কলকাতা, 7 নভেম্বর: আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য 10 শতাংশ সংরক্ষণ বৈধ (EWS Reservation) । সোমবারই ঐতিহাসিক রায় দিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) । পশ্চিমবঙ্গের শাসক থেকে বিরোধী, এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে সবাই ।
প্রসঙ্গত, 2019-এর লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Elections 2019) আগে দেশের আর্থিকভাবে দুর্বলদের জন্য 10 শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এর বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে 40টির বেশি পিটিশন জমা পড়ে । এবং সে সময় এই পিটিশনগুলোর একটা অংশে বড় প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়েছিল, তাহলে কি এবার জাত পাত নয়, অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণী আর উচ্চবিত্ত এই মানদণ্ডে সংরক্ষণতে বিভাজন করা হবে ? তাহলে কি সংসদ এমন জায়গায় নাক গলাচ্ছে, যেখানে তাদের নাক গলানোর কথা নয় ? তাহলে কি কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্রের যে প্রাথমিক কাঠামোকে নাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ? সোমবার রায়দানের সময়, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন যে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে কোনও ধরনের অসুবিধা হয়নি ।
2024-এ লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Elections 2024) ৷ তার আগে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে ৷ যা শুরু হচ্ছে চলতি মাসে হিমাচল প্রদেশকে দিয়ে ৷ গুজরাতে আগামী মাসে ভোট ৷ নির্বাচনের আগে সংরক্ষণ নিয়ে এই রায় স্বাভাবিকভাবে স্বস্তি দিয়েছে বিজেপিকে (BJP) ৷ অন্যদিকে ভোটব্যাংকের কথা মাথায় রেখে বিরোধীরা এই নিয়ে সমালোচনার পথে হাঁটতে চাইছে না ৷
তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে । তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘‘এটা গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক রায় । শুধু জাতির ভিত্তিতে নয়, অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতেও সংরক্ষণ দেওয়া হবে । এটা করার ফলে দেশের গরিব মানুষ উপকৃত হবেন ।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে এই সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত সংসদে সর্বসম্মতিতে পাস হয়েছিল ৷
সিপিএম (CPIM) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি, তাদের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের যথার্থই ছিল । সে কথা আমরা আগেও বলেছি । আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্তকে বৈধতা দিয়েছে । যখন এই সংরক্ষণ নিয়ে সারা দেশ জুড়ে বিতর্ক হয়, তখন একটা কথা আমরা বারেবারেই প্রকাশ্যে এনেছিলাম, সামাজিক ভিত্তিগুলির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ভিত্তিটাকেও দেখা উচিত । তার ভিত্তিতেই পরবর্তীতে সংশোধনী আনা হয়েছিল এবং সুপ্রিম কোর্ট তা বৈধতা পেল ।’’
একই সঙ্গে এদিন রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি । সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রাজ্য সরকারের কাছে দাবি ছিল অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে সংরক্ষণ রাজ্যে চালু করা হোক । কিন্তু রাজ্য সরকার তা মেনে নেয়নি । এদিনের রায়ের পর রাজ্য সরকারের নিশ্চয়ই সম্বিত ফিরবে, এতদিন না করে তারা ভুলই করেছেন ।’’
এদিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা খোলা মনে এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি । গরিব মানুষকে নিয়ে কোনও রাজনীতি চলে না । আমরা আশা করব সমস্ত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দেশের মানুষ এই রায়কে স্বাগত জানাবে ।’’
একইভাবে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, ‘‘যে উদ্দেশ্য নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধান সংশোধন করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণিকে সংরক্ষণ দেওয়ার কথা ভেবেছেন, তা অসংবিধানিক নয় । সুপ্রিম কোর্টের রায়, সেটাই প্রমাণিত হয়েছে । এর মধ্যে যেমন নতুনত্ব কিছু নেই । তেমন বিশেষত্বও কিছু নেই ।’’
একইভাবে বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘এই রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে সরকার যে সরকার সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে । তবে সামগ্রিকভাবে যেন এই সংরক্ষণ 50 শতাংশের বেশি না হয় । বিচারপতিরা বলেছেন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে সংবিধানিকভাবে কোনও বাধা নেই । এক্ষেত্রে বছরে যাদের আট লক্ষ টাকা আয় নয়, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা ।
আরও পড়ুন: আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া সাধারণ শ্রেণিকে 10 শতাংশ সংরক্ষণে সায় সাংবিধানিক বেঞ্চের