ETV Bharat / state

হাত কাঁপছে, কথা জড়াচ্ছে ? ভাববেন না আপনি পারকিনসন্সে আক্রান্ত

কলকাতার মল্লিকবাজারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, "রোগীর হাত কাঁপছে । কথা জড়িয়ে যাচ্ছে । এসব রোগে আক্রান্ত রোগীরা পারকিনসন্সে আক্রান্ত নন । এটি আসলে জিনঘটিত রোগ ।"

চিকিৎসক
author img

By

Published : Jul 27, 2019, 6:35 PM IST

কলকাতা, 27 জুলাই : রোগীর হাত কাঁপছে । কথা জড়িয়ে যাচ্ছে । শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারছেন না রোগী । এমন বিভিন্ন উপসর্গ দেখে মনে হতে পারে, এই রোগী পারকিনসন্সে আক্রান্ত । কিন্তু, না । কলকাতার মল্লিকবাজারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগটি পারকিনসন্স নয় । এটি আসলে জিনঘটিত একটি রোগ । আশ্চর্যের বিষয়, ভারতের বাইরে বিশ্বজুড়ে বিরল এই রোগটি এদেশের একটি কমিউনিটির মানুষের মধ্যেই বেশি দেখা যাচ্ছে ।


বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "এই রোগের নাম SCA 12 (Spinocerebellar Ataxia Type-12) । এই রোগের ক্ষেত্রে হাত কাঁপা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারা, এ সব উপসর্গ দেখা দেয় ।" এ দেশের কেন একটি কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যাচ্ছে? তিনি বলেন, "জেনেটিক কারণে এই রোগ হয় । জিনের অস্বাভাবিকতা এবং ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ না হওয়ার জন্য বেশি দেখা যাচ্ছে ।"

2011-য় আগরওয়াল কমিউনিটির 58 বছরের এক ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালটিতে এসেছিলেন চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমারের কাছে । এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যক্তির হাত কাঁপত এবং যখন তিনি হাঁটতেন, তখন তাঁর শরীরের ভারসাম্য থাকত না । এই সমস্যাগুলি আস্তে আস্তে বাড়ছিল । এর ফলে এই রোগীর ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল । দেশ-বিদেশের বহু চিকিৎসকের কাছে গিয়েও তিনি কোনও স্পষ্ট উত্তর পাচ্ছিলেন না । রোগী পারকিনসন্স-এ আক্রান্ত বলে ওইসব চিকিৎসক জানিয়েছিলেন । সুস্থ থাকার জন্য উচ্চমাত্রায় তাঁকে ওষুধও দেওয়া হয়েছিল । পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে হাঁটার জন্য এই রোগীর ক্ষেত্রে ওয়াকারের প্রয়োজন দেখা দেয় ।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বুঝতে পারেন এই রোগী পারকিনসন্স-এ আক্রান্ত নন । পরিবারের অন্য কারও এই ধরনের সমস্যা রয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তাঁর বাবা, কাকা এবং দাদুর ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যা ছিল । রক্ত পরীক্ষা করে চিহ্নিত হয় এই রোগী SCA 12-এ আক্রান্ত । এর পর থেকে এই ধরনের 110 জন রোগীর খোঁজ তিনি পেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার । তিনি বলেন, "এই রোগটির অস্তিত্ব অনেক আগে থেকেই ছিল । কিন্তু চিহ্নিত হচ্ছিল না । 2008-এ প্রথম এই রোগটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে জার্মানিতে । এর পরে পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায় ভারতে এই রোগের খোঁজ বেশি পাওয়া যায় । এর আগে যে এই রোগের অস্তিত্ব ছিল না, তা নয় । এই রোগের উপসর্গগুলি পারকিনসন্সের উপসর্গগুলির মতো । যে কারণে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হতো পারকিনসন্স মনে করে । যখন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে জিনগত কারণে এটি একটি পৃথক রোগ, তার পর থেকে অন্যান্য রোগীদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে । তবে এই রোগটি চিহ্নিত করা গেলেও এখনও পর্যন্ত এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোনও ওষুধ নেই । মারোয়ারি কমিউনিটির মধ্যে বিশেষ করে আগরওয়াল কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই রোগটি যে বেশি দেখা যাচ্ছে, তা ধরা পড়ে 2011-12-তে । তাঁদের মধ্যে SCA 1, SCA 3-ও দেখা যায় । তবে, ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশে SCA 12 বিরল । ভারতে এ রোগটি অনেক বেশি দেখা যায় ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "তুলনায় অনেক কম হলেও, অন্যান্য কমিউনিটির মানুষের মধ্যেও এই রোগ হয় । আমার কাছে আসা এই রোগে আক্রান্ত 100 জনের মধ্যে 99 জন মারোয়ারি কমিউনিটির ।"

