কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর: সাইবার প্রতরণায় এবার নয়া কৌশল । ভিন রাজ্য থেকে আসা এবং ভিন রাজ্যে কাজের জন্য যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের তাদের অজান্তেই মোটা টাকার বিনিময়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সাইবার প্রতরণার । এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷ লালবাজার এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে খবর, প্রায় প্রতিমাসেই বাংলা থেকে শয়ে শয়ে পরিযায়ী শ্রমিক কাজের জন্য বাইরের রাজ্যে পা রাখেন । সূত্রের খবর, এই শ্রমিকদের মধ্যে মোটামুটি পড়াশোনা জানা শ্রমিকদের মোটা টাকা দিয়ে এসি ঘরে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে সাইবার দস্যুদের একাংশ । কিন্তু এই পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেরাই জানেন না যে তাঁরা অজান্তেই কোনও প্রতরণার কাজে যুক্ত হয়ে সাইবার অপরাধীদের মদত করছেন ।
জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকরা সাধারণত একদিন কাজ করে যত টাকা পান, তার থেকে প্রায় চার-পাঁচ গুন বেশি টাকায় তাঁদের ঠান্ডা ঘরে কাজের সুযোগ করে দিয়ে প্রতরণার কাজে লাগানো হচ্ছে । ফলে তারাও অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের আশায় এই কাজে সামিল হচ্ছেন । লালবাজার সূত্রের খবর, বিশেষ করে মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা এবং বিহারে চলছে এই প্রশিক্ষণ শিবির ।
কীভাবে দেওয়া হচ্ছে এই প্রশিক্ষণ ?
ভাবলে প্রায় চোখ কপালে ওঠার জোগার হবে । অভিযোগ পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যাঁরা খানিকটা পড়াশোনা জানেন, তাঁদের আরও বাড়তি সুবিধা দিয়ে প্রথমদিকে শেখানো হচ্ছে কম্পিউটার । এরপরেই তারা শিখছে কাজ । দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ও প্রবাসে থাকা ভারতীয়দের ফোন নম্বর জোগাড় করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফোন করে তাঁদের থেকে আধার নম্বর এবং ব্যাংক ব্রাঞ্চের নাম ও ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর জোগাড়ের চেষ্টা হচ্ছে ৷
জানা গিয়েছে, মূলত কম্পিউটারে বসে বা খাতায় কলমে ভারতীয় এবং বিদেশে থাকা ভারতীয়দের ডেটা সংগ্রহ করে সেই তথ্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে সাইবার দস্যুদের হাতে । এই বিষয়ে অবশ্য নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আধিকারিক বলেন,"আমরা আগে থেকেই গোপন সূত্রের খবর পেয়েছিলাম । মূলত তদন্তে নেমে প্রথমে বিহার থেকে একজনকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় । পরে তাকে কলকাতায় এনে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আমরা জানতে পারি ওই ব্যক্তি একসময় পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য ভিন রাজ্যে গিয়েছিল । এরপরেই তদন্ত নেমে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, মূলত আরব থেকে পরিচালিত হচ্ছে এই চক্রের ব্লু-প্রিন্ট ।"
আরও পড়ুন: কল সেন্টার খুলে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা, চক্রের পাণ্ডা সহ গ্রেফতার 10
তদন্তে উঠে আসা তথ্য
সম্প্রতি এই ঘটনার তদন্তে নেমে কলকাতায় শেক্সপিয়ার সরণি থানায় দায়ের হওয়া একটি ব্যাংক প্রতরণার মামলায় তদন্তে নেমে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে মোক্তার আলম এবং রওশন আলি নামে দু'জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । সূত্রের খবর, এই মোক্তার আলেম এবং রওশন আলি মূলত পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে বিভিন্ন সময়ে ভিনরাজ্যে গিয়েছিল। তারা একসময় বিহারেও যায় বলে অভিযোগ। পরে সেখানেই তাদের ঠান্ডা ঘরে বসিয়ে ডেটা অপারেটিংয়ের কাজে শামিল করেছিল সাইবার দস্যুরা ।
এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি সাইবার অতুল ভি বলেন, "ধৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা বাকি রয়েছে । তাদের জেরা করে আরও বিপুল পরিমাণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেতে পারি । বর্তমানে মুক্তার আলম এবং রওশন আলি দু'জনেই কলকাতা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে । তাদের জেরা করে এই ঘটনায় আর কারা কারা যুক্ত রয়েছে এবং তাদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এইসব বিষয় জানার চেষ্টা হচ্ছে ৷" এছাড়া আর কোন কোন জেলা থেকে কোন কোন পরিচয়ে শ্রমিকরা এই সাইবার দস্যুদের কবলে পড়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়েছেন, তাও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা ।