কলকাতা, 27 জুলাই : করোনা সংক্রমণের জেরে স্কুল বন্ধ থাকার আজ 500 দিন পূর্ণ হল। তাই পঠন-পাঠন চলছে অনলাইনেই। অনলাইন ক্লাসের জন্য তাই একরকম বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন স্মার্টফোন। এর ফলে চোখের আদ্রতা কমে যাওয়া, দূরের দৃষ্টি কমে যাওয়ার মতো বেশ কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে।
শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাসের সময়ই নয়, গৃহবন্দি থাকার ফলে বর্তমানে শিশুদের দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটছে মোবাইল, ট্যাব, টেলিভিশন বা কম্পিউটারের সামনে বসে। স্কুলে ও মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধূলা বা বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার বদলে এখন তাদের দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটছে মোবাইল, ট্যাব, টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারে বিভিন্ন ভিডিও, গান, সিনেমা দেখে বা ভিডিও গেমস খেলে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে ব্যথা, মাথাব্যথা ও চোখের থেকে জল পড়ার মতো ছোটখাটো সমস্যা দেখা দেয়। তবে এই ধরনের সমস্যা বড় কোনও সমস্যার উপসর্গও হতে পারে।
আরও পড়ুন : Corona Effect : করোনায় ঘরবন্দিদের গাছের প্রতি ঝোঁক, হুগলির নার্সারির পৌষমাস
এনআরএস-এর চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "শিশুরা কাছের জিনিসের দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকে বলে তারা চোখের পলক ফেলে না। তাই একভাবে কাছের জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকলে শিশুদের দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। প্রথমত, খুব কাছের জিনিস অনেক্ষণ ধরে দেখলে সিলিয়ারি পেশীর উপর অতিরিক্ত চাপ পরে, চোখে ব্যথা হয়।
দ্বিতীয়ত, একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে শিশুরা চোখের পলক ফেলে না। এর ফলে চোখের ভেতরে থাকা লাক্রিমাল গ্ল্যান্ড ও এক্সেসরি লাক্রিমাল গ্ল্যান্ড সহ আরও বেশ কিছু গ্ল্যান্ড যেগুলি থেকে চোখের জল নির্গত হয়, সেগুলি ঠিক করে কাজ করতে পারে না। এর ফলে চোখ শুকনো হয়ে যায়। এই অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় ড্রাই আই সিনড্রোম বলা হয়।"
সাধারণত বড়দের ক্ষেত্রে 45 থেকে 50 বছর বয়সের পর এই হরমোনাল ইমব্যালেন্সের জন্য ড্রাই আইস সমস্যা শুরু হয়। তবে এখন বহু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুব অল্প বয়সেই 'ড্রাই আইস' দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে শিশুদের বাঁচাতে সতর্কতাতেই জোর চিকিৎসকদের
আমরা প্রতি মিনিটে আট থেকে দশ বার চোখের পাতা ফেলি। তবে এই শিশুরা যখন একটানা একাগ্র চিত্তে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে তখন তারা চোখের পলক ফেলে না বললেই চলে। এর ফলে চোখে আদ্রতার অভাব দেখা দেয় ৷
তিনি আরও বলেন যে, "সাধারণত আমাদের চোখ কাছের চেয়ে দূরের জিনিস দেখে বেশি। তবে দীর্ঘক্ষণ কাছের জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ভেতরে থাকা সিলিয়ারি মাসল বা পেশী অতিসক্রিয়তার কারণে এই শিশুদের পরবর্তীতে দূরের দৃষ্টি ক্ষীণ হতে থাকে যাকে মায়োপিয়া বলা হয়।"
করোনা সংক্রমণে লাগাম দিতে কার্যত লকডাউনের কারণে বর্তমানে বেশিরভাগ অফিসেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তাই বড়দেরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে ল্যাপটপ বা মোবাইলের সামনে। তবে এই ক্ষেত্রে তাঁদের চোখের যত না ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের।
আরও পড়ুন : Amitabh Bachhan : রামোজি ফিল্ম সিটিতে বৃক্ষ রোপণ অমিতাভ বচ্চনের
এই বিষয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ আরোফিল শেখ বলেন, "শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্ক্রিন অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে বলে তাদের চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে বড়দের চোখের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের চোখের। স্ক্রিনের রশ্মি শিশুদের চোখের ক্ষতি করছে। এছাড়াও তাদের চোখ স্থির থাকছে ও পলক পড়ছে না বলে শুকনো হয়ে যায়। চোখে ব্যথা ও চোখ চুলকোনোর মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি মায়োপিয়ার সমস্যাও তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে। চোখ স্থির হয়ে থাকার কারণে চোখ শুকনো হয়ে যায়।"
তিনি আরও বলেন, "অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে শিশুদের সরানো সম্ভব নয়। তবে কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে কিছুটা সুরাহা পাওয়া যেতে পারে। যেমন প্রতি 20 মিনিট অন্তর শিশুদের 20 সেকেন্ডের জন্য দূরে তাকাতে বলা। এছাড়াও স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার সময় তাদের বারবার চোখের পলক ফেলার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও ছাদে বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় দূরে তাকাতে বলতে হবে।"