কলকাতা, ১৭ মার্চ : আজ অনশন কর্মসূচির ১৮তম দিন। অনশনকারী SSC চাকরিপ্রার্থীরা গতকাল একটি স্মরণসভা করেন। আন্দোলনকারীরা জানান, যারা চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণে এই সভা। অনশনকারীরা জানান, ২০১৭ সালের অগাস্টে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অতনু মিস্ত্রি। তবে, আত্মহত্যা নয়, তাঁদের মার্ডার করা হয়েছে বলে দাবি ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভের ওয়েটিং লিস্টে থাকা অনশনরত প্রার্থীদের। শুধু তাই নয়, চাকরি না পেয়ে তাঁদেরও যদি এখানে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাহলে তাঁদেরও মার্ডার করা হবে বলে মন্তব্য করেন অনশন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদানকারী তানিয়া শেঠ।
গতকাল তানিয়া শেঠ বলেন, "আজ আমাদের ১৭ দিনে পড়ল অনশন। বছরের পর বছর বঞ্চনার শিকার হয়ে ইতিমধ্যেই অনেক বন্ধুকে আমরা হারিয়েছি। তাদের মধ্যে একজন অতনু মিস্ত্রি। যারা চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন তাঁদের আজ স্মরণ করেছি। বার বার বলা হচ্ছে আত্মহত্যা করেছে, আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু, আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে এটাকে আত্মহত্যা বলে না। এটা এক ধরনের ফুল প্রুফ মার্ডার। কারণ, শিক্ষিত বেকার হয়ে যখন সুইপারের কাজ করতে হয় তখন সেটা সত্যিই খুব লজ্জার। আমরা প্রত্যেকেই M.A, B.Ed পাশ করা প্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছি। অতনু মিস্ত্রির বাবা বলেছিলেন যে, আমার যদি ১১ লাখ টাকা থাকত, তাহলে আমার ছেলেটাকে মরতে হত না।"
সম্প্রতি, অনশন মঞ্চে গর্ভপাতের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তানিয়া শেঠ বলেন, "আজ কিন্তু আমরা সেই দিনটা দেখছি। চোখের সামনে ঘটেও যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একজনের ডেঙ্গিও হয়েছে। এবং অতনু মিস্ত্রির মতো আমরা আরও একজনকে হারিয়েছি। যে পৃথিবীর আলো দেখেনি, মায়ের গর্ভে এসে সেখান থেকেই চলে গেছে। এটাও আমি মার্ডারই বলব। সারারাত বৃষ্টি মাথায় নিয়েও আমরা লড়াই করছি। আমরা অতনু মিস্ত্রিকে হারিয়েছি, আমরা সেই শিশুটাকে হারিয়েছি। আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ যে, আমরা কেউ এখান থেকে উঠব না যতক্ষণ না আমাদের দাবি মানা হচ্ছে। গেজেট অনুযায়ী, সরকারের নিয়ম মেনে আমাদের চাকরিটা দেওয়া হোক। আমরা আমাদের অধিকারটা ছিনিয়ে নেব।" অনুষ্ঠান মঞ্চ জুড়ে জালানো হয় মোমবাতি। আত্মঘাতীদের ছবির নিচে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
গতকাল তাঁদের প্রতি অমানবিক আচরণ করার অভিযোগ তোলা হয় অনশনকারীদের তরফে। তানিয়া শেঠ বলেন, "মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি হরপ্রসাদ সমাদ্দার। তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের সমর্থন করেছেন। আমাদের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন। আমাদের কয়েকজনের প্রতিনিধি দল গতকাল শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে গেছিলাম। তিনি আমাদের কথা শুনে মর্মাহত হয়েছেন। এসব দেখে একটা কথাই বলব, কোথাও যেন একটা মানবিক দিক ভেসে উঠছে যে আমাদের সঙ্গে এরকম করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আর একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইব। আমাদের এখানে কিন্তু প্রথম থেকে মাথার উপরে ছাদ ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু আমরা যদি দেখি, আমাদের আশপাশে যে ধরনা মঞ্চগুলো তৈরি হয়েছে, সেখানে রীতিমতো ছাদ দিয়ে, ফ্যান চালিয়ে, লাইট দিয়ে ধরনা মঞ্চ করা হচ্ছে। কিন্তু, আমরা এখানে দিনের পর দিন কাটাচ্ছি।"
অতনু মিস্ত্রির পথে না হাঁটার বিষয়ে তানিয়া বলেন, "এক্ষেত্রে একটা কথা বলব। আমরা অতনু মিস্ত্রির পথে পা বাড়াব না ঠিকই, কিন্তু যদি আমাদের দাবি না মানা হয় তাহলে আমরা কেউ উঠব না। দিনের পর দিন থাকতে থাকতে আমরা একদিন মরে যাব। সেক্ষেত্রেও কিন্তু এটা একটা মার্ডারের পর্যায়ে যাবে। আর সত্যিই যদি আমাদের চাকরি না দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু আমরা এখানেই বসে থাকব এবং এখানেই মৃত্যুবরণ করব। আমাদের যে লাশগুলো পড়ে থাকবে সেগুলো কফিনবন্দি করে আমাদের বাড়িতে পাঠাতে হবে।"