কলকাতা, 29 মে: মঙ্গলবার 9 বছর পূর্ণ হতে চলেছে মোদি সরকারের ৷ আর সেই ন'বছরের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরতেব এবার বিশেষ কমিটি গঠন করল রাজ্য বিজেপি ৷ দেশ জুড়ে একাধিক কর্মসূচিও নিয়েছে বিজেপি ৷ আগামিকাল কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ৷ অন্যদিকে, রাজ্যে সরকারে থেকে দীর্ঘ 12 বছর তৃণমূল কংগ্রেস কী কী কাজ করেছে তা নিয়ে যখন রাজ্যের সব জেলায় তৃণমূলের নবজোয়ার বা গ্রাম জনসংযোগ যাত্রায় বেরিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তারই পালটা কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরে টক্করে নামছে বিজেপি ৷
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বারবার মুখর হচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র কীভাবে রাজ্যকে বঞ্চনা করছে এবং রাজ্য সরকার প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও কীভাবে রেজ্য়ের মানুষের পাশে দাঁড়েচ্ছে, সেই বিষয় নিয়েই সরব হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ ঠিক একইভাবে এবার মোদি সরকারের 9 বছরের পারফরমেন্সের খতিয়ান দলের কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামিকাল দেশজুড়ে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট, আর তারপরই বছর ঘুরলে লোকসভা নির্বাচন। তাই দুই ফুল শিবির এখন নিজেদের রিপোর্ট মানুষের সামনে তুলে ধরতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এবার মোদি সরকারের ঢাক পেটাতে দস্তুর মতো রাজ্যস্তরে রীতিমতো কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: টুইটে মোদি'কে বিঁধলেন মমতা, পালটা মাঠে নামল বিজেপি নেতারাও
বিজেপি সূত্রে খবর, এই কমিটিতে মোট সাতজন রয়েছেন। এই কর্মসূচি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরো রাজ্যকে সাংগঠনিক ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি জোন হিসাবেও ভাগ করা হয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে শুধু বঙ্গেই নয় দেশজুড়ে চলবে এই কর্মসূচি এবং প্রচার। মূলত তৃণমূল স্তরের কার্যকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ন'বছরের জয়গাথা। 2015 থেকে এখনও পর্যন্ত পদ্মশিবিরের সাফল্যের কথা প্রচার করা হবে দেশের সব রাজ্যে। এই বাংলায় শুধু নয়, প্রতিটি রাজ্যেই এই ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া সাত থেকে আটটি ক্লাস্টারও করা হয়েছে। এই ক্লাস্টারে বঙ্গ বিজেপির নেতা এবং কেন্দ্রীয় নেতারাও থাকবেন। বঙ্গে এই কমিটির আহ্বায়কের দ্বায়িত্বে রয়েছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। এবং তাঁকে মূলত রাঢ়বঙ্গের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আসানসোলের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল কলকাতা সাংগঠনিক জোনের দ্বায়িত্বে রয়েছেন। বিজেপি নেতা সঞ্জয় সিংকে উত্তর বঙ্গের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তুষার কান্তি ঘোষ হাওড়া, হুগলি এবং মেদিনীপুর জোনের দ্বায়িত্বে রয়েছেন।
অন্যদিকে, নবদ্বীপ জোনের দ্বায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য মহিলা মোর্চার সভাপতি ফাল্গুনী পাত্র, মহাদেব সরকার এবং আইনজীবী এবং বিধায়ক অম্বিকা রায়। শুধু যে রাজ্যের বিজেপি নেতারা এই কর্মসূচি নিচুতলার কার্যকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেবেন তাই নয়, দলীয় সূত্রে খবর এই কর্মসূচিতে থাকবেন দু'জন কেন্দ্রীয় নেতাও। এই বিষয়ে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে কারা কারা থাকছেন কিংবা তাঁরা কবে রাজ্যে আসছেন সেই বিষয়গুলি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আগামী মাসে রাজ্য সফরে আসতে পারেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। এই রাজ্যে তাঁর দুটি জনসভা করারও কথা রয়েছে। তবে কেন্দ্রের 9 বছরের এই কর্মসূচিতে জেপি নাড্ডা কোনও সভায় উপস্থিত থাকবেন কি না, সেই বিষয়টিও দলের পক্ষ থেকে এখনও স্থির করা হয়নি বলেই খবর।
কোথায় কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে, কোথায় কোন সভা হবে, কারা কারা থাকবেন সভায় এই সব খুঁটিনাটি পরিকল্পনার দায়িত্বে রয়েছে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতারা। জেলাগুলিতে মণ্ডল স্তরে ছোট ছোট দল গঠন করা হয়েছে ৷ যেগুলিকে 'টোলি' বলা হচ্ছে। জেলায় যখন সেমিনার বা সভা হবে তার সম্পূর্ন দ্বায়িত্বে থাকবে জেলা এবং মণ্ডলের এই টোলিগুলি। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত জনসংযোগ করা হবে। একাধিক সভাও হবে রাজ্য জুড়ে। যেখানে রাজ্যের বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা এবং কার্যকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আরও পড়ুন: বোতাম টিপলেই তৃণমূলে আসবেন চার কংগ্রেস সাংসদ, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অভিষেক
অগ্নীমিত্রা পাল জানান, 20 জুন থেকে 30 জুন এই দশদিন সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে কার্যকর্তারা। সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শোনা হবে। তিনি দাবি করেছেন, এমন বহু জায়গা রয়েছে যেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বা সুবিধা পৌঁছতে অক্ষম হয়েছে তৃণমূল সরকার। সেই সব প্রতিটি বুথে যাবে বিজেপি। কেন্দ্র সরকার এই সময়ে যা যা কাজ করেছে যে প্রকল্পগুলোতে অর্থ বরাদ্দ করেছে এবং কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, সেই সব তথ্য দেখিয়ে একটি চিঠিও তৈরি করা হচ্ছে। চিঠি একই লিফলেটের আকারে তৈরি করা হবে এবং সেগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। যার ফলে তাঁরা আসল চিত্রটা বুঝতে পারবেন।