কলকাতা, 16 মার্চ : বুধ সন্ধ্যায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্যরা আলোচনায় বসছেন । বৈঠকের বিষয় কী রয়েছে তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার । তবে সদস্য সমর্থকদের মনে ক্লাবের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে যে দোলাচল রয়েছে তা বুঝতে পারছেন । তাই বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে চুড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি আলোচনার তালিকায় না থাকলেও যদি কোনও সদস্য বিনিয়োগ উত্থাপন করে তাহলে কথা বলতে রাজি । বিনিয়োগ সংস্থার দাবি ক্লাবের তরফে চুক্তিতে চুড়ান্ত স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেই । এককথায় ক্লাব কর্তারা এই বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না ।
কিন্তু লাল হলুদ সচিব বলছেন তাঁরা তাঁদের পাঠানো শেষ চিঠিতে ক্লাবের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন । তারপর বিনিয়োগ সংস্থার তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি । অর্থাৎ একটা অচলাবস্থা চলছে বা তথ্যের ফাঁক থাকছে তা বোঝাই যাচ্ছে । ক্লাবের তরফে সদ্য শেষ হওয়া আইএসএলে পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে কি না এই প্রশ্নে কল্যাণ মজুমদার বলেছেন,"আমি তো সেই লোকগুলোকে দেখতে চাই । যারা আইএসএল না খেললে সব শেষ হয়ে যাবে বলে চিৎকার করেছিল।" অভিযোগ,ক্ষোভ মতান্তর রয়েছে বুঝতে পারছেন ইস্টবেঙ্গল সচিব। তাই হয়তো এই ইস্যুতে কিছুটা স্বপ্রনোদিত হয়ে বিষয়টি নিয়ে একটা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
"কাল মিটিংয়ে যাই। গিয়ে অবস্থা দেখে কিছু একটা করতে হবে," বলছিলেন বর্ষীয়ান সচিব । চলতি মাসের 31তারিখের মধ্যে চুক্তিতে চুড়ান্ত সই না হলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারে বলা যায় । কারণ ইতিমধ্যে গত মরশুমের ফুটবলারদের বকেয়া মেটানো নিয়ে ইতিমধ্যে ফিফার চিঠি চলে এসেছে । ট্রান্সফার ব্যানের খাড়া ঝুলছে । বিনিয়োগ কর্তারা অবস্থা সামাল দেওয়ার ব্যাপারে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন বা ঘুটি সাজাচ্ছেন । কিন্তু চুক্তি চূড়ান্ত না হলে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ঠিক করতে পারছেন না।
"চুক্তিতে যার স্বাক্ষর করার অধিকার ক্লাবের সেই ব্যক্তিটি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী । কিন্তু ক্লাবের একজন বিশেষ কর্তা অনঢ় । এতদিন বলা হচ্ছিল একাধিক স্পনসর বিনিয়োগকারী সঙ্গে রয়েছে । এখন শুনলাম বলছেন,রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়ে শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবকে বাঁচাক । হাস্যকর । মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সব জেনে বুঝে মউ স্বাক্ষর করার পরে এখন নানান ফ্যাকরা তোলা আদতে ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ৷",বলছিলেন বিনিয়োগ সংস্থার কর্তাটি ।
ইতিমধ্যে পঞ্চাশ কোটি টাকা আইএসএল খেলতে গিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে । ফুটবলারদের সঙ্গে 31মার্চ অবধি চুক্তি রয়েছে । তারপরে ব্রাইট এনোবাখারে,স্টেইনম্যান, মাগোমারা ফ্রি হয়ে যাবেন । তাই চুক্তি স্বাক্ষর বিলম্বিত হলে পরবর্তী মরসুমের দল গঠন ফের বিরাটভাবে ধাক্কা খাবে । কোচ রবি ফাওলারের সঙ্গে দুবছরের চুক্তি । শেষ পর্যন্ত যদি জটিলতা না কাটে তাহলে তাঁকে পুরো অর্থ দিয়ে ছাড়তে হবে । চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে উপায় রয়েছে তাতে ক্লাবের চাপ বেশি । কারণ ক্লাব যদি বেরিয়ে যায় তাহলে বিনিয়োগ সংস্থার ব্যয় করা অর্থ মিটিয়ে বেরোতে হবে । আবার বর্তমান বিনিয়োগ সংস্থা যদি বেরোতে চায় তাহলে তাদের অন্য একটি সংস্থা খুজে নিয়ে এসে বা তাঁদের হাতে শেয়ার দিয়ে বেরোতে হবে । তা করতে ব্যর্থ হলে ক্লাবকে শেয়ার ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে ।সেক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির দায় বিনিয়োগ সংস্থাকে নিতে হবে ।
আরও পড়ুন : সারদা মামলায় ইস্টবেঙ্গল কর্তাকে নোটিস ইডির
বিনিয়োগ সংস্থার কর্নধার হরিমোহন বাঙ্গুর এবং তার পুত্র প্রশান্ত বাঙ্গুর চলতি মাসের শেষে হোলির সময় দেশে আসছেন । সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের সভাপতি ডাক্তার প্রণব দাশগুপ্তের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা । হয়তো সেই বৈঠকে ক্লাবের অবস্থান কোন পথে এগোবে তার রূপরেখা বুধবার ঠিক হবে । "চুক্তি সময় মতো হয়ে যাবে,"আশ্বস্ত করছেন লাল হলুদের একজন কর্তা । তাই বলা যায় বাকযুদ্ধ, অনঢ় অবস্থানে ক্ষতি ক্লাবের । যা হয়তো দুপক্ষই বুঝতে পারছে ।