এলেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে, ছয় মাসের মধ্যে তিনি কর্মসংস্থান করে দেখাবেন ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কর্মসংস্থান হল না, শিল্প এল না । উলটে শিল্পপতিরা বাংলা থেকে চলে গিয়েছে । বাংলায় যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে, কোনও শিল্পপতি এখানে আসতে চাইবেন না । মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই রাজ্যে তিনি ল্যান্ড ব্যাংক করেছেন, কিন্তু কোথায় সেই ল্যান্ড ব্যাংক ?"

আরও পড়ুন:

  1. সৌরভ কবে শিল্পপতি হলেন ? বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মহারাজের উপস্থিতিতে কটাক্ষ শুভেন্দুর
  2. বাণিজ্য সম্মেলনে 3 লক্ষ 76 হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব, জানালেন মমতা

কলকাতা, 23 নভেম্বর: শেষ হয়েছে দু'দিনের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন । বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমাপ্তি ভাষণে জানিয়েছেন যে, এ বার বাংলায় 3 লক্ষ 76 হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে । পাশাপাশি আগ্রহপত্র এবং সমঝোতা পত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে 188টি । আদতেও কি এই অঙ্ক বাস্তবায়িত হবে ? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা ।

গত বারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল 3 লক্ষ 42 হাজার কোটি টাকার । এই বারের সম্মেলন সেই রেকর্ড ভাঙল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, এই বার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে 3 লক্ষ 76 হাজার কোটি টাকার । স্বাভাবিকভাবেই সরকারের দাবি, এ বারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন সফল এবং তা আগের সংস্করণগুলোর থেকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে ৷

তবে বিরোধীরা তা মানতে রাজি নয় ৷ সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, "পারফরম্যান্স রিপোর্ট দিতে হয় । শ্বেতপত্র প্রকাশ করলে হয়ে যায় । বললেন কী সব হাব করবেন । ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়েছেন । গ্রামকে গ্রাম মাঠে কাজ করছে । শিক্ষিত বেকাররা বসে আছে ।"

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন যে, "মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে এটা কোনও শিল্প সম্মেলন নয়, বরং ধর্মীয় সমাবেশ চলছে । নুন ছাড়া যেমন তরকারি হয় না, তেমনই শিল্প ছাড়া শিল্প সম্মেলন হয় না । সৌজন্য দেখিয়ে সকলকেই প্রশংসা করতে হয় । তার মনে এই নয় যে, এই সৌজন্যতা কোনও শিল্পায়নের সাফল্য ৷ বা ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল শিল্পায়নের সম্ভাবনা তৈরি হল, তা এতে বোঝায় না ।"

তিনি আরও বলেন যে, "2015 সাল থেকে মানুষের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে শুধু । কত বিনিয়োগ হয়েছে বাংলায় ? যাঁরা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা কোথায় ? পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় 20 হাজার 700 কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলেছিলেন । কিন্তু তিন বছর ধরে কোনও জমি পাননি তিনি । জিন্দলরা চার হাজার একর জমি ফেরত দিয়ে চলে গিয়েছেন । মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ইস্পাত শিল্পের হাব এখানে । অথচ নতুন কোনও প্রজেক্ট নেই । 2015 সাল থেকে যে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে সরকার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, তার তিন শতাংশ রাজ্যে বিনিয়োগ হয়নি । বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা চাই এই রাজ্যে শিল্প হোক, কিন্তু বাস্তব চিত্র এটা নয় ।"

এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় জানান যে, "আগে যেমন সাঁতরাগাছি তে পরিযায়ী পাখি আসত, সে রকমই প্রত্যেকবার এই বেঙ্গল বিজনেস সামিটে কিছু ব্যবসায়ীরা আসেন, তাঁরা এখানে সুন্দর সময় কাটান আর তারপরে ফিরে যান । এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ৷ 100 দিনের কাজের কর্মী প্রত্যেক দিন বাড়ছে । শিল্প আসছে এই গল্প শুনতে শুনতে বাংলার মানুষের কান পচে গিয়েছে । গত যতগুলি বেঙ্গল সামিট হয়েছে তার যদি 25 শতাংশ বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হত, তাহলে 50 শতাংশ বেকার দূরীকরণ হয়ে যেত এই রাজ্য থেকে । বিরোধীরা চায় শিল্প হোক বাংলায় । কিন্তু বিরোধীদের দাবি যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বলুন যে, 2015 সাল থেকে এই রাজ্যে কত বিনিয়োগ এসেছে, কত মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং কতগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে, কত কর্মসংস্থান হয়েছে । কোথাও এই তথ্য পাওয়া যায় না । তাহলে কি শিল্পটা আকাশে হচ্ছে ?"

তিনি আরও বলেন যে, "মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রথম ক্ষমতায় এলেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে, ছয় মাসের মধ্যে তিনি কর্মসংস্থান করে দেখাবেন ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কর্মসংস্থান হল না, শিল্প এল না । উলটে শিল্পপতিরা বাংলা থেকে চলে গিয়েছে । বাংলায় যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে, কোনও শিল্পপতি এখানে আসতে চাইবেন না । মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই রাজ্যে তিনি ল্যান্ড ব্যাংক করেছেন, কিন্তু কোথায় সেই ল্যান্ড ব্যাংক ?"

আরও পড়ুন:

  1. সৌরভ কবে শিল্পপতি হলেন ? বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মহারাজের উপস্থিতিতে কটাক্ষ শুভেন্দুর
  2. বাণিজ্য সম্মেলনে 3 লক্ষ 76 হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব, জানালেন মমতা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.