কলকাতা, 10 নভেম্বর: অবিলম্বে বাবুঘাট (Babughat) বাস টার্মিনাস থেকে সরাতে হবে বাস । সম্প্রতি এমন দাবিতেই বাস মালিকদের চিঠি ধরাল রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা আরটিও । এই চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মালিকদের । আবার সিঁদুরে মেঘ দেখছে বাবুঘাটের বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মালিকরা ।
বাবুঘাট থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে এক মাস । এই সময়ের মধ্যে পাঁচটি বেসরকারি বাস রুটকে (Private Bus Routes) অন্যত্র সরে যেতে হবে । তবে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেখানে বাস সরিয়ে কোথায় নিয়ে যেতে হবে তার কোনও উল্লেখ নেই । বেশিরভাগ মালিকরাই মনে করছেন, হয়তো সাঁতরাগাছিতে স্থানান্তরিত করা হতে পারে বাস স্ট্যান্ড । কারণ এর আগেও বাবুঘাট বা ব্যান্ডস্ট্যান্ড থেকে সাঁতরাগাছি ডিপোতে (Santragachi Depot) সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছিল ।
মালিকপক্ষের মতে ব্যান্ডস্ট্যান্ড থেকে বাস স্ট্যান্ড সরিয়ে দেওয়া হলে তাঁদের পক্ষে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে । শুধু বেসরকারি বাস ও মিনিবাসই নয়, বাবুঘাট থেকে আন্তঃরাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যাতায়াতকারী দূরপাল্লার বাস মালিকদেরও এর আগে একাধিকবার এই চিঠি পাঠানো হয়েছে ।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে এখানে বেসরকারি বাসের স্ট্যান্ড রয়েছে । একেবারে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত বলে বাবুঘাটে যাত্রী সমাগম হয় অনেক বেশি । বাবুঘাটের এই অংশটি চক্ররেল ও ফেরি পরিষেবার সঙ্গেও যুক্ত । অফিস পাড়া বলে এখানে অনেক বেশি যাত্রীও পাওয়া যায় । পাশাপাশি যাত্রীদের বাস ধরাটা সুবিধের এখান থেকে । আর আগের বারের চিঠি মাফিক যদি সাঁতরাগাছিতে টার্মিনাস হয়, তাহলে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম যাবে । বেসরকারি বাসের ব্যান্ডস্ট্যান্ড বলে পারমিট দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু যদি সাঁতরাগাছি চলে যেতে হয়ে তাহলে তা মোটরভিকেল আইনের পরিপন্থী হবে । আমাদের বাসগুলি শহরের মধ্যে পরিষেবা দেয় । তাই সাঁতরাগাছি থেকে খালি বাস শহরে নিয়ে আসতে গেলে টোল ট্যাক্স দিতে হবে ৷ তাতে বাস চালিয়ে পোষাবে না । সাঁতরাগাছি যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হল, ওইদিকে কলকাতার সব রুটের বাস যায় না । পৌঁছনোর একমাত্র উপায় হল ট্যাক্সি বা আপ ক্যাব । সবার পক্ষে এত টাকা খরচ করে ট্যাক্সি করে গিয়ে বাস ধরা সম্ভব নয় । অর্থাৎ একজন যাত্রী যদি শ্যামবাজার থেকে সাঁতরাগাছির ট্যাক্সি করে বাস ধরতে যান তাহলে তার প্রচুর খরচ পরে যাবে । এই বাবুঘাট পরিবহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অন্যান্য ব্যবসাও । এর সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ কর্মচ্যুত হয়ে পড়বে ।"
অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাবুঘাট থেকে অসংখ্য বাস ছাড়ে ৷ তাহলে শুধুমাত্র এই পাঁচটি রুট অন্যত্র সরিয়ে নিলে কি দূষণ কমে যাবে? প্রথমে গাড়ি সরিয়ে সাঁতরাগাছি যাওয়ার কথা ছিল ৷ সেই বিষয় আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম । কারণ যাত্রী পরিষেবা দিয়ে সাঁতরাগাছি টার্মিনাস যেতে হলে সমপরিমাণ রাস্তা যেতে হবে । তাই 10 কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে যদি আবার সেই রাস্তায় রাখতে যেতে হয়, তাহলে তো ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলবে । সম্প্রতি আবার এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে ।"
যদিও ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস এন্ড মিনি বাস অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বাবুঘাটে দূরপাল্লার বাসকেই দূষণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাঠগোড়ায় তোলেন । তিনি বলেন, "আমরা এই চিঠি পেয়েছি । তবে চিঠি দিলেই যে সরে যেতে হবে, সেটা সম্ভব নয় । আলোচনার ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় । এর আগে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল, যেখানে সাঁতরাগাছিতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল । কিন্তু তাও যদি হয় তাহলে আলোচনা ছাড়া আমাদের পক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় ।"
পরিবহণ দফরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "যে পাঁচটি রুটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেই রুটের গাড়িগুলির ক্ষেত্রে শুরু বা শেষ স্টপেজ বাবুঘাট নয় । শুধুমাত্র বাসগুলো রাখার জন্য বাবুঘাট বাস ডিপো ব্যাবহার করা হয় । তাই এইবার সেই পাঁচটি রুটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে । তবে পরিবহণ বিভাগের তরফে অবশ্যই মালিকপক্ষের সমস্যাগুলিও বিবেচনা করা হবে । তাই মালিকপক্ষ যদি বাস রাখার জন্য কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করে দফতরকে জানায়, তাহলে সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হবে । যদিও আগে বাসগুলিকে সাঁতরাগাছি ডিপোতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল । তবে পরিকাঠামোগত ভাবে সাঁতরাগাছি টার্মিনাসে এখনও বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে ।" তিনি আরও বলেন, " বাবুঘাট বা ব্যান্ডস্ট্যান্ড অঞ্চলটি সেনাবাহিনীর । তাই সেনার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ওই অঞ্চলকে ফাঁকা করার আবেদন জানানো হয়েছে । পাশাপাশি ওই এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে ।"
আরও পড়ুন: বিকল্প উপায়ে চলতি বছরেই প্রায় 16 কোটি টাকা আয় হল কলকাতা মেট্রোর
প্রসঙ্গত, প্রথমে ধর্মতলা তারপর 1988 সালে বাস ডিপোকে স্থানান্তরিত করা হয় বাবুঘাটে । তাই এখানকার মালিকদের বক্তব্য হল, তখন থেকে এই জায়গাতেই তাঁরা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন । বাবুঘাট ও আউটরাম ঘাট সংলগ্ন এলাকা দূষিত হচ্ছে এই অভিযোগ আনা হয় । আর তারপরেই ওখান থেকে বাসস্ট্যান্ড তুলে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সমস্যার সূত্রপাত হয় । পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত এই বিষয়টিকে নিয়ে কলকাতা আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন । তবে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার । বর্তমানে বাবুঘাটে 19টি রুট রয়েছে । এর মধ্যে দুটি মিনিবাস রুট ।