ওষুধ নেই । তা হলে কীভাবে এখন এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "এই রোগ সারিয়ে তোলার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ নেই । উপসর্গগুলির উন্নতির জন্য আমরা কিছু ওষুধ দিই । ফিজিওথেরাপিও করানো হয় । মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণত 50 বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে এই রোগটি দেখা যায় বলেও তিনি জানিয়েছেন ।

কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত 110 জনের খোঁজ পাওয়া গেলেও, এ দেশের কোথায়, কতজন এই রোগে আক্রান্ত, তার কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত নেই । আগামী দিনে কীভাবে এগোনো হবে এই রোগের বিষয়ে, তার জন্য দেশজুড়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হচ্ছে ।"

হাসপাতাল চেয়ারম্যান, চিকিৎসক আর পি সেনগুপ্ত বলেন, "মারোয়ারি কমিউনিটির মধ্যে রয়েছে আগরওয়াল কমিউনিটি । এই আগারওয়াল কমিউনিটির মধ্যে একটি জিন পাওয়া গেছে । জিনটির সঙ্গে এই রোগটি (SCA 12)-র সম্পর্ক ধরা পড়েছে । কিন্তু, এর মানে এটা প্রমাণ করে নয় যে, মারোয়ারি কমিউনিটির অন্যান্যদের মধ্যে বা মারোয়ারি কমিউনিটির বাইরের অন্য কারও মধ্যে এই রোগটি নেই ।" রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই । রোগনির্ণয় হচ্ছে । কিন্তু চিকিৎসা কী? তিনি বলেন, "আমি আশাবাদী । কারণ, জিন থেরাপি করে আজকাল অনেক রোগের চিকিৎসা হয় । এই জিনের যদি একটি সলিউশন পাওয়া যায়, জিন মডিউলেশন করে হয়তো একদিন এই রোগের ওষুধ পাওয়া যাবে, তখন রোগ সেরে যাবে ।" হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত 110 জন রোগীর খোঁজ মিলেছে । এখানে গবেষণাও চলছে । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক আর পি সেনগুপ্ত বলেন, "কেউ মনে করছেন এটা পারকিনসন্স । কেউ মনে করছেন শরীরের ব্যালেন্স ঠিক না থাকার জন্য স্পাইনাল কর্ডের কোনও সমস্যা ।" এই রোগে আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করে, তাঁদের চিকিৎসা এবং আগামী দিনে কীভাবে এই রোগটিকে সারিয়ে তোলা যায়, এসব বিষয়ে একটি কনসর্টিয়াম গড়ে তোলার কথাও তিনি জানান ।

এই কনসর্টিয়ামে অংশগ্রহণ করছেন কুইন্স স্কয়্যারের চিকিৎসক কৈলাশ ভাটিয়া । তিনি বলেন, "এই রোগের কারণে শরীরের ব্যালেন্সের সমস্যা দেখা দেয় । এই রোগটি ভারতের নির্দিষ্ট একটি কমিউনিটির মধ্যে দেখা যাচ্ছে । এ দেশের বাইরে বিশ্বজুড়ে এই রোগটি বিরল । একটি কনসর্টিয়াম গঠনের জন্য আমরা জমায়েত হয়েছি । ভারতে এই রোগে আক্রান্তদের রেজিস্ট্রেশন করানো হবে, যাতে গবেষণায় সুবিধা হয় ।" একই সঙ্গে তিনি জানান, এই রোগটির বিষয়ে অন্যান্য চিকিৎসকদেরও সচেতন করে তোলা জরুরি । যাতে, উপসর্গগুলি দেখে পারকিনসন্স না ভেবে রোগটি চিহ্নিত করা যায় । শুধুমাত্র তাই নয়, আগামী দিনে কীভাবে এই রোগটিকে সারিয়ে তোলা যায় এবং তার জন্য গবেষণাও যাতে সঠিক পথে চলতে পারে এ সব বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ।

কলকাতা, 27 জুলাই : রোগীর হাত কাঁপছে । কথা জড়িয়ে যাচ্ছে । শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারছেন না রোগী । এমন বিভিন্ন উপসর্গ দেখে মনে হতে পারে, এই রোগী পারকিনসন্সে আক্রান্ত । কিন্তু, না । কলকাতার মল্লিকবাজারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগটি পারকিনসন্স নয় । এটি আসলে জিনঘটিত একটি রোগ । আশ্চর্যের বিষয়, ভারতের বাইরে বিশ্বজুড়ে বিরল এই রোগটি এদেশের একটি কমিউনিটির মানুষের মধ্যেই বেশি দেখা যাচ্ছে ।


বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "এই রোগের নাম SCA 12 (Spinocerebellar Ataxia Type-12) । এই রোগের ক্ষেত্রে হাত কাঁপা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারা, এ সব উপসর্গ দেখা দেয় ।" এ দেশের কেন একটি কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যাচ্ছে? তিনি বলেন, "জেনেটিক কারণে এই রোগ হয় । জিনের অস্বাভাবিকতা এবং ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ না হওয়ার জন্য বেশি দেখা যাচ্ছে ।"

2011-য় আগরওয়াল কমিউনিটির 58 বছরের এক ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালটিতে এসেছিলেন চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমারের কাছে । এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যক্তির হাত কাঁপত এবং যখন তিনি হাঁটতেন, তখন তাঁর শরীরের ভারসাম্য থাকত না । এই সমস্যাগুলি আস্তে আস্তে বাড়ছিল । এর ফলে এই রোগীর ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল । দেশ-বিদেশের বহু চিকিৎসকের কাছে গিয়েও তিনি কোনও স্পষ্ট উত্তর পাচ্ছিলেন না । রোগী পারকিনসন্স-এ আক্রান্ত বলে ওইসব চিকিৎসক জানিয়েছিলেন । সুস্থ থাকার জন্য উচ্চমাত্রায় তাঁকে ওষুধও দেওয়া হয়েছিল । পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে হাঁটার জন্য এই রোগীর ক্ষেত্রে ওয়াকারের প্রয়োজন দেখা দেয় ।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বুঝতে পারেন এই রোগী পারকিনসন্স-এ আক্রান্ত নন । পরিবারের অন্য কারও এই ধরনের সমস্যা রয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তাঁর বাবা, কাকা এবং দাদুর ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যা ছিল । রক্ত পরীক্ষা করে চিহ্নিত হয় এই রোগী SCA 12-এ আক্রান্ত । এর পর থেকে এই ধরনের 110 জন রোগীর খোঁজ তিনি পেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার । তিনি বলেন, "এই রোগটির অস্তিত্ব অনেক আগে থেকেই ছিল । কিন্তু চিহ্নিত হচ্ছিল না । 2008-এ প্রথম এই রোগটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে জার্মানিতে । এর পরে পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায় ভারতে এই রোগের খোঁজ বেশি পাওয়া যায় । এর আগে যে এই রোগের অস্তিত্ব ছিল না, তা নয় । এই রোগের উপসর্গগুলি পারকিনসন্সের উপসর্গগুলির মতো । যে কারণে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হতো পারকিনসন্স মনে করে । যখন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে জিনগত কারণে এটি একটি পৃথক রোগ, তার পর থেকে অন্যান্য রোগীদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে । তবে এই রোগটি চিহ্নিত করা গেলেও এখনও পর্যন্ত এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোনও ওষুধ নেই । মারোয়ারি কমিউনিটির মধ্যে বিশেষ করে আগরওয়াল কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই রোগটি যে বেশি দেখা যাচ্ছে, তা ধরা পড়ে 2011-12-তে । তাঁদের মধ্যে SCA 1, SCA 3-ও দেখা যায় । তবে, ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশে SCA 12 বিরল । ভারতে এ রোগটি অনেক বেশি দেখা যায় ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "তুলনায় অনেক কম হলেও, অন্যান্য কমিউনিটির মানুষের মধ্যেও এই রোগ হয় । আমার কাছে আসা এই রোগে আক্রান্ত 100 জনের মধ্যে 99 জন মারোয়ারি কমিউনিটির ।"

ওষুধ নেই । তা হলে কীভাবে এখন এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "এই রোগ সারিয়ে তোলার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ নেই । উপসর্গগুলির উন্নতির জন্য আমরা কিছু ওষুধ দিই । ফিজিওথেরাপিও করানো হয় । মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণত 50 বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে এই রোগটি দেখা যায় বলেও তিনি জানিয়েছেন ।

কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত 110 জনের খোঁজ পাওয়া গেলেও, এ দেশের কোথায়, কতজন এই রোগে আক্রান্ত, তার কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত নেই । আগামী দিনে কীভাবে এগোনো হবে এই রোগের বিষয়ে, তার জন্য দেশজুড়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হচ্ছে ।"

হাসপাতাল চেয়ারম্যান, চিকিৎসক আর পি সেনগুপ্ত বলেন, "মারোয়ারি কমিউনিটির মধ্যে রয়েছে আগরওয়াল কমিউনিটি । এই আগারওয়াল কমিউনিটির মধ্যে একটি জিন পাওয়া গেছে । জিনটির সঙ্গে এই রোগটি (SCA 12)-র সম্পর্ক ধরা পড়েছে । কিন্তু, এর মানে এটা প্রমাণ করে নয় যে, মারোয়ারি কমিউনিটির অন্যান্যদের মধ্যে বা মারোয়ারি কমিউনিটির বাইরের অন্য কারও মধ্যে এই রোগটি নেই ।" রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই । রোগনির্ণয় হচ্ছে । কিন্তু চিকিৎসা কী? তিনি বলেন, "আমি আশাবাদী । কারণ, জিন থেরাপি করে আজকাল অনেক রোগের চিকিৎসা হয় । এই জিনের যদি একটি সলিউশন পাওয়া যায়, জিন মডিউলেশন করে হয়তো একদিন এই রোগের ওষুধ পাওয়া যাবে, তখন রোগ সেরে যাবে ।" হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত 110 জন রোগীর খোঁজ মিলেছে । এখানে গবেষণাও চলছে । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক আর পি সেনগুপ্ত বলেন, "কেউ মনে করছেন এটা পারকিনসন্স । কেউ মনে করছেন শরীরের ব্যালেন্স ঠিক না থাকার জন্য স্পাইনাল কর্ডের কোনও সমস্যা ।" এই রোগে আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করে, তাঁদের চিকিৎসা এবং আগামী দিনে কীভাবে এই রোগটিকে সারিয়ে তোলা যায়, এসব বিষয়ে একটি কনসর্টিয়াম গড়ে তোলার কথাও তিনি জানান ।

এই কনসর্টিয়ামে অংশগ্রহণ করছেন কুইন্স স্কয়্যারের চিকিৎসক কৈলাশ ভাটিয়া । তিনি বলেন, "এই রোগের কারণে শরীরের ব্যালেন্সের সমস্যা দেখা দেয় । এই রোগটি ভারতের নির্দিষ্ট একটি কমিউনিটির মধ্যে দেখা যাচ্ছে । এ দেশের বাইরে বিশ্বজুড়ে এই রোগটি বিরল । একটি কনসর্টিয়াম গঠনের জন্য আমরা জমায়েত হয়েছি । ভারতে এই রোগে আক্রান্তদের রেজিস্ট্রেশন করানো হবে, যাতে গবেষণায় সুবিধা হয় ।" একই সঙ্গে তিনি জানান, এই রোগটির বিষয়ে অন্যান্য চিকিৎসকদেরও সচেতন করে তোলা জরুরি । যাতে, উপসর্গগুলি দেখে পারকিনসন্স না ভেবে রোগটি চিহ্নিত করা যায় । শুধুমাত্র তাই নয়, আগামী দিনে কীভাবে এই রোগটিকে সারিয়ে তোলা যায় এবং তার জন্য গবেষণাও যাতে সঠিক পথে চলতে পারে এ সব বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ।

Intro:কলকাতা, ২৬ জুলাই: রোগীর হাত কাঁপছে। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারছেন না রোগী। এমন বিভিন্ন উপসর্গ দেখে মনে হতে পারে, এই রোগী পারকিনসন্স-এ আক্রান্ত। কিন্তু, না। কলকাতার মল্লিকবাজারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগটি পারকিনসন্স নয়। এটি আসলে জিনঘটিত একটি রোগ। এবং, আশ্চর্যের বিষয়, ভারতের বাইরে বিশ্বজুড়ে বিরল এই রোগটি এদেশের একটি কমিউনিটির মানুষের মধ্যেই এই বেশি দেখা যাচ্ছে।
Body:কলকাতার বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "এই রোগের নাম SCA12 (Spinocerebellar Ataxia Type-12)। হাত কাঁপা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারা, এ সব উপসর্গ দেখা দেয়।" এ দেশের কেন একটি কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যাচ্ছে? তিনি বলেন, "জেনেটিক কারণে এই রোগ হয়। জিনের অস্বাভাবিকতা এবং, ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ না হওয়ার জন্য বেশি দেখা যাচ্ছে।" ২০১১-য় আগরওয়াল কমিউনিটির ৫৮ বছরের এক ব্যক্তি বেসরকারি এই হাসপাতালে এসেছিলেন চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমারের কাছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যক্তির হাত কাঁপত এবং যখন তিনি হাঁটতেন, তখন তাঁর শরীরের ভারসাম্য থাকত না। এই সমস্যাগুলি ধীরে ধীরে বাড়ছিল। এর ফলে এই রোগীর ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়ীর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। দেশ-বিদেশের বহু চিকিৎসকের কাছে তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই চিকিৎসকদের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনও উত্তর পাচ্ছিলেন না তিনি। এই রোগী পারকিনসন্স-এ আক্রান্ত বলে ওইসব চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। সুস্থ থাকার জন্য উচ্চমাত্রায় তাঁকে ওষুধও দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে হাঁটার জন্য এই রোগীর ক্ষেত্রে ওয়াকারের প্রয়োজন দেখা দেয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বুঝতে পারেন এই রোগে পারকিনসন্স-এ আক্রান্ত নন। এই রোগীর পরিবারের অন্য কারও এই ধরনের সমস্যা রয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তাঁর বাবা, কাকা এবং দাদুর ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যা ছিল। এর পরে রক্ত পরীক্ষা করে চিহ্নিত হয় এই রোগী SCA12-এ আক্রান্ত। এর পর থেকে এই ধরনের ১১০ জন রোগীর খোঁজ তিনি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার। এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই রোগটির অস্তিত্ব অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু চিহ্নিত হচ্ছিল না। তিনি বলেন, "২০০৮-এ প্রথম এই রোগটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে জার্মানিতে। এর পরে পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায় ভারতে এই রোগের খোঁজ বেশি পাওয়া যায়। এর আগে যে এই রোগের অস্তিত্ব ছিল না, তা নয়। এই রোগের উপসর্গগুলি পারকিনসন্স-এর উপসর্গগুলির মতো। যে কারণে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হতো পারকিনসন্স মনে করে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "যখন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে জিনগত কারণে এটি একটি পৃথক রোগ, তার পর থেকে অন্যান্য রোগীদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। কারণ রোগটি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। তবে এই রোগটি চিহ্নিত করা গেলেও এখনও পর্যন্ত এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোনও ওষুধ নেই।"

চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "মারোয়ারি কমিউনিটির মধ্যে বিশেষ করে আগরওয়াল কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই রোগটি যে বেশি দেখা যাচ্ছে, তা ধরা পড়ে ২০১১-'১২-তে। SCA1, SCA3 দেখা যায়। তবে, ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশে SCA12 বিরল। যদিও ভারতে এ রোগটি অনেক বেশি দেখা যায়।" একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, "মারোয়ারি কমিউনিটির মধ্যে বিশেষ করে আগরওয়াল কমিউনিটির ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। তবে, তুলনায় অনেক কম হলেও, অন্যান্য কমিউনিটির মানুষের মধ্যেও এই এই রোগ হয়। আমার কাছে আসা এই রোগে আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন মারোয়ারি কমিউনিটির।" ওষুধ নেই। তা হলে কীভাবে এখন এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "এই রোগ সারিয়ে তোলার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ নেই। উপসর্গগুলির উন্নতির জন্য আমরা কিছু ওষুধ দিই। ফিজিওথেরাপিও করানো হয়।" মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে এই রোগটি দেখা যায় বলেও তিনি জানিয়েছেন।

কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত ১১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেলেও, এ দেশের কোথায়, কতজন এই রোগে আক্রান্ত, তার কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত নেই। এ দেশের কোথায়, কতজন এই রোগে আক্রান্ত এবং আগামী দিনে কীভাবে এগোনো হবে এই রোগের বিষয়ে, তার জন্য দেশজুড়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করা হচ্ছে। এই রোগের চিকিৎসা এবং গবেষণার বিষয়ে কীভাবে আগামী দিনে এগোনো হবে, সে বিষয়ে কাজ শুরু হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এই চিকিৎসক। কলকাতার বেসরকারি এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান, চিকিৎসক আর পি সেনগুপ্ত বলেন, "মারোয়ারি কমিউনিটির মধ্যে রয়েছে আগরওয়াল কমিউনিটি। এই আগারওয়াল কমিউনিটির মধ্যে একটি জিন পাওয়া গিয়েছে। এই জিনটির সঙ্গে এই রোগটি (SCA12)-র সম্পর্ক ধরা পড়েছে। কিন্তু, এর মানে এটা প্রমাণ করে না যে, মারোয়ারি কমিউনিটির অন্যান্যদের মধ্যে বা মারোয়ারি কমিউনিটির বাইরের অন্য কারও মধ্যে এই রোগটি নেই।"

একই সঙ্গে এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান বলেন, "রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। রোগনির্ণয় হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা কী?" তিনি বলেন, "আমি আশাবাদী। কারণ, জিন থেরাপি করে আজকাল অনেক রোগের চিকিৎসা হয়। এই জিনের যদি একটি সলিউশন পাওয়া যায়, জিন মডিউলেশন করে হয়তো একদিন এই রোগের ওষুধ পাওয়া যাবে, তখন রোগ সেরে যাবে।" এই হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত ১১০ জন রোগীর খোঁজ মিলেছে। এখানে গবেষণাও চলছে। এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক আর পি সেনগুপ্ত বলেন, "কেউ মনে করছেন এটা পারকিনসন্স। কেউ মনে করছেন শরীরের ব্যালেন্স ঠিক না থাকার জন্য স্পাইনাল কর্ডের কোনও সমস্যা।" এই রোগে আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করে, তাঁদের চিকিৎসা এবং, আগামী দিনে কীভাবে এই রোগটিকে সারিয়ে তোলা যায়, এসব বিষয়ে একটি কনসর্টিয়াম গড়ে তোলার কথা শুক্রবার জানিয়েছেন বেসরকারি এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান।Conclusion:এই কনসর্টিয়ামে অংশগ্রহণ করছেন কুইন্স স্কয়্যার লন্ডনের চিকিৎসক কৈলাশ ভাটিয়া। তিনি বলেন, "এই রোগের কারণে শরীরের ব্যালেন্সের সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগটি ভারতের নির্দিষ্ট একটি কমিউনিটির মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এ দেশের বাইরে বিশ্বজুড়ে এই রোগটি বিরল। একটি কনসর্টিয়াম গঠনের জন্য আমরা জমায়েত হয়েছি। ভারতে এই রোগে আক্রান্তদের রেজিস্ট্রেশন করানো হবে, যাতে গবেষণায় সুবিধা হয়।" একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই রোগটির বিষয়ে অন্যান্য চিকিৎসকদেরও সচেতন করে তোলা জরুরি। যাতে, উপসর্গগুলি কারণে পারকিনসন্স না ভেবে এই রোগটি চিহ্নিত হতে পারে। শুধুমাত্র তাই নয়। আগামী দিনে কীভাবে এই রোগটিকে সারিয়ে তোলা যায়, এবং, তার জন্য গবেষণাও যাতে সঠিক পথে চলতে পারে, এ সব বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানিয়েছেন।
_______

বাইট:
wb_kol_02a_rare_disease_agarwal_byte_7203421
চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমারের বক্তব্য

wb_kol_02e_rare_disease_agarwal_byte_7203421
চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমারের বক্তব্য

wb_kol_02b_rare_disease_agarwal_byte_7203421
চিকিৎসক আর পি সেনগুপ্তর বক্তব্য

wb_kol_02c_rare_disease_agarwal_byte_7203421
চিকিৎসক কৈলাশ ভাটিয়ার বক্তব্য

ছবি:
wb_kol_02d_rare_disease_agarwal_pic_7203421




ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.