কলকাতা, 11 মে: নবান্ন সভাঘরে উৎকর্ষ বাংলা রিভিউ মিটিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও 15 দিনের নার্স এবং ডাক্তারির ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবকে অবৈজ্ঞানিক বলার পাশাপাশি তীব্র বিরোধিতা করল মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার। রাজ্যের বামফ্রন্ট আমল ও কংগ্রেস আমালের উদাহরণ টেনে প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবিতে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 15 দিনের নার্সিং কোর্স ও ডাক্তারিতে ডিপ্লোমা কোর্সের প্রস্তাবনার প্রতিবাদে মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক ডাঃ বিপ্লব চন্দ্র বলেন, "আবারও 15 দিনের নার্স এবং ডাক্তারির ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার প্রস্তাব দেন। এবং সেই সমস্ত ডিপ্লোমাধারী ডাক্তারদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজে লাগানোর কথা বলেন। এই বিষয়কে আমরা চূড়ান্ত বিরোধিতা করছি। অনেক বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনার পর এবং ভোর কমিটির রেকমেন্ডেশনে ভারতবর্ষে একজন এমবিবিএস ডাক্তার হতে নূন্যতম সময় ধার্য হয়েছে সাড়ে পাঁচ বছর এবং তা ডাক্তারির মতো গুরুত্বপূর্ণ কোর্স সম্পন্ন করতে অত্যন্ত জরুরি।"
তিনি আরও বলেন, "এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী অবিবেচকের মত অবৈজ্ঞানিকভাবে যে ডিপ্লোমা ডাক্তারের প্রস্তাব দিলেন তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গ্রামীণ মানুষদের স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত করার নামান্তর। এর পাশাপাশি 15 দিনের নার্সিং প্রবর্তন করার ভ্রান্ত নীতিকেও আমরা বিরোধিতা করছি।" মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির কোষাধ্যক্ষ ডাঃ নীলরতন নাইয়া জানিয়েছেন, "কেন্দ্রের বিজেপি সরকার প্রবর্তিত স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিষয়ক সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরিবর্তে বিএসসি নার্সদের দিয়ে কমিউনিটি হেলথ অফিসার পোস্টে নিয়োগ করে ডাক্তারের দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে গ্রামীণ মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার তা সম্পূর্ণরূপে বলবৎ করেছে। এই বিষয়টিও বিরোধিতা করেছি।"
আরও পড়ুন: ডিগ্রি কোর্সের বদলে চিকিৎসকদের জন্য তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর
মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের অভিযোগ, অতীতেও 'বারে ফুটেড ডক্টর' নামে আশির দশকে সিপিএম সরকার, 2008-2009 সালে কেন্দ্রে কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকার ও রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার নানান নামে নানান অছিলায় ডাক্তারিতে সাড়ে তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু ডাক্তারি ছাত্র, ডাক্তার সমাজ-সহ আপামর জনগণের আন্দোলনের চাপে সেই সমস্ত অবৈজ্ঞানিক বিল বাতিল করতে বাধ্য হয়। তাদের দাবি, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে ডাক্তারিতে প্রায় 4 হাজার আসন আছে। ডাক্তারি পাশ করার পরেও জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হতে পারছেন না। সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত ডাক্তারের থেকে আবেদনকারী ডাক্তারের সংখ্যা বেশি ছিল। ফলে এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তাররা যে গ্রামে যেতে চান না বা সরকারি চাকরিতে যেতে চান না এই সরকারি প্রচার অত্যন্ত মিথ্যা। আসলে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সরকারি পরিকাঠামোর অভাব এবং লোকবল নিয়োগ না-করার অভিসন্ধিই প্রতিভাত হয়।