কলকাতা, 5 জানুয়ারি: অজ্ঞান না করেই ব্রেন টিউমারের রোগীর অস্ত্রোপচার করেছিলেন ৷ পূর্ব ভারতে তিনিই প্রথম এভাবে অস্ত্রোপচার করেন 2012 সালে ৷ আর আজ 2024 ৷ সেইদিন থেকে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত রোগীকে সজ্ঞানে অস্ত্রোপচার করার ক্ষেত্রে এই বছর জানুয়ারি মাসে সেঞ্চুরি করলেন নিউরোসার্জেন চিকিৎসক অমিতাভ চন্দ । সেইসব কথাই এবার বই আকারে প্রকাশ করলেন তিনি । শুক্রবার 'নিউরোসার্জেনের ডায়েরী' নামক সেই বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল ৷ উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক তথা চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় এবং অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী । এই বইতে শুধু কেস স্টাডি নয়, রয়েছে ব্রেন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি যাবতীয় তথ্য । এমনকি কোন রোগের জন্য কী করা যেতে পারে, তার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক । অফলাইন ও অনলাইন দু'ভাবেই বইটি পাওয়া যাবে ৷
রোগীর পরিবারের কাছে চিকিৎসক অমিতাভ চন্দ সাক্ষাৎ ভগবান । শুধু কলকাতা তথা ভারতবর্ষ নয়, তাঁর পরিষেবা ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন দেশে । নিউরোসার্জেন হিসাবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন চিকিৎসক অমিতাভ চন্দ । বাংলাদেশেও রোগীকে জাগিয়ে রেখে ব্রেন টিউমার অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি । কিন্তু কেন তাঁর এরূপ ভাবনা ? সেই বিষয়ে চিকিৎসক বলেন, "ব্রেন টিউমারের অস্ত্রোপচার করার সময় অনেক ধরনের জটিলতা থাকে । সারা জীবনের মতো ওই রোগীটি প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার মতো ভয়ও থাকে । ফলে যদি আমি ওই রোগীকে জাগিয়ে রাখি তাহলে আমার অস্ত্রোপচার করার সময় তার অঙ্গভঙ্গি লক্ষ্য করতে পারব । সেইমতো তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে । তাই জন্যই আমি রোগীকে জাগিয়ে অস্ত্রোপচার করা পছন্দ করি ।"
সালটা 2012 ৷ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন কলকাতার এক তরুণী । টিউমারের অবস্থা দেখে পরিবারের লোক রোগীকে রাজ্যের বাইরে নিয়ে যান ৷ কিন্তু একাধিক রাজ্য ঘুরেও মিলছিল না সুরাহা । অস্ত্রোপচারের পর সারাজীবনের মতো প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখিয়েছিলেন ভিন রাজ্যের চিকিৎসকেরা । তবে চেন্নাইতে গিয়ে তিনি খোঁজ পান কলকাতারই এক চিকিৎসকের । কলকাতায় ফিরেই ওই তরুণীর পরিবার যোগাযোগ করেন নিউরোসার্জেন চিকিৎসক অমিতাভ চন্দের সঙ্গে ।
পূর্ব ভারতে প্রথম ওই তরুণীকে অ্যানাস্থেসিয়া না করে সম্পূর্ণ জ্ঞানে রেখেই সফলতম ব্রেন টিউমারের অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক অমিতাভ চন্দ । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম এই ঘটনা । সেই দিন থেকে শুরু করে বর্তমানে 2024 । ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত রোগীকে জাগিয়ে এই বছর জানুয়ারি মাসে সফল অস্ত্রোপচারে সেঞ্চুরি করলেন এই নিউরোসার্জেন ৷
চিকিৎসক নিজের চোখের সামনে দেখেছিলেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট । শিলিগুড়ির বাসিন্দা পুনম গুপ্তাকে কোলে করে ওটি রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি । এক জটিল অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর পরিবারকে আশার আলো দেখান । অস্ত্রোপচারের পর পুনম বলেছিলেন, "চিকিৎসক আমাকে আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন । তবে বাড়ির লোক আসার অপেক্ষা করছিলাম । কিন্তু ডাক্তার দেখানোর ঠিক পরের দিনকেই মাথা এবং ঘাড়ের ব্যথা বেড়ে যায় । আমি হাসপাতালে ভর্তি হই । সেইদিন ডাক্তারবাবু কলকাতায় ছিলেন না । আমি থেকে থেকে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম । রাত দশটার সময় ডাক্তারবাবু এসেছিলেন আমায় দেখতে । তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি । জ্ঞান আসার পর শুনেছিলাম ট্রেচার দেরিতে আশায় ডাক্তারবাবু নিজেই আমায় কোলে করে ওটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন । আমি ভাবতে পারিনি কোনওদিন আমি এভাবে আর চলাফেরা করতে পারব ।"
বাবার অস্ত্রোপচারও অমিতাভ চন্দ নিজেই করেছিলেন । চিকিৎসকের 35 বছরের ডাক্তারি জীবনে আরও অনেক এমন জটিল কেস রয়েছে । যার মধ্যে থেকে বাছাই করে 21টা কেস নিয়ে চিকিৎসক অমিতাভ চন্দ লিখলেন 'নিউরোসার্জেনের ডায়েরী'। এই বইয়ের উপকারিতা নিয়ে প্রবীণ চিকিৎসক তথা অধ্যাপক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের শরীরের সব থেকে রহস্যময় অঙ্গের এর নাম হল ব্রেন বা মস্তিষ্ক । আমরা এই ব্রেন সম্পর্কে যা জানি, তা নিমিত্ত মাত্র । আমরা জানি না আমাদের ব্রেনকে চালনা করে কে ৷ এই বই সব বিষয়গুলি জানতে সাহায্য করবে ভেবে ভালো লাগছে ৷ আমারই এক ছাত্র যার এত নাম এবং তারই হাত দিয়ে তৈরি হয়েছে এমন এক বই ।"
আরও পড়ুন :
1. ব্রেন টিউমার মানেই কিন্তু মৃত্যু নয় ! বার্তা চিকিৎসকের
3. বিরলতম ! গর্ভেই মৃত প্রথম ভ্রূণ, 125 দিন পর দ্বিতীয় শিশুর জন্ম বর্ধমান মেডিক্যালে