কলকাতা, 23 জুন : বেনিয়ম রুখতে চলতি বছর থেকে রাজ্যের কলেজের ভরতি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে করা হয়েছে । কিন্তু অনলাইনে ত্রুটির জন্য অনেকে কলেজে ভরতি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না । ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত ৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তাঁদের ভরতির ব্যাপারে কলেজগুলির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ।
গতকাল একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, " সাইবার ক্যাফে থেকে অনলাইনে ফর্ম ফিল আপ করতে গিয়ে অনেকের ইনপুটে ভুল হয়েছে । ফলে ভরতির তালিকায় তাদের নাম আসেনি । অনেকেই একরম অভিযোগ করেছে । কলেজের সঙ্গে তাদের ভরতি নিয়ে কথা বলব। তবে, অনলাইনেই তাদের ভরতি হতে হবে । আমি তাদের লিস্ট চেয়ে পাঠাচ্ছি ।"
তিনি আরও বলেন, " নম্বরের উপরে, মেধার উপরে যে লিস্ট বেরিয়েছে । সেই সময় যারা ফর্ম ফিল আপ করতে পারেনি, তাদের আরেকবার সুযোগ করে দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব । কিন্তু, অনলাইনেই তাদের ফর্ম ফিল আপ করতে হবে। অনলাইনে ছাড়া অফলাইনে কোনও সুযোগ নেই। "
ভরতি প্রক্রিয়ায় আসলে কী সমস্যা হয়েছে?
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "অনেকে সাইবার ক্যাফে থেকে ফর্ম ফিল আপ করেছে । সেখানে অনেকেই ভুল ইনপুট দিয়েছে । ফলে তাদের নাম মেধা তালিকায় আসেনি ।"
যারা এই ভুল করেছে তাদের কী হবে?
পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "যাদের ভুল হয়েছে তারা হার্ড কপি জমা দিয়ে আবার নতুন করে ফর্ম ফিল আপ করতে পারবে । সঠিক প্রমাণ তো চাই যে তাদের ভুল হয়েছে।"
শুধুমাত্র যে ৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে তাদেরই এই সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, "আমি আগে 6 জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখব। ৬ জনের জন্য আমি সবাইকে সুযোগ দিতে যাব কেন? আমি ৬ জনকেই ডেকে কথা বলব।"
এদিকে ভরতি প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি আরও বলেন, " ভরতি নিয়ে এবারে কোনও অভিযোগই নেই । ভরতি অত্যন্ত শান্তিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা ডিস্টার্ব করব না। যদি কেউ আসন না পায় তাহলে তারা অনলাইনেই ভরতি হোক। যদি কোথাও আসন থাকে তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তা বিচার করবে।"
এদিকে অভিযোগ উঠছে বহু কলেজ আসন থাকা সত্ত্বেও অনেকে ভরতি হতে পারছে না । অভিযোগের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "অনেকে বলছে আসন আছে তবুও ভরতি হতে পারছে না । ভরতি প্রক্রিয়া অনলাইন করে দেওয়ার জন্য এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে । তবে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। কোনও কলেজ আসন না ভরতি করে থাকতে পারবে না। তাহলে আমি পরের বছর আসন কমিয়ে দেব। কারণ, সরকার যে টাকা দেয় তা মানুষের টাকা। সেই ১০০ জনের জন্য যে টাকা দেওয়া হয় তা দিয়ে যদি ৫০ জন পড়ে তাহলে বাকি ৫০ জন তো সুযোগ পাচ্ছে না।"
গতকাল পশ্চিম বেহালার কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, " উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার তো দরকার নেই। উচ্চশিক্ষায় ৪০ হাজার আসন বেড়েছে, ৫২টি কলেজ তৈরি হয়েছে । স্বাধীনতার পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত ১২ টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৪২। আরও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় , হতে চলেছে । কেন তোমরা বাইরে যাবে? আসলে আমাদের ইনফর্মেশন সিস্টেমটা ভালো না। আমরা মার্কেটিং করতে পারি না। আমার স্থির বিশ্বাস সকলে এখানে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। "
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "রাজ্য বোর্ডের পড়ুয়ারা সুযোগ পেলেই অন্য বোর্ডের ছেলে-মেয়েদের ছাপিয়ে যাবে । আমাদের আরেকটা দুঃখ আছে যে বেসটা আমরা তৈরি করে দিই। অর্থাৎ, আমাদের রাজ্যে তৈরি হয় । CBSE, ICSE বোর্ডের পড়ুয়ারা তো এই রাজ্যে থেকেই যদি ভালো রেজ়াল্ট করতে পারে তাহলে আমাদের বোর্ডের ছেলে-মেয়েরা কেন ভালো ফল করতে পারবে না ?"
কেন পিছিয়ে পড়ছে রাজ্যে বোর্ডের ছাত্র-ছাত্রীরা ?
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, " আমার মনে হয় নিয়মানুবর্তিতা, পঠনপাঠন পরিকাঠামো, পাঠ্যসূচি এবং লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি এইসব জিনিসগুলো যদি সমমানের হয় তাহলে আমি লিখে দিতে পারি যে আমাদের বোর্ডের ছেলে-মেয়েরা অন্য বোর্ডের পড়ুয়াদের ছাপিয়ে যাবে। সুযোগ পেলেই আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফল করে।"
এদিকে রাজ্য থেকে IAS পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী । উচ্চশিক্ষা দপ্তরের IAS ট্রেনিং সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, " রাজ্য থেকে আমরা ভালো IAS অফিসার দেখতে পাচ্ছি না । আমরা একটা সেন্টার ফর এক্সিলেন্স করছি IAS তৈরি করবার জন্য। অলরেডি আমাদের ATI আছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তরও একটা করছে। যেখানে IAS তৈরি করবার প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।"