কলকাতা, 20 এপ্রিল: পরীক্ষামূলক দৌড় শুরু করল মেট্রো রেল ৷ 12 এপ্রিল গঙ্গার নীচ দিয়ে প্রথম এই মেট্রোর রান হয়েছিল ৷ যা ছিল দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ৷ 20 এপ্রিল বৃহস্পতিবার সাংবাদিক-সহ কেএমআরসিএলের একাধিক আধিকারিক এবং কর্মীদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চলল এই মেট্রো ৷ স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম এই রানের জন্য সকলের মধ্যেই উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে ।
হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় 15 থেকে 20 কিলোমিটার বেগে চালানো হয় ট্রেন । কলকাতা মেট্রোর পক্ষ থেকে আপাতত মোটর ম্যানের অভাব থাকায় বিইএমএলের থেকে টেস্ট রান পর্বের জন্য বেঙ্গালুরু থেকে এসেছেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দু'জন মোটরম্যান । তাঁরা হলেন সিন্ধু এবং সিনি । আপাতত দুটি রেক ব্যবহার করে অস্থায়ীভাবে এই টেস্ট রান চালানো হবে । তবে বাকি রয়েছে এখনও অনেক কাজ ।
কেএমআরসিএলের জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী বলেন, "চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে । আর একবার এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা শুরু হয়ে গেলে মেট্রো রেল পথে জুড়ে যাবে দুই পড়শি শহর কলকাতা ও হাওড়া ।" জলের উপর দিয়ে সেতুবন্ধন আগেই হয়েছিল ৷ ইস্ট এবং ওয়েস্ট বাউন্ড দুটি টানেল । এক একটি 520 মিটার লম্বা । ঠিক হাওড়া ব্রিজের পাশ দিয়ে পাশাপাশি ছুটে গিয়েছে এই দুটি টানেল । যুক্ত করেছে হাওড়া এবং কলকাতাকে ।
2008 সালে প্রথম এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল । এরপর দীর্ঘ সময় ধরে চলে ডিজাইনিংয়ের কাজ । তারপরে শুরু হয় নির্মাণ কাজ । 15টা বছর মাঝে পেরিয়েছে । কাজ এগিয়েছে আবার বউবাজার অংশে বিপর্যয়ের জন্য থমকেও গিয়েছিল । তখন এই টানেল ইস্ট ওয়েস্ট হয়ে উঠতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল । তবে স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্যের ফলে সেই সমস্যা অতিক্রম করে এগিয়েছে কাজ । এবার মোটামুটি প্রস্তুত হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত । 7 মাস বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে । সিগন্যালিংয়ের কাজ চলবে ।
তারপরেই এসপ্ল্যানেড, মহাকরণ, হাওড়া এবং হাওড়া ময়দান খুলে যাবে সাধারণ মানুষের কাছে । হাওড়া মেট্রো স্টেশনটি হল দেশের গভীরতম স্টেশন। কারণ হাওড়া স্টেশনেরও 33 মিটার নীচ দিয়ে গিয়েছে এই স্টেশন । কেএমআরসিএলের এক আধিকারিক সুপর্ণা ঘোষ বলেন, "প্রথম থেকেই আমরা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম । তাই কীভাবে কতটা কাজ এগোচ্ছে সবটাই আমাদের জানা । এতগুলো বছর পার করে অবশেষে ট্রেনে সফর করছি । এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না ।"
দুই কর্মচারী কার্তিক মণ্ডল ও সুজয় মাঝি অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে জানান যে, এই সুড়ঙ্গ পথ তৈরি হওয়ার সময় তাঁরা উপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গিয়েছেন । প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী রয়েছেন । তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা আনন্দিত এই ভেবে যে, এই পথ দিয়ে একদিন তাঁরা হেঁটে গিয়েছেন সেখানে ট্র্যাক পাতা হল এবং এখন তার উপর দিয়ে মেট্রো যাচ্ছে ৷ সেই মেট্রোয় সওয়ারি তাঁরা ৷
আরও পড়ুন : ইতিহাস গড়ে গঙ্গার নীচ দিয়ে ছুটল রেক, মেট্রো রেলপথে জুড়ে গেল এপার-ওপার