কলকাতা, 21 অক্টোবর: ধেয়ে আসছে সিত্রাং (Cyclone Sitrang)। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় । মহা বিপদের আশংকায় প্রমাদ গুনছে রাজ্য প্রশাসন । যদিও হাওয়া অফিস এখনও ঝড়ের বিষয়ে তেমন স্পষ্ট ভাবে কিছু বলতে পারিনি । তবে যশ, ফণি, আমফানের থেকে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগেভাগে প্রস্তুতি নিল নবান্ন (Nabanna Ready for Sitrang)। এই ঝড় মোকাবিলায় সবরকম প্রস্তুতি সেরে রাখল রাজ্য প্রশাসন (Precautions ahead of cyclone Sitrang)।
শুক্রবার নবান্নে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নবান্নে সব দফতরের সচিবদের সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী । এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানত রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলির জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররাও । এই সংকট মোকাবিলায় প্রশাসনের কী করণীয়, তা সেখানে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের তরফ থেকে বাতলে দেওয়া হল ।
উৎসবের মরশুম চলছে রাজ্যে । এই মুহূর্তে যদি বড় দুর্যোগ হিসাবে আছড়ে পড়ে সিত্রাং, তাহলে বহু মানুষ বিপাকে পড়বেন এটা আন্দাজ করেই প্রশাসনের তরফ থেকে এখন থেকে নাগরিকদের সতর্ক করা হচ্ছে । শুধু তাই নয়, এই মহাবিপদ আটকাতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে । বৈঠক শেষে 15টি এনডিআরএফ দল ও 20টি এসডিআরএফ দল প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন ।
রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ থেকেই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে । একইসঙ্গে এখন যাঁরা গভীর সমুদ্রে রয়েছেন তাঁদের আগামিকালের মধ্যেই ফেরত আসার কথা বলা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: দুর্যোগের আশংকা ! দক্ষিণবঙ্গে জারি কৃষি সতর্কতা
মূলত কালীপুজো এবং দীপাবলির মধ্যে এই ঝড় হওয়ার পূর্বাভাস থাকায় আরও উদ্বিগ্ন রাজ্য প্রশাসন । এই সময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বারোয়ারি পুজো মণ্ডপে পুজো হয় ৷ ফলে সেই সময় এই ঝড় বাড়তি সমস্যা তৈরি করতে পারে । কাজেই এই ঝড় মোকাবিলায় আগেভাগেই স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছে রাজ্য । ঝড়ের আগে বিপদ সংকুল এলাকায় থাকা মানুষকে যাতে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেজন্য স্কুল ঘর ও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা জায়গাগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে । ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসকের শুকনো খাবার, ত্রিপল মজুত রাখার কথা বলা হয়েছে ।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে আগামী 24 ও 25 অক্টোবর উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর । আর এই বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি রুখতে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে কন্ট্রোলরুম চালু করতে হবে বলে জানিয়েছে নবান্ন । একইসঙ্গে অমাবস্যার কারণে ঘাটগুলিতে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । কালী পুজোর বিসর্জনের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নবান্নের ।
এখনও পর্যন্ত হাওয়া অফিস যা বলছে, তাতে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে । 80 থেকে 90 কিলোমিটার বেগে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস । আর আমাদের রাজ্যে ধাক্কা মারলেও তা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গা ছুঁয়ে বাংলাদেশের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা । তাই ঝড়ের পূর্বাভাসের কারণে সরকারি কর্মীদের কালীপুজো ও দীপাবলির ছুটিও বাতিল করা হয়েছে ।এ দিনের বৈঠক থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোলরুম চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি নবান্নে চালু হবে একটি কন্ট্রোলরুম । আরও জানানো হয়, নদী বাঁধ এলাকায় মাইকিং করতে হবে ।