কলকাতা, 14 অক্টোবর : চিটফান্ড কাণ্ডে প্রতারিত মানুষের টাকা ফেরতের জন্য আজ মুখ্যমন্ত্রীকে ফের চিঠি দিলেন কংগ্রেস পরিষদীয় দল ও বাম পরিষদীয় দলের নেতৃত্ব । চিটফান্ড কাণ্ডের প্রতারিত লাখ লাখ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়া হোক । পাশাপাশি প্রতারক ও সুবিধাভোগীদের শাস্তিদানের জরুরি প্রয়োজনে আবারও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালেন বিরোধীরা । রাজ্য সরকারের তথা মুখ্যমন্ত্রীর উদাসীনতা এবং সরকারের নেতিবাচক মনোভাব প্রতারিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের যথেষ্টভাবে বিপর্যস্ত করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে । আজ 5 দফা দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালেন আবদুল মান্নান এবং সুজন চক্রবর্তী ।
সারদা, রোজভ্যালি, MPS, অ্যালকেমিস্টের মত শতাধিক চিটফান্ড কম্পানিগুলোর প্রতারণা প্রকাশিত হওয়ার পর ইতিমধ্যেই সাত বছর অতিক্রান্ত । বর্তমান রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের রিপোর্ট এবং কার্যক্রম গত সাত বছরে প্রকাশিত হয়নি । রাজ্য সরকার কর্তৃক গঠিত শ্যামল সেন কমিশনের প্রতিবেদন আজ পর্যন্ত বিধানসভায় পেশ করা হয়নি । বহুবার জানতে চাওয়া হলেও সিগারেটের উপর ট্যাক্সের হিসাব কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত পাঁচশো কোটি টাকার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা । চিটফান্ড সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন অথবা জিজ্ঞাসা থাকলেই রাজ্যের শাসকদল কেন আর্তনাদ করে অথবা মারমুখী হয়ে ওঠে কেন ? তা রহস্যই থেকে গেল বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন আবদুল মান্নান ও সুজন চক্রবর্তী ।
চিটফান্ডে প্রতারিত মানুষের আন্দোলন এবং আইনি লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্ট রায় ঘোষণা করে । চিটফান্ডের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার এবং তা বিক্রি অথবা নিলাম করে সেই অর্জিত অর্থ প্রতারিতদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট কমিটি গঠন করেছে । তাকে যথাযথ সাহায্য করার জন্য সকলকে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত । রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ সাহায্য করছে না বলেই অভিযোগ । কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ভূমিকাও ইতিবাচক নয় । রাজ্য অথবা কেন্দ্র উভয় সরকারের দিক থেকেই অযথা কালো করা হচ্ছে-এমন অভিযোগের যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী । চিটফান্ড সংস্থাগুলোর অধিকাংশ সম্পত্তি রাজ্যের মধ্যে । অথচ উদ্ধারের ক্ষেত্রে সদর্থক কোনও সাহায্যকারী ভূমিকা সরকারের নেই বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা । আবার গচ্ছিত অর্থ কোর্ট কমিটি মারফত আমানতকারীদের মধ্যে বিলি করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না । এই অবস্থায় উভয় সরকারের দিক থেকেই অনাগ্রহের শিকার হচ্ছেন প্রতারিত মানুষ । যা অবিলম্বে নিরসন হওয়া জরুরি বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিরোধীরা ।বিরোধীদের পক্ষ থেকে আজ আবেদন জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে চিটফান্ড সংস্থাগুলো চিহ্নিত অস্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ অথবা বাজার মূল্যে ক্রয় করে প্রাপ্ত অর্থ কোর্ট কমিটিতে জমা করা হোক । যাতে প্রতারিতদের মধ্যে তা বিলি করার বন্দোবস্ত করা যায় । প্রতারিত মানুষের অর্থ ফেরত এবং প্রতারক ও সহযোগীদের শাস্তি বিধানের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক । আমানতকারীদের হেনস্থা ও আক্রমণ বন্ধ করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহন করা হোক । CBI, ED সহ সংস্থাগুলো প্রতারকদের কাছ থেকে যে সম্পত্তি এবং অর্থ উদ্ধার করেছে তা প্রতারিতদের মধ্যে বিলি করার জন্য কোর্ট কমিটির কাছে যাতে অবিলম্বে জমা দেয় তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং চাপ সৃষ্টি করা হোক । যে আমানতকারীরা ইতিমধ্যে নানাবিধ চাপে আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের ন্যূনতম 10 লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক ।