কলকাতা, 10 মার্চ: আদালতের নির্দেশে এসএসসির গ্রুপ সি ক্লার্কের চাকরি খোয়ালেন বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় (Mamata Banerjee Niece Brishti Mukherjee Loses Job)। তিনি নাকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাইয়ের মেয়ে । আর তাঁরই ভুয়ো চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি গিয়েছে । রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা কার্যত তেড়েফুঁড়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করছেন । কেউ তীব্র কটাক্ষ করে বলছেন, "উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সততার প্রতীক । তাহলে কেন তাঁর ভাইঝির চাকরি গেল, একমাত্র উনিই বলতে পারবেন ।" আবার কেউ বলছেন, "গোটা দুর্নীতি তন্ত্রের শিরোমণি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা প্রমাণিত হতে চলেছে ।" অন্য এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা বলছেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ভুয়ো চাকরি হয়েছিল ।" সব মিলিয়ে বলা যায় বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়ের চাকরি বাতিল ঘিরে চরম বিপাকে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷
বীরভূমের রামপুরহাট 1নং ব্লকের চাকাইপুর গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক বাড়ি ৷ তার পাশেই কুসুম্বা গ্রামে তাঁর মামার বাড়ি । সেখানকার শৈশবের বহু স্মৃতির কথা নানা সময়ে উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে । কুসুম্বা গ্রামে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামা অনিল মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে নীহার মুখোপাধ্যায়ের পরিবার । নীহারবাবুর মেয়ে বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়ের বিয়ে হয় রামপুরহাট থানার অন্তর্গত আয়াস গ্রামে । কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আজ স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে গ্রুপ সি পদে নিয়োগে দুর্নীতির জেরে যে চাকরি বাতিলের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে 608 নম্বরে নাম রয়েছে বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়ের ৷
এই ঘটনার বিষয়ক কংগ্রেস নেতা রাজ্যের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, " উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তো একমাত্র সততার প্রতীক । তাহলে কেন ভাইঝির চাকরি গেল উনি বলতে পারবেন । উনি জবাব দিন আমরা এখানে আর কী বলব । সর্বক্ষণ তো যাকে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে গলা ফাটান । ফলে, কেন আদালতের নির্দেশে খোদ তারই ভাইঝির চাকরি গেল তা তাঁর পক্ষেই বলা সম্ভব ।"
এই বিষয়ে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, "দুর্নীতি তন্ত্রের তদন্ত শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছল । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আদতে পিসি তা ভাইঝির চাকরিতে প্রমাণিত । তবে পিসি বুঝতে পেরেছিলেন যে ঘটনা বেশি দিন চাপা থাকবে না । তাই আগেই পদত্যাগ করতে বলেন । আজ যদি আদালতের নির্দেশে এই ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীদের লিস্ট না বের হত বা আমাদের নজরে পঞ্চায়েত কাজ না করত তাহলে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসত না ৷ শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হলে বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়ের সুস্থতা কামনা করি । তবে, অনুব্রত মণ্ডলের মাথায় অক্সিজেন যায় না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দাবি করেছিলেন । এসবের পরে আর একটা বিষয়ে জানার ইচ্ছে রইল, বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় আদৌ আত্মীয়তার সূত্রে চাকরি পেয়েছিলেন ? নাকি টাকা দিয়ে ? কারণ তৃণমূল টাকা তোলাবাজি অর্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না ।"
রাজ্যে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি হয়েছিল । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হল । তা না হলে একদিন না একদিন তা প্রকাশ পেত ।"
আরও পড়ুন : এসএসসি-র গ্রুপ সি পদে ভুয়ো চাকরি বাতিল মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝির