ETV Bharat / state

"বাংলা কেন নেই ধ্রুপদী ভাষায় ?", NEP লাগুতে সময় চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী

এখনই রাজ্য যে জাতীয় শিক্ষানীতি লাগু করার বিষয়ে ভাবছে না তাও আজকের বৈঠকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে । চাওয়া হয়েছে সময় । যাতে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করে মতামত জানাতে পারে ।

education_minister
শিক্ষামন্ত্রী
author img

By

Published : Sep 7, 2020, 8:43 PM IST

Updated : Sep 7, 2020, 10:35 PM IST

কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর : আজ সকালে জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করল কেন্দ্রীয় সরকার । বৈঠকে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক উপস্থিত ছিলেন। আজকের বৈঠকে একাধিক রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় উপস্থিত ছিলেন । বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে রাজ্যের কোন কোন জায়গায় আপত্তি রয়েছে তা তুলে ধরেন । মূলত, শিক্ষাকে কেন্দ্রীকরণ করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও শিক্ষা যুগ্ম তালিকায় থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ধ্বংস করে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই NEP করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তিনি । বৈঠকে NEP 2020 নিয়ে আরও আলোচনা ও তাঁর জন্য যথোপযুক্ত সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ।

কেন্দ্রের আয়োজিত বৈঠকে প্রথমেই NEP 2020 নিয়ে রাজ্যের আপত্তির জায়গাগুলো তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী । তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, "NEP 2020-র একাধিক বিধি নিয়ে রাজ্যের রিজ়ার্ভেশন আছে । যেমন, প্রস্তাবিত মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজ সিস্টেম, স্নাতক কোর্সে ভরতির জন্য সর্বভারতীয় স্তরে কমন টেস্ট কনসেপ্ট, বহুস্তরীয় স্নাতক প্রোগ্রাম, এম ফিল কোর্স বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি ।" তারপরই শিক্ষার কেন্দ্রীয়করণ নিয়ে রাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, উচ্চশিক্ষাকে কেন্দ্রীয়করণ, বাণিজ্যিকীকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে । আমাদের দেশে, বিশেষ করে আমাদের রাজ্যের কোনও মতামত না নিয়ে যেভাবে শুধু কেন্দ্রীয়করণের চেষ্টা দেখলাম, আমরা তার বিরুদ্ধে । এর ফলে রাজ্যগুলির ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে । আমরা এটাও বলেছি যে, শিক্ষাকে কেন্দ্রীকরণ করবার যে কথা তাঁরা বলেছেন সেটা আমাদের এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে, যা যুগ্ম তালিকায় আছে তাকে ধ্বংস করবে । এই কেন্দ্রীয়নীতি আমাদের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে, বিভিন্ন ভাষাভাষীর দেশে, বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত রাজ্যের, মানুষের কাছে, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছাতে গেলে যে নমনীয়তার দরকার, ইমপ্লিমেন্টেশনের সময় সেই নমনীয়তার কথা এখানে বলা নেই । বরঞ্চ এটা ফেডেরাল স্ট্রাকচারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে । ফেডেরাল স্ট্রাকচারের যে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ সেই রক্ষাকবচকে রক্ষা করছে না এই নীতি । সমস্তভাবে কেন্দ্রীয়করণ করবার যে বিধিগুলো আমরা পছন্দ করছি না সেগুলো জানিয়েছি এবং তার প্রতিবাদ জানিয়েছি ।"

NEP লাগু করতে গেলে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য যে অর্থ লাগবে তা কে দেবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় রাজ্যের তরফে । শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "বলা হচ্ছে GDP-র 6 শতাংশ । কিন্তু, এই ফান্ডটা কীভাবে আসবে ? এই ফান্ডটা কে দেবে? শুধু তাই নয়, কেন্দ্র-রাজ্যের শেয়ারের ব্যাপারটাও এখানে বলা হয়নি । তাই এখানে যে কিছু ব্যাপক কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে এবং শিক্ষা পদ্ধতি বদলের কথা বলা হয়েছে, এর আর্থিক দায়িত্ব কতটা কেন্দ্রের ও কতটা রাজ্যের তা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না ‌। আমরা আমাদের প্রতিবাদ আগেও জানিয়েছি, আজকেও বৈঠকে বলেছি ।"

ধ্রুপদী ভাষার মধ্যে বাংলা স্থান না পাওয়ার বিরোধিতা প্রথম থেকেই করে আসছে রাজ্য । আজকের বৈঠকেও সেই কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "ক্ল্যাসিকাল ভাষার মধ্যে বাংলা নেই । রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তারাশংকর, বঙ্কিমচন্দ্র, কার নাম বলব? বাংলার যে বিশাল ঐতিহ্যের সাহিত্য ভাণ্ডার বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে, জাতীয় সংগীত করেছেন, সেই রাজ্যের ভাষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে । আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে তালিকায় এনে সংশোধন করার কথা আমরা বলেছি ।"

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার NEP-র মাধ্যমে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ধ্বংস করার চেষ্টার কথা বলেন । পাশাপাশি, বর্তমানে জাতীয় শিক্ষানীতি নয়, COVID-19 নিয়ে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন তিনি । তাঁর বক্তব্য, "যখন COVID-19 চলছে এই পরিস্থিতিতে আগ্রহ এবং জোরের সঙ্গে তাঁরা জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করছেন । অথচ গুরুত্ব দিচ্ছেন না COVID-19-কে কীভাবে রোখা যায়, কীভাবে সকলে মিলে মানুষের জীবন, মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় । এটা আগে আলোচনা করা দরকার । এই সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন COVID-19 নিয়ে আলোচনা করা । রাষ্ট্রপতির সামনে আমরা সেই কথাও বলেছি । কোরোনা যখন চলছে তখন তাড়াহুড়ো না করে কোরোনার বিষয়টাকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা উচিত । এটা আমাদের আবেদন ।"

এখনই রাজ্য যে জাতীয় শিক্ষানীতি লাগু করার বিষয়ে ভাবছে না তাও আজকের বৈঠকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে । চাওয়া হয়েছে সময় । যাতে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করে মতামত জানাতে পারে । এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এই সময়ে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দেওয়া হোক । যাতে আমরা NEP 2020 নিয়ে সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁদের জানাতে পারি । আমরা প্রাথমিকভাবে একটা চিঠি আগেও দিয়েছি, আরেকবার দিচ্ছি । কিন্তু, আমরা সময় চাইছি যে, এর উপর আরও অনেক বেশি আলাপ আলোচনা করা হোক । আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, আমরা লাখ লাখ লোকের সঙ্গে আলোচনা করেছি । আমি তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই যে, আপনি আলোচনা করেছেন ঠিকই, হয়ত সত্যিই। কিন্তু, যুগ্ম তালিকায় থাকায় আলোচনা হয় রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের। রাজ্যের বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া একদিক থেকে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ। যুগ্ম তালিকায় থাকায় ফেডেরাল স্ট্রাকচারকে সম্মান দিতে গেলে আপনাকে অনুরোধ করব রাজ্যগুলির বক্তব্য রাজ্যগুলির মাধ্যমেই আপনাদের কাছে পৌঁছাক এবং কতটুকু গ্রহণ করতে পারবেন সেটাও আমাদের জানান। তার জন্য সময় দরকার। আমরা কোরোনা নিয়ে লড়ব, না এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকব। তাই আমরা বলছি আমাদের সময় দেওয়া হোক। রাষ্ট্রপতিজিকে বলছি, আপনি যেমনভাবে উদ্যোগ নিয়ে সবাইকে ডাকলেন, রাজ্যপালদের ডাকলেন, এই যে আলাপ আলোচনা হল, সেই আলোচনায় আমরা যে অনুরোধ জানালাম, সময় নেওয়ার যে অনুরোধ জানালাম, সেই সময়টুকু আমাদের দেওয়া হোক। আমাদের রিজ়ার্ভেশন, আমাদের আপত্তি, জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে বিভিন্ন বিধিতে আছে, সেই বিধিগুলোর পরিবর্তন না হলে জাতীয় শিক্ষানীতি জাতীয়তা হারাবে। আমরা জাতীয় শিক্ষানীতিতে আমাদের আপত্তির জায়গাগুলোকে নিয়ে আলোচনা না করে তড়িঘড়ি এই কোরোনা আবহে করার পক্ষপাতী নই।"

NEP লাগুতে সময় চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী

1 থেকে 18 অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে। কিন্তু, অক্টোবরে পরীক্ষা নিতে গেলে প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনের। সেই অনুমোদন কি পাওয়া গেছে? আজ সাংবাদিক বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, "আমরা একটা চিঠি পাঠাব। উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেই আমরা দিন ঠিক করেছি। আমরা চিঠি পাঠাব। সুপ্রিম কোর্ট যেটা বলেছে তা মান্যতা দিতে বলব UGC-কে। আমরা আবেদন জানিয়েছি, যেহেতু ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট বলছে সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়, সেই কথা মাথায় রেখে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করব অক্টোবরের প্রথম এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে যাদের যে পরীক্ষা বাকি আছে, সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে বলেছে, তাঁরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে।"

কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর : আজ সকালে জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করল কেন্দ্রীয় সরকার । বৈঠকে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক উপস্থিত ছিলেন। আজকের বৈঠকে একাধিক রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় উপস্থিত ছিলেন । বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে রাজ্যের কোন কোন জায়গায় আপত্তি রয়েছে তা তুলে ধরেন । মূলত, শিক্ষাকে কেন্দ্রীকরণ করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও শিক্ষা যুগ্ম তালিকায় থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ধ্বংস করে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই NEP করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তিনি । বৈঠকে NEP 2020 নিয়ে আরও আলোচনা ও তাঁর জন্য যথোপযুক্ত সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ।

কেন্দ্রের আয়োজিত বৈঠকে প্রথমেই NEP 2020 নিয়ে রাজ্যের আপত্তির জায়গাগুলো তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী । তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, "NEP 2020-র একাধিক বিধি নিয়ে রাজ্যের রিজ়ার্ভেশন আছে । যেমন, প্রস্তাবিত মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজ সিস্টেম, স্নাতক কোর্সে ভরতির জন্য সর্বভারতীয় স্তরে কমন টেস্ট কনসেপ্ট, বহুস্তরীয় স্নাতক প্রোগ্রাম, এম ফিল কোর্স বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি ।" তারপরই শিক্ষার কেন্দ্রীয়করণ নিয়ে রাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, উচ্চশিক্ষাকে কেন্দ্রীয়করণ, বাণিজ্যিকীকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে । আমাদের দেশে, বিশেষ করে আমাদের রাজ্যের কোনও মতামত না নিয়ে যেভাবে শুধু কেন্দ্রীয়করণের চেষ্টা দেখলাম, আমরা তার বিরুদ্ধে । এর ফলে রাজ্যগুলির ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে । আমরা এটাও বলেছি যে, শিক্ষাকে কেন্দ্রীকরণ করবার যে কথা তাঁরা বলেছেন সেটা আমাদের এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে, যা যুগ্ম তালিকায় আছে তাকে ধ্বংস করবে । এই কেন্দ্রীয়নীতি আমাদের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে, বিভিন্ন ভাষাভাষীর দেশে, বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত রাজ্যের, মানুষের কাছে, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছাতে গেলে যে নমনীয়তার দরকার, ইমপ্লিমেন্টেশনের সময় সেই নমনীয়তার কথা এখানে বলা নেই । বরঞ্চ এটা ফেডেরাল স্ট্রাকচারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে । ফেডেরাল স্ট্রাকচারের যে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ সেই রক্ষাকবচকে রক্ষা করছে না এই নীতি । সমস্তভাবে কেন্দ্রীয়করণ করবার যে বিধিগুলো আমরা পছন্দ করছি না সেগুলো জানিয়েছি এবং তার প্রতিবাদ জানিয়েছি ।"

NEP লাগু করতে গেলে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য যে অর্থ লাগবে তা কে দেবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় রাজ্যের তরফে । শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "বলা হচ্ছে GDP-র 6 শতাংশ । কিন্তু, এই ফান্ডটা কীভাবে আসবে ? এই ফান্ডটা কে দেবে? শুধু তাই নয়, কেন্দ্র-রাজ্যের শেয়ারের ব্যাপারটাও এখানে বলা হয়নি । তাই এখানে যে কিছু ব্যাপক কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে এবং শিক্ষা পদ্ধতি বদলের কথা বলা হয়েছে, এর আর্থিক দায়িত্ব কতটা কেন্দ্রের ও কতটা রাজ্যের তা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না ‌। আমরা আমাদের প্রতিবাদ আগেও জানিয়েছি, আজকেও বৈঠকে বলেছি ।"

ধ্রুপদী ভাষার মধ্যে বাংলা স্থান না পাওয়ার বিরোধিতা প্রথম থেকেই করে আসছে রাজ্য । আজকের বৈঠকেও সেই কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "ক্ল্যাসিকাল ভাষার মধ্যে বাংলা নেই । রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তারাশংকর, বঙ্কিমচন্দ্র, কার নাম বলব? বাংলার যে বিশাল ঐতিহ্যের সাহিত্য ভাণ্ডার বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে, জাতীয় সংগীত করেছেন, সেই রাজ্যের ভাষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে । আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে তালিকায় এনে সংশোধন করার কথা আমরা বলেছি ।"

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার NEP-র মাধ্যমে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ধ্বংস করার চেষ্টার কথা বলেন । পাশাপাশি, বর্তমানে জাতীয় শিক্ষানীতি নয়, COVID-19 নিয়ে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন তিনি । তাঁর বক্তব্য, "যখন COVID-19 চলছে এই পরিস্থিতিতে আগ্রহ এবং জোরের সঙ্গে তাঁরা জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করছেন । অথচ গুরুত্ব দিচ্ছেন না COVID-19-কে কীভাবে রোখা যায়, কীভাবে সকলে মিলে মানুষের জীবন, মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় । এটা আগে আলোচনা করা দরকার । এই সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন COVID-19 নিয়ে আলোচনা করা । রাষ্ট্রপতির সামনে আমরা সেই কথাও বলেছি । কোরোনা যখন চলছে তখন তাড়াহুড়ো না করে কোরোনার বিষয়টাকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা উচিত । এটা আমাদের আবেদন ।"

এখনই রাজ্য যে জাতীয় শিক্ষানীতি লাগু করার বিষয়ে ভাবছে না তাও আজকের বৈঠকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে । চাওয়া হয়েছে সময় । যাতে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করে মতামত জানাতে পারে । এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এই সময়ে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দেওয়া হোক । যাতে আমরা NEP 2020 নিয়ে সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁদের জানাতে পারি । আমরা প্রাথমিকভাবে একটা চিঠি আগেও দিয়েছি, আরেকবার দিচ্ছি । কিন্তু, আমরা সময় চাইছি যে, এর উপর আরও অনেক বেশি আলাপ আলোচনা করা হোক । আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, আমরা লাখ লাখ লোকের সঙ্গে আলোচনা করেছি । আমি তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই যে, আপনি আলোচনা করেছেন ঠিকই, হয়ত সত্যিই। কিন্তু, যুগ্ম তালিকায় থাকায় আলোচনা হয় রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের। রাজ্যের বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া একদিক থেকে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ। যুগ্ম তালিকায় থাকায় ফেডেরাল স্ট্রাকচারকে সম্মান দিতে গেলে আপনাকে অনুরোধ করব রাজ্যগুলির বক্তব্য রাজ্যগুলির মাধ্যমেই আপনাদের কাছে পৌঁছাক এবং কতটুকু গ্রহণ করতে পারবেন সেটাও আমাদের জানান। তার জন্য সময় দরকার। আমরা কোরোনা নিয়ে লড়ব, না এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকব। তাই আমরা বলছি আমাদের সময় দেওয়া হোক। রাষ্ট্রপতিজিকে বলছি, আপনি যেমনভাবে উদ্যোগ নিয়ে সবাইকে ডাকলেন, রাজ্যপালদের ডাকলেন, এই যে আলাপ আলোচনা হল, সেই আলোচনায় আমরা যে অনুরোধ জানালাম, সময় নেওয়ার যে অনুরোধ জানালাম, সেই সময়টুকু আমাদের দেওয়া হোক। আমাদের রিজ়ার্ভেশন, আমাদের আপত্তি, জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে বিভিন্ন বিধিতে আছে, সেই বিধিগুলোর পরিবর্তন না হলে জাতীয় শিক্ষানীতি জাতীয়তা হারাবে। আমরা জাতীয় শিক্ষানীতিতে আমাদের আপত্তির জায়গাগুলোকে নিয়ে আলোচনা না করে তড়িঘড়ি এই কোরোনা আবহে করার পক্ষপাতী নই।"

NEP লাগুতে সময় চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী

1 থেকে 18 অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে। কিন্তু, অক্টোবরে পরীক্ষা নিতে গেলে প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনের। সেই অনুমোদন কি পাওয়া গেছে? আজ সাংবাদিক বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, "আমরা একটা চিঠি পাঠাব। উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেই আমরা দিন ঠিক করেছি। আমরা চিঠি পাঠাব। সুপ্রিম কোর্ট যেটা বলেছে তা মান্যতা দিতে বলব UGC-কে। আমরা আবেদন জানিয়েছি, যেহেতু ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট বলছে সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়, সেই কথা মাথায় রেখে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করব অক্টোবরের প্রথম এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে যাদের যে পরীক্ষা বাকি আছে, সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে বলেছে, তাঁরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে।"

Last Updated : Sep 7, 2020, 10:35 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.