মালদা, 14 এপ্রিল : পুলিশের মদতে চলছে মাটি পাচার ৷ রতুয়ার 1 নং ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের নাককাট্টি ব্রিজের কাছে ফুলহর সংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি তুলে ফেলা হচ্ছে । এই অবৈধ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে রতুয়া থানার আইসি-এসআইয়ের । এই অভিযোগ তুলেছেন খোদ তৃণমূল বিধায়ক (Minister and MLA alleges against Ratua IC of soil smuggling in Malda) । পুলিশ সুপারের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চলেছেন রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় । নিজের দলের লোকের বিরুদ্ধে মাটি পাচারের অভিযোগ করেছেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও । তিনি বলেন, "তাঁর দাবি, কেউ প্রধানের ভাই, কেউ সভাপতির মামা, কেউ সভাধিপতির ভাইপো বলে যা ইচ্ছে তা করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না । টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় ৷"
দীর্ঘদিন ধরে রতুয়ার ফুলহর সংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি চুরির অভিযোগ উঠছিল । পুলিশের একাংশের মদতে এই কাজ চলছে বলে দাবি করেছিল স্থানীয়দের একাংশ । বুধবার রতুয়ায় সেচ দফতরের বাঁধ সংস্কারের কাজের শিলান্যাস করতে যান মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, স্থানীয় বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় । সেখানে তিনি অভিযোগ তোলেন, মাটি মাফিয়ার সঙ্গে রতুয়া থানার আইসি, এসআই জড়িত রয়েছেন ।
আরও পড়ুন : Alipurduar Sand Smuggle : বালি মাফিয়া-তৃণমূল জেলা সভাপতির আঁতাতের অভিযোগ, হইচই আলিপুরদুয়ারে
সমরবাবু বলেন, "জেসিবি দিয়ে ফুলহর নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে । হাজার হাজার ট্রাক মাটি পাচার হচ্ছে । রতুয়া থানার পুলিশ মাটি মাফিয়াদের মদত করছে । এভাবে মাটি কাটা হলে ব্রিজ, মহানন্দা বাঁধ কিছুই থাকবে না । এই থানার অবিলম্বে অপসারণ চাইছি । আইসির বিরুদ্ধে এসপি, ডিআইজি মালদা রেঞ্জ, এডিজি ল' অ্যান্ড অর্ডার, জেলাশাসক সকলকে অভিযোগ জানিয়েছি । যদি কোনও পদক্ষেপ না করা হয়, তবে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব ।" তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন মাফিয়াদের শায়েস্তা করতে রাজনৈতিক রং না দেখতে ৷ যে দলেরই লোক হোক, তাদের শায়েস্তা করতে হবে । তাঁর অভিযোগ, রতুয়া থানার আইসি এবং একটা অংশ টাকার বিনিময়ে মাফিয়াদের মদত করছে ।
এদিকে, অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও। তিনি বলেন, "নদীর পাড় থেকে ইটভাটার জন্য মাটি তোলা হচ্ছে । এটা বড় সমস্যা । কেউ প্রধানের ভাই, কেউ সভাপতির মামা, কেউ সভাধিপতির ভাইপো, তা বলে মাটি তুলে ইটভাটা করবে, এটা কিন্তু আমরা আর বরদাস্ত করব না। ইরিগেশন দফতরের বাঁধের মাটিতে কেউ হাত দিলে, আমরা প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ করব ।"
ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা বিজেপির জেলা নেতা অম্লান ভাদুড়ি জেলাজুড়ে সব নদীর বালি-মাটি কেটে বিক্রি করা প্রসঙ্গে তৃণমূলের দুষ্কৃতী ও প্রশাসনের একাংশকে দায়ী করেছেন । তিনি বলেন, "আমরা অনেকদিন ধরে এই অভিযোগ করছি । আজ তৃণমূলের বিধায়কও এই অভিযোগ করেছেন ।"
আরও পড়ুন : Durgapur Sand Mafia : বালি মাফিয়া পারভেজ সিদ্দিকিকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আবেদন ফরিদপুর থানার
তবে তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের এই অভিযোগের পিছনে দুটো কারণ হতে পারে, জানান বিজেপি নেতা । প্রথমত, সত্যি তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলতে চাইছেন । নয়তো তিনি টাকার ভাগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন । তাই অম্লান ভাদুড়ির কথায়, "তিনি যদি এই লড়াই চালিয়ে যান, তবে তাঁকে আমরা কুর্নিশ জানাব । আর যদি তিনি চুপ করে যান, তবে বোঝা যাবে তিনি টাকার ভাগ পাননি । আবার টাকার ভাগ পেয়ে তিনি চুপ করে গিয়েছেন ।"
পদ্ম নেতার মতে, এই মাটি মাফিয়ার কারবার একশো-দুশো কোটি টাকারও বেশি । এই চক্র থামাতে একজন আইসিকে সরিয়ে কিছু হবে না । প্রশানের একটা বড় অংশ জড়িয়ে রয়েছে এর মধ্যে । এই চক্র থামাতে প্রশাসনিক স্তরে ভাল করে নজরদারি চালাতে হবে ।